শুভ্র মিশু ও মো. মহিউদ্দিন
করোনা মহামারীর মধ্যেই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সাজেক ইউনিয়নে হঠাৎ করে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১নং ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং এই সব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে।
সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়ার পুস্প ত্রিপুরা জানান, জুন মাসে তিনিসহ তার পরিবারের তিনজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য মতে, এসব এলাকার মানুষ জ্বর হলে ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনে খায়। ডাক্তারের পরার্মশ নেয় না; ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করতেও আসেন না। তারা মশারি ব্যবহার করে না যার কারণে এই সব এলাকায় বার বার ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঘাইছড়িতে এ বছর একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার প্রজনন বেড়েছে। কারণ একটানা বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ের বিভিন্ন গর্ত ও ছড়ায় পানি জমে মশার প্রজননে সুবিধা হয়। সন্ধ্যা থেকে মশারি ব্যবহার, আশপাশের ঝোপঝাড় ও নর্দমা দ্রুত পরিষ্কারের ব্যবস্থা এবং জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হীরা নন্দ্র ত্রিপুরা জানান, এর আগে সাজেকে মহামারী আকারে ডায়রিয়া এবং হাম দেখা দিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় হেলিকপ্টারে করে নিয়ে গিয়ে অনেক মুমূর্ষু রাগীকে চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে।
বাঘাইছড়ির সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা নয়ন জানান, সরকারি এবং বেসরকারি হিসাবের চেয়ে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হবে। কারণ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে আসে না। জ্বরের লক্ষণ দেখে লোকজন বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে যায় এবং তারা মশারি ব্যাবহার না করার কারণে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। তবে আমি আমার ইউপি সদস্যদের জরুরি সভা করে জনসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শসহ নিজে কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, জেলায় ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া রোগে ১৭ হাজার ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছিল; ২০১৮ সালে ২ হাজার ৯৯৩ জন, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৩ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৭৭ জন। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় বাঘাইছড়ি উপজেলায়। ২০১৪ সালে ৫ হাজার ২৫৬ জন, ২০১৮ সালে ৮২৪জন, ২০১৯ সালে ১ হাজার ২৪ জন, ২০২০ সালে ৩৭২ জন। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩২৬ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রয়েছেন; যার মধ্যে জুন মাসে ২১৭ জন এর মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৭৮জন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফেতেকার আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুন মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৭৮জন। তবে দুর্গম সাজেক ইউনিয়ন কে আমরা ম্যালেরিয়ার ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তিনি জানান, যারা জুমে কাজ করে এবং মশারি ব্যবহার করছে না তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, জেলার ৪টি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় বেশি না। আমি সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই সব এলাকায় বাড়তি নজর রাখার জন্য এবং দ্রুত কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।