খাগড়াছড়ি

হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ রামগড়ের ৯ ইটভাটা

শ্যামল রুদ্র, রামগড়
খাগড়াছড়ির রামগড়ে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক নয়টি ইটভাটার সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে এগারটায় রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) উম্মে হাবিবা মজুমদার ইটভাটায় উপস্থিত হয়ে হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ১২০৪/২০২২ এর আদেশ মোতাবেক রামগড়ের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত ৯টি ইটভাটার যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। ইউএনও জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এসব ভাটা বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তি নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোসহ সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

উল্লেখ্য,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড়ে ৯টি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম এতোদিন চলছিল। কয়লার পরিবর্তে বনের গাছ জ্বালিয়ে এখানে ইট তৈরি করা হতো। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁিকতে ছিলেন। রামগড় পৌরসভার সোনাইপুলে রয়েছে ৪টি অবৈধ ইটভাটা। ইটপ্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী পৌরএলাকার ভেতর ও কৃষিজমি ইটভাটা স্থাপনে ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু এ সব নিয়মের কোন বালাই নেই এখানে। এক কিলোমিটারের মধ্যে বিশাল এলাকাজুড়ে নুরজাহান ব্রিকস, হাজেরা ব্রিকস, মোস্তফা রাইটার্স ব্রিকস, এনআইএম ব্রিকস নামের ইটখোলা গুলোর অবস্থান। অন্যদিকে, রামগড় পাতাছড়া ইউনিয়নের দাতারাম পাড়ায় বনের ভেতর ৫টি অনুমোদনহীন ভাটার কার্যক্রম চলেছে বছরের পর বছর ধরে। আপন-১, আপন-২, মেঘনা-১,মেঘনা-২ এবং এমএসপি নামের পাহাড় ঘেরা নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যূষিত এ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করায় ওই এলাকার জনজীবন মারাত্মকভাবে হুমকিতে পড়েছে। অনুমোদনহীন এসব ভাটায় পুড়ছে বনের গাছ। ফলে ব্যাপকভাবে বৃক্ষশূণ্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল।

জানা যায়, প্রতিটি ইটভাটায় এক মৌসুমে গড়ে ১ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হয়। সে হিসাবে ৯ ভাটায় ৯লাখ মন কাঠ জ্বলে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হওয়া সত্বেও প্রশাসনের নজরদারির বাইরে এতোদিন চলমান ছিল ভাটাগুলো। সরেজমিন দেখা যায়, অবৈধ ভাটাগুলোয় আবার ব্যবহার হচ্ছে ছোট আকৃতির ড্রাম চিমনি যা, পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। বড় ও ছোট ট্রাক ব্যবহার করে মাটি , কাঠ ও ইট পরিবহনের কারণে সড়কে বড়ছোট অসংখ্য গর্ত ও ধুলাবালির সৃষ্টি হয়েছে। ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে পাহাড় ও ধানী জমির উপরি অংশের মাটি।

দাতারামপাড়ার বাসিন্দা কমল কান্তি ত্রিপুরা জানান, ইট, মাটি ও কাঠ পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যবহার করায় রাস্তাঘাট প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষায় খানাখন্দে আরও খারাপ হবে পরিস্থিতি। হাজেরা ব্রিকস এর মালিক নোমান ভইয়া জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনও ইটভাটার লাইসেন্স নেই। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করেন। ব্যবসায়ীদের থেকে জ্বালানি কাঠ কিনে ইটভাটায় ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেন।

রামগড় পৌরসভার কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। ভাটার কারণে অল্প দিনেই রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় বয়স্ক ও শিশুরা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভোগেন।

রামগড় প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন বলেন, ভাটাগুলোয় ড্রাম চিমনির ব্যবহার ছাড়াও বনের গাছ পোড়ানোয় প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ের জীববৈচিত্র। মাটির টপসয়েল কাটায় জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রামগড় উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভ্রাম্যমান আদালত রামগড়ে ৯ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৫ লাখ ৩০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

 

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 2 =

Back to top button