
সুহৃদ সুপান্থ
নির্বাচনের এখনো ঢের বাকি,প্রতীক বরাদ্দ হবে সবেমাত্র ২৩ তারিখ। অথচ নির্বাচনী যুদ্ধ শুরুর আগেই শীর্ষ পর্যায় থেকে ‘কড়াবার্তা’ পেয়ে গেছেন রাঙামাটির লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী দুই নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান ও সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও সহসভাপতি আব্দুর রহিম।
‘নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটির সভায় অংশ না নেয়ায় এই দুই নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে জেলা আওয়ামীলীগ,যার জবাব দিতে হবে আজই (বুধবার)। সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে দুই নেতার ভাগ্যে জুটতে পারে আরো কঠিন কোন শাস্তি।
লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনগুলোর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ২৩ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হতে যাওয়া এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের পাঁচটিতেই নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে গেছেন। আর দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এই প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠেছে দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধেই।
মাইনী ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী আব্দুল আলীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সভাপতি আব্দুল বারেক সরকারের পুত্র এরশাদ সরকার। নিজের ছেলেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় দলীয় সভাপতি বারেক। তিনি তার পুত্রের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে গুলশাখালি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসলামের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রকিব হোসেন,যিনি সম্পর্কে জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিমের ভাতিজা এবং মনোনয়ন দৌড়ে জোর দাবিদারও ছিলেন। সঙ্গতকারণেই নিজের ভাতিজার পক্ষেই থাকছেন মি: রহিম,এমনটাই সন্দেহ নেতাকর্মীদের।
উপজেলার দুই শীর্ষ নেতাকে জেলা থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার খবর জানাজানি হতেই সর্বত্র শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলছেন, ‘আমরা লংগদুর নির্বাচন বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা আহ্বান করেছিলাম,সেই সভায় এই দুই নেতা উপস্থিত হননি। আমরা নানা কথা শুনতেছি,তবে সভায় উপস্থিত না হওয়ার কারণে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। দেখি তারা কি জবাব দেয়। তবে আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে যে বা যারাই অবস্থান নিবেন,তারা বহিষ্কার হবেন এটা নিশ্চিত। আমাদের কেন্দ্রের স্পষ্ট নির্দেশনা,সেটা কঠোরভাবেই বাস্তবায়ন করব আমরা। শুধু আওয়ামীলীগ নয়,সহযোগি সংগঠনের কোন নেতাকর্মীও যদি দলীয় প্রতীকের প্রার্থী বাদ দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে, তবে তাকে দলীয় পদ হারাতে হবে।’
দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে যে বা যারাই অবস্থান নিবেন,তারা বহিষ্কার হবেন এটা নিশ্চিত। আমাদের কেন্দ্র থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে,সেটা কঠোরভাবেই বাস্তবায়ন করব আমরা…………হাজী মুছা মাতব্বর,সাধারন সম্পাদক,জেলা আওয়ামীলীগ
এদিকে লংগদু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটিতেই নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। কোন কোন ইউনিয়নের প্রার্থীতা বাছাইয়েও ‘যোগ্যতা,ত্যাগ ও জনপ্রিয়তা’কে গুরুত্ব না দিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। তবে এই বিষয়ে মুছা মাতব্বর বলেন, ‘আওয়ামীগের তৃণমূল থেকে পাওয়া তালিকা থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে দলের কেন্দ্র,সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলীয় প্রতীক যিনি পেয়েছেন তাকে বিজয়ী করতেই সবাইকে কাজ করতে হবে। এর অন্যথা হলেই কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত,মাইনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার এবং গুলশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুর রহিমের রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনই স্বস্তিকর বা বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলোনা, বরং বরাবরই বৈরিতাপূর্ণ। এই দুই নেতার বিরোধ উপজেলার রাজনীতিতে সবসময়ই আলোচিত ঘটনা । তবে উপজেলার রাজনীতির সাম্প্রতিক নানান মেরুকরণে তারা যেনো ‘বাঘে-মহিষে’ ইদানীং এক ঘাটে জল খাচ্ছেন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে ‘সন্তান’ আর ‘ভাতিজা’র জন্য সম্ভবত বেশ বড় ঝুঁকিই নিয়ে ফেললেন উপজেলা আওয়ামীলীগের পরীক্ষিত ও পুরনো দুই নেতা !