অরণ্য ইমতিয়াজ
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ‘লংগদু কাঠ ব্যবসায়ি সমিতি’। ওই উপজেলার কাঠ ব্যবসার সাথে জড়িতদের এই সংগঠনের জন্য একই সময়ে পৃথক টেন্ডার করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। একই সময়ে পৃথক পৃথক টেন্ডারে সংগঠনটির জন্য বরাদ্দ প্রদানের বিষয়টি ‘নজিরবিহীন এবং অপ্রচলিত’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পুরো প্রক্রিয়াটিতেই তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে মানছেন টেন্ডারকারি দুই প্রতিষ্ঠানও। অনেক প্রতিষ্ঠানই যেখানে সামান্য কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কূল পায়না,সেখানে একটি সংগঠনের দুইমাসে দুইবার একই কাজের টেন্ডার হওয়াটা ‘রাজকপাল’ বৈকি !
অনুসন্ধানে জানা গেছে,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ৯ মে ‘লংগদু উডমার্চেন্ট এসোসিয়েশন অফিস বিল্ডিং’ এর টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ করে,যার প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। মাত্র একদিন সময় দিয়ে এই টেন্ডার জমা দেয়ার সময়সীমা বেধে দেয়া হয় ১০ মে। টেন্ডারে জুনের ১ তারিখ কাজ শুরু করে ২৯ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জন্য উন্নয়ন সহযোগিতা (কোড-২২১০০১১০০),রাঙামাটি পার্বত্য জেলা-২০২১-২০২৩ থেকে এই প্রকল্পটির অর্থায়নের তথ্য দেয়া আছে ওটিএম পদ্ধতির এই টেন্ডারে।
মজার ব্যাপার হলো উন্নয়ন বোর্ডের এই টেন্ডারের ঠিক একমাসে আগেই ৬ এপ্রিল ‘কন্ট্রাকশন অফ কাঠ ব্যবসায়ি সমিতি অফিস এট লংগদু উপজেলা’ নামে পৃথক আরেকটি টেন্ডার করেছে পাহাড়ের আরেক উন্নয়ন সংস্থা পার্বত্য রাঙামাটি জেলা পরিষদ। মে মাসের ১ তারিখ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করা নির্দেশনা দেয়া সেই টেন্ডারের ব্যয় আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা ! পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের জন্য থোক বরাদ্দ থেকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার তথ্য আছে ওটিএম-এ করা এই টেন্ডারে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,এটা কি করে সম্ভব ? এমন সচরাচর হয়ওনা। সম্ভবত একই সংগঠন একই সময়ে দুই জায়গায় আবেদন করায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে লংগদু কাঠ ব্যবসায়ি সমিতির এই ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে সুখেশ^র চাকমা পল্টু নামের একজন লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন,‘ সম্ভবত যে জায়গায় ভবনটি হওয়ার কথা,সেই নিয়ে জটিলতা আছে। তাই আমরা প্রকল্পর কাজটি আপাতত বন্ধ রাখব।’
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা বলছেন, ‘ আমরা তো জানিনা যে ওনারা অন্য কোথাও আবেদন করেছেন। আমরা আবেদন যাচাই করে টেন্ডারে দিয়েছি। তবে এমনটা তো হওয়া উচিত না। সমন্বয়হীনতার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রকল্প গ্রহণের আগে উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরী।’ একই সাথে এই প্রকল্পের ব্যাপারেও উর্ধতন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানালেন তিনি।
লংগদু কাঠ ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোঃ সাদেক, যিনি আবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বারেক সরকারের মেয়েজামাই,তিনি বলছেন-‘ আমরা দুই প্রতিষ্ঠানের কাছেই আবেদন করেছিলাম। কাদেরকে অনুমোদন হয়েছে কিংবা টেন্ডারে গিয়েছে,সেটা আমি জানিনা। টেন্ডার হওয়ার বিষয়টি তিনি জানেননা বলে দাবি করেন এবং জেনে জানাবেন বলে আশ^াস দেন। পরে দুইদিনেও তিনি কিছু না জানানোয় পরে তাকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এই বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি(দুপ্রক) এর জেলা সভাপতি ওমর ফারুক বলছেন, পার্বত্যবাসির জীবনমান উন্নয়ন ও পাহাড়ের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তারাই যদি সমন্বয়হীনতার কারণে একই সংগঠনের একই কাজ দুইবার দুইনামে টেন্ডার করে সেটা পার্বত্যবাসির জন্য দুভার্গ্যরে। আমরা আশা করছি,তারা ভবিষ্যতে এই ধরণের সমন্বয়হীনতা এড়িয়ে এমন ঘটনার যেনো পুনরাবৃত্তি না হয়,সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।’