ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই ॥
সাংগ্রাঁইমা ঞিঞি ঞাঞা রিকজাইগাইপামে/
ওও ঞি কো রো ওও মি ম্রি রো/ লাগাই লাগাই/ চুইপ্যগাইমেলেহ্।
অর্থাৎ নববর্ষে সবাই মিলে এক সমানে এক সাথে জল খেলিতে যায়, ও ও ভাইয়েরা ও ও বোনেরা, খুশিতে মিলিত হয়।
মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই জল উৎসবের অন্যতম জনপ্রিয় গানটি গেয়ে যখন মারমা শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করলেন ঠিক সেই সময়ে হাজার হাজার লোকের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠ। এই যেন প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছেন তাঁরা। নববর্ষকে বরণ এবং পুরানো বর্ষকে বিদায় উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই জলোৎসব উদযাপন করে থাকে। মারমা যুবক যুবতীরা একে অপরের প্রতি জল নিক্ষেপের মাধামে পুরোনো বছরের দুঃখ, গ্লানি, বেদনাকে ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারের সাংগ্রাই জলোৎসব উদযাপন কমিটির আয়োজনে শুক্রবার সকালে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সাংগ্রাই জল উৎসব। এই উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এইসময় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা হতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। সাংগ্রাই জলেৎসবে অংশ নিতে আসা কাপ্তাইয়ের শিলছড়ির শিল্পী ইথিং মারমা জানান, সাংগ্রাই জল উৎসব, আমাদের প্রাণের উৎসব। বছরের এই দিনে আমরা সকলে মিলিত হয়, আনন্দ করি।
জল উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী জানান, মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাঁই জল উৎসবকে ঘিরে এখন উৎসবে আনন্দে মাতোয়ারা সমগ্র চিৎমরম এলাকা। উৎসবকে ঘিরে নানা বর্ণের মানুষের আগমন ঘটেছে এই এলাকায়।
সাংগ্রাই জল উৎসব সাংস্কৃতিক কমিটির আহবায়ক পাইসুই মারমা, এই সাংগ্রাই জল উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি, কৃষ্টিকে তুলে ধরছি। সকল ভেদাভেদ ভূলে আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিব।
এদিকে সাংগ্রাই জল উৎসব উপলক্ষে বিহার সংলগ্ন মাঠে শুক্রবার সকাল ১০ টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন কাপ্তাই ৪১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সাব্বির আহমেদ। উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরীর সভাপতিত্বে মাসাং মারমা ও ইসাইনু মারমার সঞ্চালনায় এইসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, চন্দ্রঘোনা থানার ইনচার্জ ইকবাল বাহার চৌধুরী, ৩২৩ নং চিৎমরম মৌজার হেডম্যান ক্যওসিং মং। স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্যপ্রু চৌধুরী।
এদিকে সাংগ্রাই জলোৎসব উপলক্ষে গত ১৩ এপ্রিল হতে চিৎমরম এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। দূর-দূরান্ত হতে হরেক রকম পণ্য নিয়ে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়েছেন।