প্রান্ত রনি ॥
প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে রাঙামাটি জেলা সদরের রাঙাপানি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে ধান চাষাবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। বোরো মৌসুমে জমিতে ধান রোপণের সময় পানি থাকলেও চারা পরিপক্ক হওয়ার সময়ে প্রয়োজন পড়ে সেচের। কিন্তু স্থানীয়ভাবে সেচ ব্যবস্থাপনার সুযোগ না থাকায় জমিতে সেচ নিয়ে প্রতি বছরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তির জন্য সেচ সংকট নিরসনের দাবি স্থানীয় চাষীদের। তারা বলছেন, কৃষি বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলে সেচ সংকট কেটে যাবে। সংকট নিরসনের জন্য আশপাশের ছড়া থেকে পানি উত্তোলনের জন্য সেচ পাম্প ব্যবস্থার দরকার।
এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, তারা কৃষকদের চারা রোপণ, পরিচর্যাসহ অন্যান্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকেন। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি মৌসুমের ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বোরো ধানের বীজতলা তৈরি ও রোপণের সময় থাকে। বীজতলা তৈরি থেকে রোপণ, পরিচর্যা ও ফলন ঘরে তুলতে সব মিলিয়ে সময় লাগে ১৫০-১৫৫ দিন। এবছর রাঙামাটির আট উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের সেচ সংকটের কথা উল্লেখ করে রাঙাপানি এলাকার কৃষক জিন্দাধন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, রাঙাপানি এলাকার কৃষকরা প্রতি বছরই জলে ভাসা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে থাকেন। কিন্তু ধান লাগানোর কিছু দিন পরই আমাদের সেচ সংকটে বিপাকে পড়তে হয়। এটি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। শুরুর দিকে পানিতে ধান রোপণ করতে পারলেও চারার বয়স বাড়তে বাড়তে সেচের পরিমাণ হয়। কিন্তু সেচ ব্যবস্থাপনার সুযোগ না থাকায় ধানের চারা মরে যায়, পাতা লালচে রঙ ধারণ করে। যে কারণে মৌসুম শেষে কৃষকরা কাক্সিক্ষত ফলন পাচ্ছেন না। এখানকার কৃষকের সেচের এই দুর্ভোগ আগে থেকেই।
একই এলাকার কৃষাণী শিশুমতি চাকমা বলেন, সার ওষুধ কীটনাশকের পাশাপাশি জমিতে সেচ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অনেকেই সার ওষুধ কীটনাশকের ব্যবহার করতে পারলেও সেচের পানি নিয়ে কমবেশি সকলেরই দুর্ভোগ রয়েছে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে কৃষি বিভাগকেও সেচ সংকট নিরসনের জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছি। অথচ এখনো পর্যন্ত কেউই এগিয়ে আসেননি। বুদ্ধমনি চাকমা নামের আরেক কৃষক বলেন, বেশ কিছু উঁচু জমি ধান চাষের উপযোগী হলেও সেচ সমস্যার কারণে ধান চাষ করা হয়ে উঠেনা। তাই কেউ কেউ ডালসহ অন্যান্য সবজির চাষাবাদ করেন। আবার অনেক সময় জমি অনাবাদি থেকে যায়।
রাঙামাটির নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক ও জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সহকারী সাধারণ সম্পাদক জিসান বখতেয়ার বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই রাঙামাটির স্থানীয় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহগুলোকে কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। কিন্তু এ সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ দালানকোঠা নির্মাণেই ব্যস্ত। অথচ ছোট ছোট কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেও কৃষকদের সংকট নিরসন করা সম্ভব। এছাড়া কৃষকদের বাৎসরিক কৃষি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা যায়। আমি মনে করি এজন্য কৃষি বিভাগকে আরো উল্লেখজনক ভূমিকা রাখতে হবে।
সেচ সংকটের কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের বোরো ধান আবাদের জন্য কারিগরি সহায়তা করা হয়। কিন্তু সেচ পাম্প তৈরি কিংবা এই সংকটের নিরসনের জন্য আমাদের হাতে এখনো কোন উপায় নেই। তবে আমরা কৃষকদের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করছি; চেষ্টা করছি যেকোনো ভাবে তাদের দীর্ঘদিনের সেচ সংকট সমাধানের।