লংগদু প্রতিনিধি
হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর উপায় বিশ্লেষন শীর্ষক সেমিনার লংগদুর ভাসান্যাদম ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে ভাসান্যাদম উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ রাঙামাটির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র’র সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বন উন্নয়ন ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র কাপ্তাইয়ের পরিচালক বখতিয়া নূর সিদ্দিকী, প্রধান আলোচক ছিলেন রাঙামাটি অঞ্চলের উপ বন সংরক্ষক আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ।
সেমিনারে হাতি-মানুষের দ্বন্দ নিরসনে করনীয় সম্পর্কে নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন আলোচকবৃন্দ। এসময় তারা বলেন, বাচ্চা জন্মানোর সময় এবং পরে মা হাতি অত্যন্ত সতর্ক ও আক্রমনাত্মক হয়। হাতি সাধারণত রাত্রি বেলা চলাচল করে। পানি বা খাদ্যের অভাব হলে লোকালয়ে বা ফসলের ক্ষেতে প্রবেশ করে।
হাতি ও মানুষের দ্বন্দের মনুষ্য সৃষ্টি কারণসমূহঃ হাতির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়া, আবাসস্থলের গাছপালা কাটা, বনে আগুন দেয়া, কৃষি ও জুম চাষ করা, মানুষের বসতি স্থাপন ও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী। হাতির চলাচলের পথ বাঁধাগ্রস্থ করা। হাতির পাল বা হাতির বাচ্চা ও দলছুট হাতিকে তাড়া করা। তী ধনুক বা বল্লম দিয়ে আঘাত করে আহত করা ও মেরে ফেলা। গুলি করা বা বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফাঁদ পাতা, ঝলসানো প্লাষ্টিক ছুঁড়ে মারা। কাঠের তক্তায় পেরেক লাগিয়ে ছুঁড়ে মারা।
হাতিও নানা কারণে লোকালয়ে প্রবেশ করে এবং মানুষ ও ফসলের ক্ষতি করে। প্রায় সময় হাতি লোকালয়ে খাদ্যের সন্ধানে এসে মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দেয়, মানুষকে আহত বা নিহত করে। হাতির আক্রমন বা ক্ষতি থেকে বাঁচতে মানুষকে কিছু কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দেন বন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, মানুষের চাষাবাদে পরিবর্তন আনতে হবে যেমন অপছন্দনীয় শস্য উৎপাদন করা। সোলার ইলেকট্রিক ফেন্সিং তৈরী করা। আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা করা। শব্দ করা, ড্রাম বাজানো, আগুণ দেয়া, আলো জ¦ালানো, মৌমাছির বাসা তৈরী করা সর্বোপরি জনসচেতনতা তৈরী করা ও প্রচার করা।
বনবিভাগের গবেষনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিন বন বিভাগের রাজস্থলী, কর্ণফুলী, কাপ্তাই ও রামপাহাড় এবং উত্তর বন বিভাগের পাবলাখালী, মাহিল্যা, রাঙ্গিপাড়া, চাইল্যাতলী, আমতলী, বৈরাগীবাজার ও ঘণমোড় এলাকায় হাতির আবসস্থল ও চলাচলের পথ রয়েছে। বন বিভাগ আরো জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিন বন বিভাগে বর্ষা মৌসুমে গড়ে ২৩টি এবং শুষ্ক মৌসুমে ৩২টি এবং উত্তর বন বিভাগে বর্ষা মৌসুমে ১৯ টি এবং শুষ্ক মৌসুমে ১৩টি হাতির বসবাস রয়েছে।
বন বিভাগের আয়োজনে হাতি অধুষ্যিত এলাকাগুলোতে ইআরটি (এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিম) গঠন করা হয়েছে। এই টিমের সদস্যরা মানুষ-হাতি সংঘাত প্রবণ এলাকাগুলোতে সংঘাত নিরসনে এবং হাতি সংরক্ষনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন বন বিভাগ রাঙামাটির সহকারি বন সংরক্ষক মনিরুজ্জামান, ভাসান্যাদম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী, বন বিভাগের শুভলং স্টেশন কর্মকর্তা সজিব মজুমদার, ভাসান্যাদম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. বদি আলম, স্থানীয় সমাজ সেবক রফিকুল ইসলাম মেম্বার প্রমূখ।