
কখনো পার্বত্য নাগরিক ফোরাম কিংবা বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালী ছাত্র পরিষদের ডাকে ৭২ ঘন্টা আবার কখনো বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের ৪৮ ঘন্টা হরতাল নিয়ে নানান নাটকীয়তা আর টানাপোড়েনে বেশ ভোগান্তিই পোহাতে হয়েছে পার্বত্য রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িবাসিকে। বান্দরবানে প্রথম দিনই আহ্বানকারিদের অনুসারিরা হরতাল প্রত্যাখ্যান করলেও ঠিকই বিপাকে পড়তে হয় দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িবাসিকে।
খাগড়াছড়িতে ৭২ ঘন্টার হরতাল রবিবার সকাল ছয়টায় শুরু হওয়ার পর বিকাল চারটায় প্রত্যাহার করা হয়। আবার এই প্রত্যাহার করা ঘোষণার সাথে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুড়ে দেয়ায় শুরু হয় নতুন বিভ্রান্তি। হরতাল আছে নাকি নাই। এমন টানাপোড়েনে আদৌ হরতাল হবে কিনা এনিয়ে শুরু হয় নানান আলোচনা। হরতাল হবে কি, হবেনা,এনিয়ে দোটানায় পড়া মানুষের ভোগান্তি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
শেষাবধি সোমবার সকালে যান চলাচল না থাকার মধ্য দিয়েই রাঙামাটি শহরে শুরু হয় হরতাল । কিন্তু সকাল থেকেই শহরের সব সড়কে দেদারসে চলেছে মোটরসাইকেল। আর দুপুর বারোটা বাজতে না বাজতেই শহরজুড়ে অটোরিক্সার ব্যাপক চলাচল শুরু। এমন অবস্থায় বেলা তিনটায় হরতাল স্থগিতের ঘোষণা দেয় হরতাল আহ্বানকারিরা।
খাগড়াছড়ি শহরের কলেজ সড়ক, খাগড়াছড়ি গেইটসহ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়। একটি ট্রাক ও মাহেন্দ্র গাড়ি ভাংচুর করা হয়। টায়ারে আগুন দিয়ে তারা বিক্ষোভ করে। পরে সকাল ১০টার দিকে পুলিশ সদস্যরা পিকেটারদের ধাওয়া দিয়ে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামসহ ৪জনকে আটক করে নিয়ে যায়। কিন্তু দুপুর হওয়ার আগেই শহরে যানবাহন চলাচল বাড়তে থাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করে। হরতালের প্রভাব কমতে থাকে।
দুরপাল্লা ও আভ্যন্তরীন সড়কে যানবাহন চলাচল না করায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাতের বাসের যাত্রীরা খাগড়াছড়িতে আটকা পড়েন। হঠাৎ হরতালের কারণে সাজেক পর্যটন এলাকায় ঘুরতে আসা অনেকেই পড়েন সমস্যায়। সোমবার বেলা ৩টা নাগাদ পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ জানান, প্রশাসনের অনুরোধে বিকাল ৩টা থেকে হরতাল স্থগিত করা হয়েছে। দাবী পুরণ না হলে পুনরায় হরতাল হবে।
হরতাল আহবানকারি বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর খামখেয়ালিপনায় গত দু‘দিন চরম ভোগান্তিতে ছিলেন খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির মানুষ। হরতাল হবে, কী হবেনা; এমন নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে কেটেছে দুই দিন। ৭২ ঘন্টার হরতাল আহবান নিয়ে টানাপোড়েন শেষে রবিবার বিকালের মধ্যে তা প্রত্যাহার করা হয়। ৪৮ ঘন্টার হরতাল নিয়েও নাটকীয়তা হয়েছে। আধাবেলা শেষে স্থগিতের ঘোষনা আসে। এতে সাধারণ মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েন। বাঙালী সংগঠনগুলোর এমন বিপরীতমুখি আচরণের সমালোচনাও করেছেন অনেকেই।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করেও পাওয়া যায়নি পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক শাহাদাত ফরাজী সাকিব ও রাঙামাটি জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারকে।
তবে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি নূরজাহান বেগম বলেন, প্রশাসনের চাপের কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারেনি। নেতারাও মোবাইল বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয়েছে। তবুও শেষাবধি প্রশাসনের প্রতি আস্থা ও বিশ^াস রেখেই আমরা হরতার স্থগিত করেছি।