রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা ‘গিরিলহর’ এর বিতরণ ও প্রচার বন্ধ করা হয়েছে জানিয়ে প্রকাশনাটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ‘দু:খপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা’ করেছেন সাময়িকীটির সম্পাদন পর্ষদের আহ্বায়ক নিশু নাথ ও সম্পাদক এম কামরুল ইসলাম শারেক।
পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ‘মুদ্রনজনিত ত্রুটি,অবিবেচনাপ্রসূত তথ্য এবং অনিচ্ছাকৃত ভুল তথ্য পরিবেশনের দায় স্বীকার করে করে ক্ষমা চেয়েছেন তারা।
বুধবার প্রকাশনাটির সম্পাদনা পর্ষদের আহ্বায়ক ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এর প্রভাষক নিশু নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব খামে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন ‘ আপনার জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে,অতি সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ও ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থীবৃন্দ কর্তৃক প্রকাশিত ‘গিরিলহর’ সাময়িকীতে কিছু ভুল তথ্য,মুদ্রনজনিত বিভ্রাটসহ অবিবেচনা প্রসূত তথ্য পরিবেশনের কারণে প্রকাশনার বিতরণ ও প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। এরূপ মুদ্রনজনিত ত্রুটি এবং অনিচ্চাকৃত ভুল তথ্য পরিবেশনের কারণে সাময়িকীটির সম্পাদনা পর্ষদ আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছে। উল্লেখ্য,রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কোনভাবেই সাময়িকী প্রকাশনার দায়িত্ব বহন করেনা।’
এর একদিন আগে মঙ্গলবার পাঠানো পৃথক এক বিবৃতিতে সাময়িকীটির সম্পাদক এম কামরুল ইসলাম শারেক বলেন, ‘মুদ্রনজনিত বিভ্রাটসহ অনিচ্ছাকৃত এরূপ ত্রুটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের পক্ষ থেকে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং ভবিষ্যতে এহেন ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পূর্ণ আশ্বাস প্রদান করছি।’
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাইফুল আলম রাশেদ ও সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের আল্টিমেটামের সময়সীমার মধ্যেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ‘দু:খপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করায়’ আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে ভবিষ্যতে যেনো একই ধরণের ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিচ্ছি। আশা করছি,বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে নিজেদের প্রথম প্রকাশনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান,জননেতা দীপংকর তালুকদারসহ স্থানীয়দের ভূমিকার বিষয়টি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ ও ‘গিরিলহর’ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। কিন্তু প্রকাশনাটি প্রকাশের দিন রাতেই পাহাড়টোয়েন্টিফোর এবং পরদিন দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম-এ ‘প্রধানমন্ত্রীর অবদানকে মনে রাখলো না রাবিপ্রবি’শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হলে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে স্ধানীয়রা।
প্রকাশনা হাতে পেয়েই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় সাধারন শিক্ষার্থী,রাঙামাটির বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবং কক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সহ যুবলীগ,ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির বাস্তবায়নে আন্দোলন করা সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সাময়িকীটির কোথাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কোন ইতিহাস না থাকা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম কোথাও না থাকা, চ্যান্সেলর,ইউজিসি চেয়ারম্যানের বাণী না থাকায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় সকলেই।
এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয় জেলা ছাত্রলীগ। তবে ভিসির প্রকাশনাটি প্রত্যাহার করার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচী স্থগিত করে ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং প্রকাশনাটি প্রত্যাহার করতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের পক্ষে ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন ও সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমা। এই আল্টিমেটামের সময়সীমার মধ্যেই বুধবার প্রকাশনাটির বিতরণ ও প্রচার বন্ধ করলো পাহাড়ের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি।