স্থবির হচ্ছে প্রাণচঞ্চল শহর রাঙামাটি

বিশ্বজুড়ে যখন নভেল করোনা ভাইরাস রাজত্ব করছে তখন করোনা প্রতিরোধে সচেতন হচ্ছে পার্বত্য জনপথ রাঙামাটির সাধারণ মানুষ। রাঙামাটি শহরে সারাদিন হাট বাজার থেকে পাড়া মহল্লার চায়ের দোকান কিংবা এলাকাভিত্তিক খোলা জায়গাগুলোতে যে জনসমাগম থাকতো সারাদিন, সেসব স্থানগুলোতে বর্তমান সময়ে প্রয়োজন না হলে তেমন একটা দেখা মিলছে না লোকজনের।
সোমবার সকালে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, বনরূপা, তবলছড়ি ঘুরে দেখা গেছে, শহরের দোকানগুলো খোলা থাকলেও তেমন একটা ক্রেতার দেখা নেই। যেসব ক্রেতা বাজারে আসছেন তাদেরও ভিড় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকানে। সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় রিজার্ভ বাজার চৌমুহনী সংলগ্ন প্রধান সড়কে গিয়ে দেখা যায় একসারিতে ১৭টা দোকান খোলা ক্রেতার আশায় কিন্তু কোন দোকানে ক্রেতার দেখা মেলেনি। তেমনিভাবে পুরো শহরের চিত্র পাই একই রকম হচ্ছে দিন দিন।
শপিংমল:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে যখন চীন, ইতালি, ইরানসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ ছাড়িয়ে বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাব যখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তখন রাঙামাটির শপিংমলগুলোতে কমেছে ক্রেতার আনাগোনা। প্রতিদিনের মতো বিক্রয়ের আসা নিয়ে শপিংমলগুলো বিশেষত জামাকাপড়ের দোকানগুলো খোলা হলেও গতকয়েকদিন ধরে সে আশা আশাই থেকে যাচ্ছে। কিছু কিছু দোকানে হালকা পাতলা বিকিকিনি হলেও, এমন অনেক দোকান রয়েছে তাদের দোকানে দৈনন্দিন বিক্রয়ের যাত্রা করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে হ্যান্ডওয়াশ, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রয়ের দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনার অভাব নেই।
রিজার্ভ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মো. রানা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর থেকে বেচাবিক্রি অনেকাংশে কমে গেছে।
খাবারের হোটেল:
প্রতিদিন দিবা রাত্রি খাবারের হোটেলগুলোতে আগে ভোজনরসিক কিংবা ব্যাচেলরদের ভিড় থাকলেও বর্তমান সময়ে অতিপ্রয়োজন না হলে কাউকেই দেখা মিলছে না রাঙামাটির খাবারের হোটেলগুলোতে। বরিবার রাতে শহরের বিভিন্ন হোটেল ঘুরে দেখা গেছে, কোন কোন হোটেলে হাতে গোনা কয়েকজন খাবার খেতে এলেও এমনও অনেক হোটেল দেখা গেছে, যেখানে একজনও খাবার খাওয়ার লোক নেই। কিন্তু আগের সময়গুলোতে রাতের সময়টাতে বেশ জমজমাট থাকতো হোটেলগুলো।
বনরূপার মো. ইলিয়াস জানান, আমি আগে দুপুর রাতে খাবার হোটেলে খেতাম, এখন বাসায় রান্না করে খায়। এতে বিপুল সংখ্যক কর্মচারী নিয়ে হতাশ অনেক হোটেল মালিক।
এমন চিত্র শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট চায়ের দোকানগুলোরও। আগে সময় পেলেই কয়েকবন্ধু কিংবা এলাকার কয়েকজন চায়ের দোকানে অবসর সময় পার করতেন গল্প করতে করতে। কিন্তু রবিবার শহরের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক চায়ের দোকানগুলো ঘুরেও দেখা গেছে সেখানেও এখন আর দল বেঁধে তেমন একটা গল্প করছেন না। এমনকি অনেকে চায়ের দোকানগুলোতেও আসছেন না।
বিনোদন স্পট বন্ধ:
রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ না ছড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পটগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনার পর থেকে সেসব স্পটের আশপাশের অনেক দোকানই দিনের প্রায় সময় বন্ধ রাখছে।
রাঙামাটি আসামবস্তি কাপ্তাই সড়কে বরগাং এলাকায় প্রতিদিন যেসব দোকানে বিকেলে খাবারে অর্ডার দিলে তা পেতে ২০-২৫মিনিট সময় লাগতো, এখন লোকজনের অভাবে এইসব দোকান প্রায় সময় বন্ধ রাখলে দোকান মালিকরা।
কাঁচাবাজার:
রাঙামাটির কাচাঁবাজারগুলোতে লোকজনের আনাগোনা থাকলেও তা দিনের বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন ভাবে হচ্ছে। যে ভিড় আগে সকালে নিজ কর্মস্থলে আসা আগে কিংবা সন্ধ্যা বা রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে হতো তা এখন দিনের যেকোন সুবিধা জনক সময়ে কাঁচাবাজার ক্রয়ের কাজটা সেরে নিচ্ছে শহরবাসী যাতে করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একে অপরের সাথে যে তিনফুট দুরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে বাজারে মানা না হলেও ন্যুনতম দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়।
রিজার্ভ বাজারে কাঁচা তরিতরকারি বাজার করতে আসার সুমন জানান, আগে সকালে বাজার করতে আসতাম এখন ভিড় এড়াতে দুপুরে বা বিকালে বাজার করতে আসি।
মাছের বাজার:
শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বেশি চিৎকার চেঁচামেচি করলে শিক্ষকরা বলে এটা কি মাছ বাজার পেয়েছো তোমরা অর্থাৎ মাছ বাজার মানে সেখানে চিৎকার চেঁচামেচি থাকবেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাঙামাটির বিভিন্ন মাছ বাজারে সে চিৎকার চেঁচামেচি হ্রাস পেয়েছে। খুব একটা প্রয়োজন না হলে মাছ বাজার আসছেন না লোকজন, আবার যারা আসছেন তারাও ভিড় এড়াতে দিনের বিভিন্ন সময় বাজার করতে আসছেন।
হাট :
সপ্তাহে শনি ও বুধবার রাঙামাটি শহরের হাট বার হলেও গত শনিবারে ক্রেতার সংখ্যা বেশকিছুটা কম দেখা গেছে। যেখানে একজনের সাথে অন্যজন ধাক্কাধাক্কি করে পণ্য ক্রয় করতে হতো, সেখানে অনেক ক্রেতারাই দেখা মেলেনি।
পানসিগারেটের দোকান:
শহরের কিছুদুর পর পর রয়েছে পানসিগারেট, ডাবসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রসরা সাজানো দোকান। সে সব দোকানেও এখন খুব একটা ক্রেতার দেখা মিলছে না। যারা আসছেন তারাও পান সিগারেট, ডাব বা অন্যপণ্যটি নিয়ে সেস্থানের সামনে দাড়িয়ে আগের মত আর খাচ্ছে না। নিজ নিজ সুবিধাজনক স্থানে চলে যাচ্ছে সেটি নিয়ে।
পানসিগারেট পণ্য বিক্রেতা মো. কামাল জানান, আগের মত তিনচারদিন ধরে আর বেচাকেনা হচ্ছে না। যাও হচ্ছে অল্প। তা দিয়ে আমার দৈনন্দিন খরচও উঠছে না। দিন দিন ক্রেতার আনাগোনা কমছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বা করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে শহরে যেমন প্রয়োজন ছাড়া লোকজন তেমন একটা বের হচ্ছে না তেমনি ভাবে শহরে কমেছে গণপরিবহনের আনাগোনা।