অস্থায়ী ক্যাম্পাসে গত তিনবছর কার্যক্রম চালাতে থাকে দেশের সবচে নবীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একের পর এক শাস্তি,নানা পদক্ষেপে বিপর্যস্ত এক শিক্ষাথী, ‘আত্মহত্যার হুমকি’ দিয়েছেন।
হুমকি দেয়া এই শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম শুরুর দাবিতে গড়ে উঠা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান বাপ্পী।
শহরের একটি স্কুলের শ্রেণী কক্ষে কার্যক্রম চালানো এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টরিয়াল বডির জারি করা এক শোকজের জবাবে বাপ্পী নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং সর্বশেষ লিখেন-‘ একের পর এক কারণ দর্শানো নোটিশ আমাকে আর আমার শিক্ষা জীবনকেই অনিশ্চিত করে তুলেছে,এমতাবস্থায় সম্মানীত প্রক্টরিয়াল বডি আপনারা আমার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবেনা আমার।’
এর আগে এই বছরেরই ২৩ ফেব্রুয়ারি তুচ্ছ একটি কারণের জের ধরে শামসুজ্জামান বাপ্পীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং ছাত্রাবাস থেকে বহি:ষ্কার করা হয়,যা গত ছয়মাস ধরেই অব্যাহত আছে। শুধুমাত্র ক্লাস করা ও পরীক্ষায় অংশ নেয়া ছাড়া আর কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না বাপ্পী।
দফায় দফায় কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়া বাপ্পী প্রতিবারই নোটিশের জবাব দিয়েছেন,ক্ষমাও চেয়েছেন এবং একই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বারবার শোকজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নিজের দেয়া সর্বশেষ জবাবে। চিঠিতে বাপ্পী লিখেছেন- ‘ একবার এক মামলায় শাস্তি দেয়ার পর আবারও সেই একই মামলায় একই আদালতে শাস্তি দেয়াটা কোন আদালতেও এখন পর্যন্ত হয়নি বা বাংলাদেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এইরকম একই অভিযোগে দুইবার শাস্তি দেয়ার নজির নেই।’
সর্বশেষ রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িকী গিরিলহর এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানকে স্বীকার না করা এবং বঙ্গবন্ধুর কোন নাম উল্লেখ না থাকার ঘটনার প্রতিবাদ করার পর কর্তৃপক্ষ সাময়িকীর প্রকাশনা বাতিল করে এর বিতরণ ও প্রচার বন্ধ করে দেয়। এই সাময়িকী নিয়ে প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ করেন বাপ্পী। এর কদিন পরই সর্বশেষ ৬ আগষ্ট ‘ আরো কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন’ এমন অভিযোগ আবারো শোকজ করা হয় বাপ্পীকে। এই শোকজের জবাবেই বাপ্পী আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে লিখেছে- ‘‘একদিন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে বিশ্ববিদ্যালয় বলে কিছু পাইনি,শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাসা ভাড়া নিয়ে থেকেছি,সারাদেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে একত্রিত করে আন্দোলন করেছি ক্লাশ আর ক্যাম্পাসের দাবিতে, নিয়তির কি নির্মম পরিহাস,সেই ক্যাম্পাস ঠিকই চালু হলো,কিন্তু আমিই হল থেকে,বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ থেকে বহিষ্কৃত হলাম।’
এই জবাবের পর বাপ্পীর পিতাকে মাতাকেও ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়ে রাঙামাটি আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু সুদূর ময়মনসিংহের গৌরিপর থেকে অসুস্থ বাপ্পীর পিতা আসতে না পারায়,বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরতি এক চিঠি ছেলের হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তার সন্তানের শিক্ষাজীবন স্বাভাবিক রাখতে তার উপর জারি করা শাস্তি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে শামসুজ্জামান বাপ্পী পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম কে বলেন, আমি যদি অপরাধ করি সেটার শাস্তি তো তারা আমাকে দিয়েছে,কিন্তু সামান্য অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে কঠোর শাস্তি দিয়েছে,শুধু তাই নয়,একই অভিযোগে একাধিকবার শাস্তি ও শোকজ করেছে। সর্বশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানকে অস্বীকার করার প্রতিবাদ করায় তারা আমার উপর ক্ষুদ্ধ । কিন্তু তারা নিজেরা ভুল করেছে সেটা মেনে নিয়ে সাময়িকী তো প্রত্যাহার করেছে,তবে আমার উপর খরগ কেনো ? ’ বাপ্পী অভিযোগ করেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ শুরুর জন্য আন্দোলন করায় আঞ্চলিক কয়েকটি দল আমার উপর ক্ষুদ্ধ, তারা বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকিও দিয়েছে। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় হলের বাইরে শংকায় জীবন কাটাচ্ছি,আমার কিছু হলে এর দায় কে নেবে ? আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমার শিক্ষাজীবনকে কারাগারে বন্দীদের মতো করে দিয়েছে,তা প্রত্যাহার না করলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।’
ভয়, উদ্বেগ আর আতংকে থাকা বাপ্পীর অন্তত: ৫ জন সহপাঠি নাম প্রকাশ না করেই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই/তিন শীর্ষ ব্যক্তি বাপ্পীর উপর নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। কেউ যেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলতে না পারে,বাপ্পীর উপর শাস্তি আরোপ করে অন্যদেরও ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থান বক্তব্য জানার জন্য রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ত্রিবেনি চাকমার মুঠোফোনে সোমবার একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
7 Comments
একটা পাবলিক ভার্সিটির শিক্ষার্থীর এই করুণ অবস্থা!???
এটা ঠিক না,এমন হওয়া উচিত না!!
যেমন কর্ম তেমন ফল…..বেয়াদব…
আপনার ব্যবহারে বলে দিচ্ছে প্রকৃত বেয়াদব কে?
তুমি কিছু না জেনে এত তাফালিং করছো কেন?Md Sahed Khan
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নিতী দমন আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে মামলা হওয়া উচিত।
চোদমারানির পোলারে চাদের উপর থেকে লাথি মেরে ফেলো