
জিয়াউল জিয়া
কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের জন্য ২ কোটি টাকা ব্যয়ে হারভেস্টার মেশিন কেনা হলেও জনবল সংকটের অজুহাতে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে পড়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার বিড়ম্বনায় মাছ আহরণ ও নৌ চলাচল ব্যাহতসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিলেও অব্যবহৃত থাকায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে হারভেস্টার মেশিনটি। ২০১২ সালে কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে হারভেস্টার মেশিন ক্রয় করলেও ৯ বছরেও মেশিন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। রাঙামাটির বিশিষ্টজনরা হারভেস্টার মেশিনটি ব্যবহারের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদকে কচুরিপানামুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছেন।
জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষায় কাপ্তাই হ্রদে দেখা দেয় কচুরিপানার বিড়ম্বনা। চারটি উপজেলার ৩ লাখ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র নৌ-পথ। হ্রদের চারদিকে কচুরিপানা ছড়িয়ে পড়ায় স্বাভাবিক নৌ-চলাচলে দেখা দেয় বিপত্তি। ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো কচুরিপানার জপ ডিঙিয়ে চলাচল করতে পারে না। পাশাপাশি অন্যান্য নৌযান গুলোও কচুরিপানায় আটকা পড়ে সময় নষ্ট হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
সম্প্রতি সময়ে কাপ্তাই হ্রদের সুবলং চ্যানেলের কাইন্দারমুখ এলাকায় প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে জমে থাকা কচুরিপানার কারণে বিপাকে পড়তে হয় হ্রদে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে। এ নৌরুটে চলাচল করা সাধারণ মানুষ, জেল ও মাছ ব্যবসায়ীরা পড়েছে চরম বিপাকে। উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানায় প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এ চ্যানেলটি। কচুরিপানার কারণে জেলার চার উপজেলায় সঙ্গে নৌ-পথে যোগাযোগে বেড়েছিল দুর্ভোগ।
কচুরিপানার সমস্যা সমাধানে ২০১২ সালে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হারভেস্টার মেশিন ক্রয় করে কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটি। উদ্দেশ্য ছিল মেশিনটির সাহায্যে হ্রদের কচুরিপানা অপসারণ করা হবে। কিন্তু মেশিনটি ক্রয়ের পর এর ব্যবহার হয়নি বললেই চলে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। মেশিনের যন্ত্রাংশে ঝংকার সৃষ্টি হয়েছে। মেশিনটি ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন নাগরিক সমাজ।
কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে বলেন, কাপ্তাই হ্রদকে কচুরিপানা মুক্ত করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি একটি পরিকল্পনা নেয়া দরকার এবং এত টাকা খরচ করে যে মেশিন কেনা হয়েছে; সেটি কেন এতদিন ব্যবহার করা হয়নি? আমরা বিভিন্ন সময় এটি পরিচালনার জন্য জনবল সংকটের কথা শুনি। সকল সমস্যা সমাধান করে হারভেস্টার মেশিনটি দ্রুত হ্রদে ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. ফারুক হোসেন বলেন, অনন্য সুন্দর কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার কারণে নৌচলাচলা ও লেকের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। সরকারের এতগুলো অর্থ কেন এতদিনে ব্যবহার করা গেল না; এটি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে। সমন্বয়ের মাধ্যমে এটিকে ব্যবহার উপযোগী করা দরকার। এটি পরিচালনায় কোন লোকবলের অভাব থাকলে সেটি দ্রুত সমাধান করে কচুরিপানা অপসারণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, কচুরিপানা কৃষি কাজের জন্য এক ধরনের সম্পদ। কচুরিপানা থেকে প্রচুর জৈব সার তৈরি করা যায়। আমরা কৃষকদের এই কচুরিপানা দিয়ে কিভাবে জৈব সার তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে প্রশিক্ষন দিই। কাপ্তাই লেকে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই আবর্জনাকে সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, হারভেস্টার মেশিনটি আমাদের কাছে থাকলেও এটি পরিচালনার জন্য আমাদের লোকবল নেই। এমনিতেই আমাদের লোকবলের সংকট। বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উজান থেকে কচুরিপানাও নেমে আসে। এর কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এজন্য ১৯৬২ সালের ক্রয়কৃত ট্রাক বোট দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশের কচুরিপানা সনাতনী পদ্ধতিতে টেনে সরিয়ে ফেলা হয়।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, আমি যতটুকু খবর নিয়েছি এই হারভেস্টার মেশিনটি কে পরিচালনা করবে এই সমস্যা নিয়ে এতো দিন পড়ে ছিল। আমি তাদের বলেছি, তেল লাগলে তেল দিব তাও যেন হারভেস্টার মেশিনটিকে কাজে চালিয়ে কুচরিপানা পরিষ্কার করা হয়।