ঘটনা-১
রাঙামাটি শহরের আলম ডক ইয়ার্ড এলাকার সরকারি এক কর্মকর্তা রাত আনুমানিক ১০ টার সময় ঘর্মাক্ত শরীরে উদ্বিগ্ন ফ্যাকাশে মুখে পৌর মার্কেটের সামনে এদিক ওদিকে কি যেন খুঁজছেন? সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, শহরে নামী স্কুল পড়ুয়া তার ছেলেকে বিকালে পড়াশুনা নিয়ে বকাবকি করাতে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাননি। ছেলে কিছু বখাটে উঠতি বয়সি সঙ্গীদের সাথে মিশে পড়াশুনায় অমনোযোগী বাইরে ঘনঘন আড্ডা দিতে বের হয় তাই বকা দেয়ায় রাগ করে বের হয়ে গেছে।
ঘটনা ২
শহরের তবলছড়ি এলাকায় এক ব্যবসায়ী এলাকায় কাউন্সিলরকে খুঁজছে। কারণ জানতে চাইলে বললো সমবয়সী পড়ুয়া দু’গ্রুপের ছেলেদের মধ্যে হাতাহাতি ফলশ্রুতিতে থানা পুলিশ এখন বৈঠক করে মীমাংসার জন্য দৌঁড়াদৌঁড়ি বাবার।
ঘটনা ৩
স্কুলে গিয়ে ধুমপান করে ধরা পড়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবককে তলব করেছে বাবা-মা অসহায় ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে স্কুলে হাজির।
ঘটনা ৪
শহরের অভিজাত পরিবারের একমাত্র সন্তান মাদকাসক্ত। পরিবারের সকল সুখ আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে এই এক কারণে। ছেলের কারণে সমাজে আজ তাদের মুখ দেখানো দায়।
এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা এখন রাঙামাটি জেলা শহরে প্রতিনিয়ত ঘটছে। অভিবাবকরা অসহায় নিরূপায়! সন্তানকে নিরাপদে রাখতে সবাই হিমশিম খাচ্ছে। কারণ অলিগলিতে সহজে মাদকের প্রাপ্যতা ও বখাটে টিনেজার ছেলেদের আড্ডা সকাল-বিকাল-রাতভর। কিছুতেই থামছে না কিশোর অপরাধ। উঠতি বয়সী শিশু-কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে মাদক, দখলদারিত্বেরর মতো অপরাধসহ নানা অপরাধের ঘটনায়। এলাকায় বখাটে বাহিনী গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজেদের নানা নামে পরিচয় দিচ্ছে তারা। সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ না থাকা ও পারিবারিক অনুশাসনের অভাবে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা।
বন্ধুদের হাত ধরেও মরণ নেশা মাদকে পা রাখছেন কিশোররা। স্কুল-কলেজ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কিংবা দ্বন্দ্ব মেটাতে শিশু-কিশোররা কয়েকজন মিলে গড়ে তুলছে গ্যাং বাহিনী। প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এবং পাশ্চাত্য ধারা অনুকরণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নস্থানে নিজেদের পরিচয় করছে বিচিত্র সব নামে।
সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, কিশোর অপরাধ দমনে শিশু-কিশোরদের সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের পাশাপাশি পারিবারিক অনুশাসন দরকার। সামাজিক যে টানাপড়েন তৈরি হয়, তারই একতা অংশ গ্যাং কালচার। স্কুল ও পরিবারের মাঝে সেতুবন্ধন থাকা উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, অনেক সময় তারা নামহীন ভাবে ফেসবুক ও অন্যান্য অ্যাপের মাধ্যমে গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মতে, অপরাধ দমনে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করাতে হবে কিশোরদের।
এসব গ্যাং বাহিনী বা কিশোর গ্যাং এর লাগাম টানা না গেলে আরো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কিশোর অপরাধ দমনে আরো কঠোর হতে হবে। সেইসাথে বাবা-মাকে সন্তানের প্রতি আরও যতœবান হতে হবে। তবেই না কমে আসবে কিশোর অপরাধ।
লেখক: ক্রীড়া সংগঠক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট।