সুহৃদ সুপান্থ
বন্য হাতির আক্রমনে কাপ্তাই হয়ে রাঙামাটি বেড়াতে আসার পথে বৃহস্পতিবার অভিষেক পাল নামের এক শিক্ষার্থীর করুন মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান হাতি চলাচলের কারণে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠা রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়ক ব্যবহারে নতুন নির্দেশনা জারি করেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা ছাড়া অন্য সময় এই পথ পরিহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে নির্দেশনায়। অর্থাৎ বিকাল পাঁচটার পর থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত পথটি পরিহার করতে হবে। একই সাথে হাতির চলাচলের করিডোরে বিঘ্ন সৃষ্টি না করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে এবং করিডোরে ব্যবহার করা ক্রসিং বা করিডোর রোডসাইন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে ইউএনও বেগম মুনতাসির জাহান জানিয়েছেন-
‘কাপ্তাই ইউনিয়নে ৫ দিনের ব্যবধানেই বন্যহাতির আক্রমণে ২জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।এই এলাকার সর্বসাধারণের জন্য এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেওয়া হলো। বিশেষ করে সকাল ৯ টার আগে এবং বিকাল ৫ টার পরে কাপ্তাই – রাঙ্গামাটি নতুন রাস্তায় চলাচল না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।পর্যটকদের অতি উৎসাহিত হয়ে হাতি চলাচলের করিডোরে বিঘ্নসৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। উক্ত ক্রসিং বা করিডোরগুলোতে রোডসাইন দেওয়া আছে। মহান সৃষ্টিকর্তা সকলকে হেফাজত করুন।’
প্রসঙ্গত,রাঙামাটি শহরের আসামবস্তি থেকে শুরু হয়ে ১৮ কিলোমিটার মুগ্ধকর ও নয়নাভিরাম সড়কটি কাপ্তাই এর নেভিক্যাম্পে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। এই সড়কের একাধিক স্থানে প্রায়ই সড়কের উপর নেমে আসে হাতির পাল। এখানে বেশ কিছু অনাকাংখিত মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আহত কিংবা দূর্ঘটনা কবলিতও হয়েছেন অনেকে।
এনিয়ে এলাকাবাসি ও স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় ‘হাতি-মানুষ’ মুখোমুখি হওয়া এড়াতে করণীয় জানতে সহযোগিতা চাইলেও বন বিভাগের পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে এই সড়কে অন্তত ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে হাতির আক্রমনে। কিন্তু প্রায়শই এই সড়কে চলাচল করা পর্যটকদের এলিফেন্ট ক্রসিং সাইন অমান্য করে ফটোশ্যুট করতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে কাপ্তাই-আসামবস্তি সড়কের কামিলাছড়ি এলাকায় অভিষেক পাল (২১) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু হয়। নিহত অভিষেক ঢাকার তেজগাঁও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাবা সুধাংশু বিকাশ পাল চট্টগ্রামের একটা পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ হলেও তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ফেনীর মাস্টার পাড়ায় বসবাস করেন।
অভিষেকের বন্ধু সাদমান সোবহান উদয় জানিয়েছিলেন, তারা ছয় বন্ধু বৃহস্পতিবার সকালে কাপ্তাই প্রশান্তি পার্ক থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে সকাল ৯টার দিকে তারা দুইটি হাতির মুখোমুখি হয়। এ সময় অভিষেক বনের দিকে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। একটা হাতি পেছন পেছন গিয়ে তাকে পিষ্ট করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
কাপ্তাই স্বাস্থ্য বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওমর ফারুক রনি জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।