
নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতি এমএন লারমা গ্রুপের নেতা শক্তিমান চাকমার মৃত্যুর পর থেকে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকছেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চু মণি চাকমাসহ আরো বেশ কজন।
খুব একটা দেখা যেত না চঞ্চু মণি চাকমাকে। প্রসীত গ্রুপের ইউপিডিএফ সমর্থিত বলে পরিচিতি থাকা এই জনপ্রতিনিধি নিজের উপর হামলার আশংকায় মুলত: সাবধানে চলাফেরা করতেন। তবে সর্বশেষ দুর্বৃত্তদের হামলার মুখে পড়তে হলো তাকে। বৃহষ্পতিবার বিকালে খাগড়াছড়ির আলুটিলায় ইউপিডিএফের এক কর্মীকে হত্যার ঘটনায় একদিনের মাথায় এই ঘটনা ঘটলো।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় তাকে অহরণের চেষ্টা করা হয়। চঞ্চু মণিকে অপহরণ করতে না পেরে ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়। তবে স্থানীয়দের কারণে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এদিকে আহত উপজেলা চেয়ারম্যানকে উদ্বার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করা হয়।
এদিকে পাওয়া গেছে অপহরণ করতে আসা ৪ দুস্কুতকারির পরিচয়। এলাকাবাসির প্রচেষ্টায় দুস্কৃতকারিদের মধ্যে ৪জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকী সব কক্সবাজারের বাসিন্দা। আটককৃতরা হলো- জেলা সদরের তেতুলতলা এলাকার মোহন চাকমার ছেলে রিমাত চাকমা (৩০), কক্সবাজার জেলার আনন্দনগর এলাকার মনি রাখাইন এর ছেলে চিংকু রাখাইন (২৫), ববুরি রাখাইন এর ছেলে টিউমি রাখাইন (২৪), ও মিযান রাখাইন এর ছেলে জোজো রাখাইন (২৫)।
এদিকে ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(এমএন লারমা গ্রুপ)কে দায়ী করেছে ইউপিডিএফ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে সংগঠনটি। এরআগে গত ৩ মে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) অন্যতম শীর্ষনেতা রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট শক্তিমান চাকমা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সামনে থেকে একদল যুবক চঞ্চু মণি চাকমাকে জোরপূর্বক নিজেদের মোটরসাইকেলে তুলে নিতে চাইলে তিনি দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে পালাতে গিয়ে পোস্ট অফিসের দুই নম্বর গেটের সামনে পড়ে গেলে সেখানে ৫/৬ জন যুবক তাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এসময় চঞ্চু মণির চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাজারে নিয়ে আসে। পরে পুলিশ পাহারায় তাকে হাসপাতালে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম প্রেরণ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আবুল মিয়া জানান, ‘মোটরসাইলে থাকা যুবকদের কাছে অস্ত্র ছিল। তাঁরা ওই লোককে (চঞ্চুমনি চাকমা) মটর সাইকেলে তুলে নিতে না পারায় ইট দিয়ে আঘাত করেছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সামছুল তাবরীজ জানান, ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে এসেছি।পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।উনার(চঞ্চু মণি)অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে।
চঞ্চু মণির মাথায় একাধিকবার ইট জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে বলে জানিয়েছেন খাগগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ নয়ন ময় চাকমা।
এদিকে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান সংগঠক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা এক বিবৃতিতে ঘটনায় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) পক্ষকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, সংস্কারপন্থীদের সন্ত্রাসীরা দিনদুপুরের শহর প্রশাসনের সামনে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার কলে জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় সহ তথ্য সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা বলেন, ‘এই ঘটনা তাদের আভ্যন্তরিণ কোন্দলের ফসল। আর আমাদের উপর দায় চাপানো হলো রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে। আমরা এই ঘটনায় জড়িত না।’
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন টিটু জানান, আটক ৪জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদেরও ধরতে অভিযান চলছে। তিনি জানান, তাদেরকে দুস্কৃতকারি হিসেবে আটক করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক পরিচয় দেয়নি।