‘সেদিন নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার স্বজনদের আহাজারি আর উত্তাল পার্বত্য পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্য তৎকালীন সরকারের ৪ জন প্রভাবশালী মন্ত্রী লংগদু সফর করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রী তোফায়েল আহম্মদ, পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এবং শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। তাঁরা লংগদু গিয়ে মানুষের বুক ফাটা কান্না আর আহাজারী দেখে হত্যকারীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সন্তাদের লেখা-পড়ার দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতিও তারা দিয়েছিলন। তারা লংগদু থেকে ফিরে আসার পর তৎকালীন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সুলতান মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ৩১ অক্টোবর’৯৬ ইং বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। তবে ১ নভেম্বর ১৯৯৬ দৈনিক জনকণ্ঠের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, উক্ত প্রতিবেদনে শান্তিবাহিনীকেই পাকুয়াখালী ট্রাজেডির জন্য দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার দুই দশক পরেও শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কোন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি।’ বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা আহ্বায়ক বেগম নুরজাহান।
লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালীতে নিরীহ এবং নিরস্ত্র ৩৫ জন বাঙ্গালী কাঠুরিয়া হত্যার বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পূর্নবাসন করার দাবীতে শুক্রবার রাঙামাটি শহরে এক শোকসভার আয়োজন করে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ। সেখানেই প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
বনরূপায় কাঠ ব্যবসায়ি সমিতি মিলনায়তনে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার আহ্বায়ক মোঃ জাহাঙ্গির আলমের সভাপত্বিতে ও জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো: হাবিবুর রহমারে সঞ্চালনায় শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
শোক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার আহ্বায়ক বেগম নূর জাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি সরকারী কলেজ শাখার সি: সহসভাপতি মো: হাসান তারেক, বক্তব্য রাখেন জেলা শাখার সদস্য সচিব ফয়েজ আহম্মেদ মোরশেদ, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো: মামুন, কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল মান্নান।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালে শান্তিবাহিনী সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে অস্ত্র জমা দিলেও তারা তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে বিশ্বাস করা যায় না, কেননা পাহাড়ে অস্ত্রবাজী এবং চাঁদাবাজি রয়ে গেছে আগের মতোই। পাহাড়ে সংগঠিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখে বোঝা যায় ধীরে ধীরে তারা অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়ে আরো শক্তিশালী হচ্ছে।
শোকসভা শেষে মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ মানববন্ধন করতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
সভা থেকে পাকুয়াখালীতে নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার হত্যাকারীদের যথাযথ বিচার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিয় সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত সকল হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার, পাকুয়াখালীতে নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাযথ পুনর্বাসনসহ সাতদফা দাবি নামা উত্থাপন করা হয়।
Previous Articleরোহিঙ্গা তথ্য জানানোর আহ্বান জেলা প্রশাসকের
Next Article বিদায় নিলেন এএসপি শহীদুল্লাহ
1 Comment
হবে কবে????????