খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে রাতের আঁধারে চোরাই পথে আনা হচ্ছে ভারতীয় গরু। ফলে স্থানীয় বাজারে গরুর মূল্য কম হওয়ায় স্থানীয় গরু পালনকারীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় গরু লালন-পালনের আগ্রহ হারাচ্ছেন স্থানীয়রা।
প্রায় রাতে ১৫-২৫টি গরু চোরাইপথে আসার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছিল। এমন সংবাদের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে তার সত্যতাও মিলে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসংখ্য গরু চোরাইপথে আনার পেছনে স্থানীয় একটি শক্তিশালি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর এসব গরু স্থানীয় বাজারে কম মূল্যে বিক্রি হওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় গরু বিক্রেতারা।
জানা যায়, ভারত সীমান্তবর্তী দীঘিনালা উপজেলার নাড়াইছড়ি সীমান্ত এলাকার কোন পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত গরু আনা হয়। নাড়াইছড়ি সীমান্ত এলাকা থেকে বাবুছড়া এলাকা পর্যন্ত পাহাড়ি সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা। সে কারণে ভারত থেকে গরু পার করে নাড়াইছড়ি দিয়ে বাবুছড়া পর্যন্ত নিয়ে আসে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের একটি চক্র। এর পর বাবুছড়া থেকে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাত পর্যন্ত পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে বাঙালি সম্প্রদায়ের অপর একটি চক্র।
মঙ্গলবার রাতে গরু আসার সংবাদ পেয়ে বাবুছড়ার পথ ধরে রওয়ানা করে বড়াদম এলাকায় গিয়ে মুল পাকা সড়কেই দেখা যায় একদল গরু নিয়ে আসছেন দুই বাঙালি যুবক। ছবি তোলা এবং ভিডিও করার সময় এক যুবক নিজের নাম পরিচয় না দিয়ে কৌশলে দূরে সরে যায়। অপর যুবক নিজের নাম মো. আবু সৈয়দ দাবি করে ১৬টি গরু নিয়ে আসছেন বলে জানায়। এ গরুগুলো ভারতীয় গরু স্বীকার করে সৈয়দ বলেন, ‘ইন্ডিয়ার গরু সীমান্ত পার করে নাড়াইছড়ি থেকে বাবুছড়া পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে পাহাড়ি ছেলেরা। আমরা বাবুছড়া থেকে নিয়ে যাচ্ছি।’ তারা দুই যুবক শ্রমিক হিসেবে গরু নিয়ে যাচ্ছেন এবং গরুগুলোর মালিক জনৈক সোলেমান বলে জানান সৈয়দ।
জানতে চাইলে উপজেলার বোয়ালখালি পুরাতন বাজার এলাকার সোলেমান (৪০) নিজেকে গরু ব্যবসায়ি পরিচয় দিয়ে জানান, নাড়াইছড়ি সীমান্ত এলাকার পাহাড়িরা এসব গরু এনে তাদের নিকট বিক্রয় করে। সেদিন সৈয়দে আনা গরুগুলো তার ছিল বলেও স্বীকার করেন। সোলেমানের দাবি, তিনি একা গরু কিনেন না, এরকম গরু আরো অনেকে কিনে ব্যবসা করছেন।
উপজেলার কালাচাঁদ মহাজন পাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত চাকমা (৩৫) জানান, কিছুদিন আগেও বাড়িতে ক্রেতা এসে তার একটি গরুর মূল্য বলেছিল ৭৫হাজার টাকা। কিন্তু সম্প্রতি সেটি বাজারে নিয়ে বিক্রয় করেছেন মাত্র ৫৯হাজার টাকায়। ভারতীয় গরু আসার কারণে গরুর মূল্য কমে গেছে বলে তিনিও লোকমুখে শুনেছেন বলে দাবি করেছেন সুশান্ত।
এ ব্যাপারে দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব জানান, চোরাইপথে ভারতীয় গরু আসার সংবাদ তিনিও শুনেছেন এবং চোরাই চক্রটি হাতেনাতে ধরার জন্য পুলিশি চেষ্টা চালাচ্ছে।