শংকর হোড় ॥
নিউ রাঙামাটি রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির কার্যকরি পরিষদের মেয়াদ দ্বিগুণ হওয়ার পরও নতুন পরিষদ গঠন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তিন বছরের কমিটির মেয়াদ প্রায় সাত বছর অতিক্রান্ত করলে নতুন কমিটি গঠনের কোন তোড়জোড় না থাকায় জেলাপ্রশাসকসহ বিভিন্ন অফিসে দ্বারস্থ হয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তবে কোভিডসহ নানান অজুহাতে এখনই কমিটি গঠন করতে না পারার বিষয়টি জানান কমিটির সভাপতি।
গত ১৬ আগস্ট ৩০৩ ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরসম্বলিত একটি আবেদন জেলা প্রশাসক বরাবরে দেয়া হয়। সেই আবেদনে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর সর্বশেষ বাজার সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রায় সাত বছর মেয়াদ পার হলেও নতুন কার্যকরি কমিটি গঠন হয়নি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ১৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কার্যকরি পরিষদ দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটাবে এমন পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়ে নতুন কার্যক্রম শুরু করে। তবে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠে। ব্যবসায়ীদের সাথে বর্তমান কমিটির সভাপতি আনোয়ার মিঞা বানু দুর্ব্যবহার, গায়ে হাত তোলাসহ ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ না করে উল্টো ব্যবসায়ীদের স্বার্থপরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে মামলার হুমকিও দেয় এমন অভিযোগ রয়েছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। বর্তমান পরিষদের কোনও সভা হয় না বলে জানান পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরাই। গত সাত বছরে একবারও সাধারণ সভা আয়োজন করতে পারেনি সমিতির নেতারা। এতে সাধারণ ব্যবসায়ীরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ব্যবসায়ীদের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগের কার্যকরি পরিষদ অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে একটি রুম ভাড়া নিয়ে কমিটির কার্যাবলী পরিচালনা করলেও খরচ কমানোর জন্য বর্তমান পরিষদ সেই অফিস ভাড়া বাতিল করে বর্তমানে কমিটির সভাপতির কার্যালয়টি অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে। রিজার্ভ বাজার এলাকায় একটি জায়গা ক্রয় করে সেখানে বর্তমানে একটি দোকানঘর ভাড়া দেয়। আর দ্বিতীয় তলায় অফিসের জন্য বর্তমানে উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি আবেদন জমা আছে। শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতারা। স্থায়ী অফিসে বর্তমান কমিটির কার্যক্রম স্থানান্তরের পর তখনই নতুন কার্যকরি পরিষদের উদ্যোগ নেয়া হবে এমনটাই চিন্তাভাবনা করছেন বর্তমান পরিষদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থায়ী অফিসের চাইতে আবারো নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কার্যকরি পরিষদ গঠন জরুরি বলে মনে করছেন তারা। গঠনতন্ত্র মোতাবেক তিন বছরের কমিটি প্রায় সাত বছর পার করার এখতিয়ার নেই বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। তবে বর্তমান পরিষদের কেউ কেউ পূর্বের কমিটি মেয়াদ ১২-১৩ বছর পার হওয়ার পর নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসেন।
এদিকে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরি পরিষদের নির্বাচিত তিন সদস্যও নতুন কার্যকরি কমিটি গঠনের পক্ষে ব্যবসায়ীদের যে আবেদন সেখানে তারা স্বাক্ষর দিয়েছেন। তাদেরই একজন সোনা মিয়া। তিনি বর্তমান কার্যকরি কমিটির ১নম্বর নির্বাচিত সদস্য। তিনি বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে বিশ্বাস করে তখন ভোট দিয়েছিল, তখন তাদের আমরা কথা দিয়েছিলাম নতুন কার্যকরি পরিষদ ব্যবসায়ীদের স্বার্থের বিষয়ে কথা বলবে, কিন্তু যতই সময় যায়, ততই আমার ভুল ভাঙ্গে। বর্তমান পরিষদের গঠনের পর আজো তারা একটি সাধারণ সভা দিতে পারেনি, কার্যকরি পরিষদের কোনও সভা হয় না। অফিসের বিষয়ে তারা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এসব আমাদের জানানো হয় না। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোনও কাজ হয় না। তাই আমিও বাধ্য হয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার বিষয়ে স্বাক্ষর দিয়েছি। আশা করছি অচিরেই কার্যকরি পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন পরিষদ গঠন করা হবে।
রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর জব্বার বলেন, ব্যবসায়িক নেতা হিসেবে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বর্তমান পরিষদের মেয়াদ চলে যাওয়ার বিষয়টি বারবার আমাদের কাছে তুলে ধরে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০৩ ব্যবসায়ীর স্বাক্ষর নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে নতুন নির্বাচনের জন্য আবেদন জানাই। আমরা কারো বিষয়ে কোনও অভিযোগ আনেননি, শুধুমাত্র বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কার্যকরি কমিটি গঠনের বিষয়ে আবেদন জানাই। জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি দেখার জন্য সমাজসেবা অফিসকে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো বর্তমান পরিষদের নেতৃবৃন্দ আসার সুযোগ রয়েছে। তাই অতিসত্ত্বর নির্বাচন দেয়া জরুরি।
রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আনোয়ার মিঞা বানু এই বিষয়ে বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সমিতিকে স্থায়ী রূপ দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য বর্তমানে একটি জায়গা ক্রয় করেছি। বর্তমানে সেটি ভাড়া দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় তলায় একটি অফিস তৈরি করা হবে। একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে। এছাড়া যাদের থেকে জায়গা কিনেছি, তাদের টাকা পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারেনি, তাই আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দ্বিতীয় তলায় অফিসরুমটির কাজ শেষ করে এবং বকেয়া টাকা পরিশোধ করে দ্রুতই নতুন কমিটির গঠনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এখানে আমাদের কোনও লাভ নেই, শুধুমাত্র সমিতির কার্যক্রমকে স্থায়ী রূপ দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ। এছাড়া দুই বছর করোনার কারণে সমিতির কার্যক্রম চালাতে না পারায় নতুন কমিটি গঠনের সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে তিনি জানান। এছাড়া ব্যবসায়ীদের মারধর ও দুর্ব্যবহার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোনও ব্যবসায়ীর গায়ে হাত তুলিনি। প্রশাসন থেকে চিঠি পাওয়ার পর রাস্তা ঠিক রাখার জন্য বলতে গিয়ে উল্টো আমাকে আঘাত করা হয়েছে। এই ধরনের অভিযোগ ভুয়া ও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।