শ্যামল রুদ্র, রামগড় ॥
খাগড়াছড়ির ভারত সীমান্তসংলগ্ন রামগড় উপজেলা ও এর আশপাশের পার্বত্য গ্রামীণ জনপদে স্কুল কলেজগামী কিশোর তরুণসহ নানা বয়সী লোকজনের মধ্যে মাদক গ্রহণ ও পাচারপ্রবণতা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এতে অভিভাবকমহল ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা তাদের সন্তানদের এই মরণনেশার ছোবল থেকে বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশের সত্যিকারের সক্রিয়তা চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, মাদক সংক্রান্ত খবরাখবর এলাকাবাসী আমাকে বিভিন্ন সময় জানান। এগুলো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে বলেছি। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক প্রতিটি সভায় বিষয়টি উঠে আসে। রামগড় একনম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মজুমদার বলেন, প্রতিটি বৈঠকে মাদক প্রতিরোধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কথা বলা হলেও কাজে কিছুই হচ্ছে না। দিন দিন যেন মাদক বেড়েই চলছে এলাকায়। বলা যায় মাদকের স্বর্গরাজ্য এখন রামগড়।
রামগড় ৪৩, বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ারুল মাযহার বলেন, রামগড় সীমান্ত হয়ে মাদক পাচারের বিষয়ে বিজিবির অবগত। এ অশুভ তৎপরতা বন্ধে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি।
সরেজমিন ঘুরে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামগড় সীমান্তের বিভিন্ন হাটবাজারে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাইমদসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্য অবাধে বিক্রি হয়। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ফেনসিডিল, ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, গাঁজা এবং দেশি চোলাইমদ এখানে খুবই সহজলভ্য। রামগড় ও এর আশপাশের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য পাওয়া যায়।
রামগড় এক নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম মজুমদার আরও বলেন, সাংগঠনিকভাবে একতাবদ্ধ হয়ে মাদকসেবীদের প্রতিহত করা না হলে এই মরণ নেশায় এলাকার যুব সমাজ ধংস হয়ে যাবে। রামগড় সীমান্ত এলাকায় অসংখ্য মাদকসেবীর আস্তানার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে যেন এ সংখ্যা বাড়ছে। এদের এখনি প্রতিরোধ করা না হলে মাদক নামক বিষবৃক্ষ একসময় ডাল পালা মেলে মহীরুহে পরিণত হবে। মাদকের অপব্যবহার রোধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তিনি।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে একশ্রেণির বখাটে এসব অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত, তবে এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন খুবই সজাগ। মাদকসেবী সন্দেহভাজন তরুণদের কর্মকান্ডের ওপর নজর রাখা হয়েছে। মাদক পাচার ও মাদক সেবনের খবর পেলেই তাদের আটক করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া আছে বলে তিনি জানান।
সূত্র জানায়, রামগড়ের মহামুনি, সোনাইপুল, দারোগাপাড়া, ফেনীরকূল, আনন্দপাড়া, আবাসিকএলাকা, পর্যটন এলাকা, জগন্নাথপাড়া, বল্টুরাম, গর্জনতলী, সিনেমা হল এলাকা, মাস্টারপাড়া, চৌধুরিপাড়া, তৈচালা, লালছড়ি, লামকুপাড়া, খাগড়াবিল, গার্ডপাড়া, বাংলাবাজার, বাগানবাজার, বাঘমারা, বড়বিল, চিকনছড়া, হেঁয়াকো, বালুটিলা, আমতলা, কয়লামুখ, জালিয়া পাড়া, নাকাপা প্রভৃতি এলাকায় মাদকসেবীদের দৌরাতœ্য সবচেয়ে বেশি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রামগড় এলাকার অভিজাত পরিবারের সন্তানেরাও মাদকসেবীদের সাহচর্যে এসে মারাত্মকভাবে নেশার জগতে ঢুকে পড়ছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হতাশা গ্রস্থ অভিভাবকেরা জানান, বহু চেষ্টার পরও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যাচ্ছে না।
সম্প্রীতি খবর পেয়ে এই প্রতিনিধি ও অন্য একজন সংবাদকর্মী রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান, পেছনের সীমানা প্রাচীরের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা অসংখ্য ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে রয়েছে। প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, নেশার সিরাপ খেয়ে খালি বোতল ছুড়ে ফেলে বিদ্যালয়ের ভেতর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সন্ধ্যার পর বিদ্যালয়ের সামনের খোলা অংশে স্থাপিত শহীদ মিনার এলাকায় মাদকসেবীদের আনাগোনা লক্ষণীয়। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না।