সাগর চক্রবর্তী কমল, মাটিরাঙ্গা ॥
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ধলিয়া হাজা পাড়ায় শতাধিক পরিবার নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। নিরাপদ পানি বলতে যা বুঝায় তা এখানকার মানুষের নাগালের বাইরে। নিরাপদ পানি মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও তা এ দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মানুষের কাছে শুধুই স্বপ্ন।
এলাকার শতাধিক পাহাড়ি পরিবারে বিশুদ্ধ পানির এমনই তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গ্রামের শতাধিক পাহাড়ি পরিবারের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দুষিত ঝিরি ঝর্ণার পানি পান ও ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত ও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে এই গ্রামের শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ।
মূলত দুর্গম এলাকায় নলকূপ না থাকায় স্থানীয়রা ঝরনা, ঝিরি, ছড়া, কুয়াসহ প্রাকৃতিক পানির উৎসব খাওয়া থেকে ঘরের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যায়। এতে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। বিশুদ্ধ একটু খাবার পানির আশায় এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম ঘুরেও মিলছে না এক কলসি বিশুদ্ধ পানি। ফলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে বাধ্য হয়েই খাল ও ঝিরি ঝর্নার পানি খেতে হচ্ছে। যদিও তাও পর্যাপ্ত নয়। প্রকৃতিক এসব ঝিরিঝর্ণা শুকিয়ে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মিলছেনা পর্যাপ্ত পানিও।
প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো মূলত ঝিরি, ছড়ার পানির ওপর নির্ভরশীল। ছড়ায় কূপ খনন করে কিংবা পাহাড় থেকে চুইয়ে পড়া পানির মুখে বাঁশ বসিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করতো। যা দিয়ে খাওয়া, রান্নাবান্নাসহ সংসারের দৈনদিন কাজ চলতো। তাও আবার খাবার অযোগ্য। এখানাাকার পানি অত্যান্ত লবনাক্ত। তবে এখন প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে পানি নেই। উৎসগুলো অনেকটা মৃত। বর্তমানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোঁটা ফোঁটা পড়া পানিগুলো সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা।
বিশেষ করে প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাসে দুর্গম এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়। এবারও মাটিরাঙ্গার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ধলিয়া হাজা পাড়ায় এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখে ধলিয়া হাজা পাড়ায় এলাকায় নব নির্বাচিত মেম্বার শান্তিময় ত্রিপুরা নিজ উদ্যোগে এলাকায় এলাকায় মাসে দুইবার করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ করছে।
মাটিরাঙ্গার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ধলিয়া হাজা পাড়ায় নব নির্বাচিত মেম্বার শান্তিময় ত্রিপুরা জানান, এই এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরেও ২নং ওয়ার্ড ধলিয়া হাজা পাড়ায় মানুষ সাধারণ নলকূপ ও রিংওয়েলের বিশুদ্ধ পানির মুখ দেখি নাই। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ যদি কাজ করে তাহলে পানির কষ্ট কিছুটা কমতো।
মাটিরাঙ্গার সদর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হমেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো সহসা পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আসছে। পর্যায়ক্রমে এসব গ্রামে যোগাযোগ উন্নয়ন করে বঞ্চিত সেবাখাতগুলো প্রসারের ব্যবস্থা সম্ভব বলে জানান।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী দিপ শিখা চাকমা জানান, মানুষের নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ আমাদের মূল কাজ, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া তবে এই সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। যেহেতু পাহাড়ি এলাকা আর ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য অনেক খরচ ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার দুর্গম এলাকা হওয়ায় সব জায়গায় যাওয়াও যায় না তাই পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় খাবার পানির সরবরাহ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।