পাহাড়ের উন্নয়নে একমাত্র আওয়ামীলীগ সরকারই কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি চুক্তি আমরাই করেছি, আর চুক্তি আমরাই বাস্তবায়ন করবো। তিনি বলেন, সমতলের ন্যায় পাহাড়ের মানুষকে ভূমির স্থায়ী মালিকানা দেয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির মালিকানা স্থানীয়দেরই কাছেই থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যে শান্তিচুক্তি আমরা করেছিলাম তার সিংগভাগ বাস্তবায়ন করেছি। যেটুকু বাকি আছে সেটা আমরা করব। ভূমি কমিশন আমরা গঠন করে দিয়েছি। ভূমি কমিশন যাতে নিয়মিত বসতে পারে সেই সমস্যাটারও সমাধান হতে পারে।’ রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটিতে ৪০০০তম পাড়াকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জমি-জমার মালিকানা নিয়ে ঔপনিবেশিক আইন সংশোধন করে নতুন আইনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব জায়গার মানুষ যেন তাদের ভূমির মালিকানাটা পায়; পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যেন তার ভূমির মালিকানটা সেইভাবে নিতে পারে- আমরা সেই ব্যবস্থাই করতে চাই। কাজেই ওই মালিকানা তাদের নিজস্ব থাকবে, সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।’
পাহাড়ে অশান্তি প্রতিরোধে পার্বত্যবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে আমি বলব, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কারণ শান্তিপূর্ণ পবিবেশ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেটা মাথায় রেখেই আমি সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসকরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে ‘আরও প্রকট করে’ তুলেছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘সমতল ভূমি থেকে বিভিন্ন লোককে নিয়ে ওখানে বসতি করা শুরু করে দেয়। তাদের ক্যাম্পে রাখা হয় এবং সেখানে সংঘাতটা আরও উসকে দেওয়া হয়।’ এরপর ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তৃতীয় শক্তির সাহায্য ছাড়া শান্তি চুক্তি করে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রায় আড়াইশর মত সেনা ক্যাম্প আমরা প্রত্যাহার করেছি। সেখানে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বর্ডার গার্ডের বিওপি তৈরি করেছি, যা আগে কখনো ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাকমা, মারমা ত্রিপুরা ভাষায় যে অক্ষর আছে, আমরা সেই অক্ষরে তাদের নিজস্ব ভাষায় বই ছাপিয়ে দিয়েছি। পাহাড়ে শিক্ষাকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।’ ঢাকার বেইলি রোডে পাবর্ত্য এলাকার মানুষদের জন্য কমপ্লেক্স তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে তাদের জন্য প্রশাসনিক ভবন ডরমেটরিসহ সব করা হবে। ঢাকায় কাজে আসলে সেখানে পার্বত্য এলাকার লোকজন স্বল্পখরচে থাকতে পারবেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেমন ঘরবাড়ি হয় তেমন দৃষ্টিনন্দন হবে এই কমপ্লেক্স।’
তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে যেন মাদক উৎপাদন না হয়। পপির বদলে সেখানে পাহাড়ি ফলের চাষ করুন।’ এসময় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে জানান।
৪০০০তম পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমেই শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন আরেকটি প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলমান প্রকল্পের জনবলকে নতুন প্রকল্পে নিয়ে যাওয়াসহ আরো কর্মসংস্থানের আশ্বাসও দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে তার সরকারের এই উন্নয়নের ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্যই এই নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ পাড়াকেন্দ্র থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিসহ বিভিন্ন সেবা নিশ্চিতে পাড়া কেন্দ্র প্রকল্প শুরু হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে তিন মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। পার্বত্য তিন জেলার ‘সমস্বিত সমাজ উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্প থেকে ৪৮১১টি গ্রামের প্রায় একলাখ ৬৫ হাজার মানুষ এ সেবার আওতায় এসেছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং। মিতিঙ্গাছড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, স্থানীয় এমপি উষাতন তালুকদার, সংরক্ষিত সদস্য সদস্য এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, আইসিডিপি’র প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াছিন।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটির কাপ্তাই ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়িতে স্থানীয় সুবিধাভোগী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। পাড়া কেন্দ্র তৈরি করার ফলে যেসব মা ও শিশুরা উপকৃত হয়েছেন তাদের বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী।
2 Comments
ইলেকসনের সময় আসছে তো? এখন কলা দেখাবে,মলা দেখাবে।
মুখের কথা বিশ্বাস করি না আর,,,,,