রাঙামাটিলিড

রাঙামাটি ও বান্দরবানে আটকা ম্যালেরিয়ামুক্ত দেশ

(সূত্র: দেশ রূপান্তর)

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবান। ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩ জেলার মধ্যে ১১ জেলায় রোগটি প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে। এসব জেলায় ম্যালেরিয়ার পরিমাপক এপিআই (অ্যানুয়াল পারাসাইট ইনডেক্স) অনেক আগেই ১ পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে। এর অর্থ হলো এসব জেলায় ম্যালেরিয়া প্রায় শূন্যের পথে। কেবল এই দুই পার্বত্য জেলায় এই ইনডেক্স ১ পয়েন্টের ওপরে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে এপিআই ১ পয়েন্ট ৮৬, অর্থাৎ এটার এপিআই-ও ১-এর কাছে। শুধু বান্দরবানেই এপিআই সবচেয়ে বেশি ৬ পয়েন্ট ৮৬।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী, কোনো এলাকায় পরপর তিন বছর যদি ম্যালেরিয়ার স্থানীয় সংক্রমণ না থাকে, তখন সেই এলাকাকে ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণা করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১১ জেলার ৭২ উপজেলার মধ্যে কমপক্ষে ৩০-৩৫ উপজেলায় কোনো ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতে এপিআই ১ পয়েন্টের নিচে বা ম্যালেরিয়া শূন্যের পথে এবং এসব রোগী স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত নন। বাকি ৫১ জেলা আগে থেকেই ম্যালেরিয়ামুক্ত। ফলে শুধু রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের কারণে ম্যালেরিয়ামুক্ত স্বীকৃতি চাইতে পারছে না বাংলাদেশ।

এমন অবস্থায় সরকার জেলা ও উপজেলাভিত্তিক ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। পরে পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলোকে ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণা করা হবে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলে বাংলাদেশ বেশ সফল। নিঃসন্দেহে এটা খুবই ভালো অর্জন। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি এবং অন্য সহযোগীরা ইতিমধ্যেই ২০৩০ সালের ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। সরকার সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ) ডা. ইকরামুল হক বলেন, এখনো দেশকে ম্যালেরিয়া শূন্য ঘোষণা করা যায়নি। কিন্তু আশা করছি শিগগির ঘোষণা করা যাবে। ঘোষণার জন্য জয়েন্ট মনিটরিং ভিজিট হয়। সেটার মাধ্যমে ডিক্লারেশন দেওয়া হয়। সামনে এরকম কয়েকটি ভিজিট আছে। তারপরও আশা করছি ঘোষণা করতে পারব।

এই কর্মকর্তা বলেন, আগামী মে মাসে একটা জয়েন্ট মনিটরিং মিশন হবে। সারা বিশ্বের ম্যালেরিয়া রোগ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পাঁচ বছর পরপর এই মিশন করা হয়। সেই মিশনে আমরা কীভাবে পর্যায়ক্রমিকভাবে নির্মূল ঘোষণা করতে পারি, সেটার অফিশিয়াল উদ্যোগ গ্রহণ করছি। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করার পর একসময় আমরা গোটা দেশ ম্যালেরিয়া নির্মূল ঘোষণা করব। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘোষণা দেওয়া হলো যারা ম্যালেরিয়া নির্মূলে কাজ করছেন, তারাও কাজে উৎসাহিত হবেন।

তবে বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সরকার যে পদ্ধতিতে কাজ করছে, তার সঙ্গে আরও কিছু পদ্ধতি যুক্ত করতে হবে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটা টার্গেট আছে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণা করার। সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে, যে প্রক্রিয়াতে এখন ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বিশেষ করে মশারি বিতরণ করে, শুধু এই একটা পদ্ধতিতে হবে না। আরও কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। ম্যালেরিয়ার যে ওষুধ, সেটাও রোগ প্রতিরোধী হয়ে গেছে। নতুন ওষুধের সন্ধান করতে হবে। তা ছাড়া মশারি ব্যবহারের নিয়মেও পরিবর্তন করতে হবে।

মূল বাধা রাঙামাটি ও বান্দরবান : ড. ইকরামুল হক বলেন, এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো বান্দরবান ও রাঙামাটি। ম্যালেরিয়া পরিমাপকের স্কেল আছে এপিআই (অ্যানুয়াল পারাসাইট ইনডেক্স), এটা একটা সূচক। এই সূচক দিয়ে আমরা এই রোগের মাত্রা ও সংক্রমণ কোন পর্যায়ে আছে, সেটা পরিমাপ করি। এই ইনডেক্সের মান যদি ১-এর নিচে থাকে, তখন আমরা একটা জেলা বা দেশকে বলি যে ম্যালেরিয়া নির্মূল বা শূন্যের পর্যায়ে আছে।

এই কর্মকর্তা জানান, দেশে ১১টা জেলার এপিআই ১-এর নিচে আছে। শুধু ২টা জেলায় এপিআই ১-এর ওপরে। এই ১১ জেলা হলোময়মনসিংহ জোনে ৪টি জেলাময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর। সিলেট জোনে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলবীবাজার ও সুনামগঞ্জ। এই আটটি জেলায় ম্যালেরিয়া একেবারেই শূন্যের কোঠায়। এসব জেলায় বছরে দুই-একটা রোগী পাওয়া যায়, তাও সেগুলো অন্য জেলা থেকে আসা। এরপর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতেও এপিআই ১-এর নিচে।

বাকি দুটি জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানে এপিআই ১-এর ওপরে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে এপিআই ১ পয়েন্ট ৮৬, অর্থাৎ এটার এপিআই-ও ১ এর কাছে। শুধু বান্দরবানেই এপিআই সবচেয়ে বেশি ৬ পয়েন্ট ৮৬।

এই কর্মকর্তা বলেন, বেশি চ্যালেঞ্জ রাঙামাটি ও বান্দরবান নিয়ে। ওখানে যারা গহিন বনে কাজ করে, সেখান থেকে ওই মানুষরা এই রোগটা বহন করে আনে। এই দুই জেলায় ম্যালেরিয়া নির্মূলের চ্যালেঞ্জ অনেক বছর ধরেই। আমরা যেটা করি, এই গ্রুপের মধ্যে যাদের ম্যালেরিয়া হয়, তাদের টার্গেট করে নানা ধরনের কর্মসূচি নিই। যে কারণে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন।

১১ জেলায় ম্যালেরিয়া শূন্যের পথে : ডা. ইকরামুল হক বলেন, দেশের ১৩ জেলার ৭২টি উপজেলাকে ম্যালেরিয়া অধ্যুষিত বলি। এই ১৩ জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় ম্যালেরিয়া প্রায় শূন্যের পথে। এখন শুধু দুই পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ রয়েছে। দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৮৫ শতাংশই এই দুই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে। অন্যান্য জেলায় যে রোগী, সেগুলো ইমপোর্টেড অর্থাৎ বাইরে থেকে আসা, স্থানীয় সংক্রমণ নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাকি ৫১ জেলায় ম্যালেরিয়া নেই। এসব জেলাকে এন্ডেমিক বা স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমিত জেলা বলে। এই জেলাগুলোকে নন-এন্ডেমিক বা ম্যালেরিয়ামুক্ত জেলা বলা হয়। ১১ জেলায় ম্যালেরিয়া শূন্যের কোঠায়। এসব জেলায় খুবই সামান্য দুই-একটা রোগী আছে, যারা অন্য জেলা থেকে ইমপোর্টেড, স্থানীয় সংক্রমণ নয়।

১৩ বছরে রোগী কমেছে ৯৪ শতাংশ ও মৃত্যু ৯০ শতাংশ : অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত ২০০৮-২০২১ সালে দেশে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ও ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ম্যালেরিয়াজনিত অসুস্থতা শতকরা ৯৪ ভাগ এবং মৃত্যু শতকরা ৯০ ভাগ কমেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মোট ম্যালেরিয়া রোগী ছিল ৭,২৯৪ জন ও মৃত্যুবরণ করেছে ১ জন। উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ তিন পার্বত্য জেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৪% পাওয়া গেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই জেলাগুলোতে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির পক্ষ থেকে ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১২.৭ মিলিয়নের বেশি দীর্ঘমেয়াদি কীটনাশকযুক্ত মশারি বিনামূলো বিতরণ করা হয়েছে।

নির্মূলে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ : বিশেষজ্ঞরা বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যত ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যায়, তার ৮৩ শতাংশ রোগী ভারতে। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বিশ্বের অন্য দেশের মতো এত বেশি নয়। এ ব্যাপারে ডা. ইকরামুল হক বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে। ম্যালেরিয়ার খুব কার্যকর একটা ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে। গ্লোবাল ফান্ড, গ্যাভি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে চেষ্টা করছে কীভাবে এই ভ্যাকসিন অনুন্নত দেশ বা উন্নয়নশীল দেশে পাঠানো যায়। আমরাও আশা করছি এটা পাব। সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়ার কাজ চলছে। তাহলে ইনফেকশনাল ডিজিজ প্রতিরোধে ট্রান্সমিশন সাইকেল ব্রেক করা। সংক্রমণকে থামিয়ে দেওয়া। আমরা যদি এই ভ্যাকসিন ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের জেলাগুলোতে দিতে পারি, তা হলে অন্যান্য সংক্রমিত ব্যাধির মতো ম্যালেরিয়াও একসময় বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে। ম্যালেরিয়া সংক্রামক ব্যাধি। কিন্তু এটা ছড়ায় বাহকের মাধ্যমে, অর্থাৎ মশার মাধ্যমে বাহকবাহী রোগ।

ম্যালেরিয়ামুক্ত ঘোষণা যেভাবে : ডা. ইকরামুল হক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কতগুলো সূচক আছে। সেগুলো যদি পূরণ করতে পারি, তাহলে তারা আমাদের নির্মূলের সনদ দেবে। নির্মূল ঘোষণার স্বীকৃতির মানদ- হলো শেষ তিন বছরে একটি জেলায় বা কোনো উপজেলায় সংক্রমণ শূন্য থাকা। অর্থাৎ স্থানীয় সংক্রমণ যদি শেষ তিন বছরে না থাকে বা জিরো হয়, তখন আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বলতে পারি এই জেলা ম্যালেরিয়া শূন্য। ইতিমধ্যে এই ৭২টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৩০-৩৫ উপজেলায় শেষ তিন বছরে কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। সুতরাং এই জেলাগুলোকে আমরা ম্যালেরিয়াশূন্য বলতে পারি। আমরা জেলা ও উপজেলাভিত্তিক পর্যায়ক্রমে নির্মূল ঘোষণা করতে চাই।

যেভাবে সফলতার পথে বাংলাদেশ : ডা. ইকরামুল হক বলেন, ম্যালেরিয়া যেভাবে নির্মূল করছে বাংলাদেশ, সেটা অবশ্যই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর জন্যও মডেল হতে পারে। সারা বিশ্বের মধ্যে আফ্রিকার দেশগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। তারা যদি আমাদের মডেল অনুসরণ করে, আমরা মনে করি তাদের জন্য খুবই ইতিবাচক হবে।

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে এই কর্মকর্তা বলেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৮৫ শতাংশ রোগ শনাক্ত করি। এরপর তাদের ওষুধ দিই ও ওষুধ ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, ফলোআপ করি। এর পাশাপাশি কীটনাশকযুক্ত দীর্ঘস্থায়ী মশারি (লং লাস্টিং ইনসেক্টিসাইড ইমপ্রেগনেটেড নেট) দিই। এটা আমরা বিনামূল্যে দিই। ১৩ জেলায় প্রত্যেকের কাছে এই মশারি পৌঁছে গেছে ও তারা ব্যবহার করছে। এই মশারির গায়ে মশা লাগলে ওই মশা মারা যায়।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেসব এন্ডেমিক জোন, সেসব এলাকায় কোনো জ্বরের রোগী আসে, তারা যদি স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান, সেখানে জ্বরের পাশাপাশি ম্যালেরিয়া পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষার জন্য যে সøাইড দরকার হয়, সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে।

নতুন পদ্ধতি যুক্ত করার পরামর্শ : অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, দেশের ১৩ জেলার ৭২ উপজেলায় ম্যালেরিয়া আছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগ কাজ করছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে যেখানে সংকট দেখছি, সেটা হলো কীটনাশকযুক্ত মশারি নিয়ে। আমি নিজে তিন পার্বত্য জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে ফিল্ড ওয়ার্ক করে দেখেছি, এখানে মশারি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু ইউনিয়ন, যেগুলো খুবই দুর্গম অঞ্চল, সেখানে তারপরও ম্যালেরিয়ার রোগী অনেক বেশি। কারণ হলো এসব এলাকার যে মানুষ বনে যায় ও বনের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে, তারা বনে গিয়ে চার-পাঁচ দিন থাকে, কাঠ কাটে। এসময় তারা মশারি ব্যবহার করতে পারে না। বনে তখন তারা মশার কামড় খায় ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এভাবে তারা বন থেকে ম্যালেরিয়া এনে এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। তাই মশারির পাশাপাশি এসব জনগোষ্ঠীকে যদি সরকার বিনামূল্যে মশানিরোধক ক্রিম দেয় এবং সেগুলো শরীরে মেখে তারা যদি বনে কাঠ কাটতে যায়, তাহলে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মশারি ব্যবহারের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে বলেও পরামর্শ দেন এই কীটতত্ত্ববিদ। তিনি বলেন, একটা মশারি ২০ বার ধোয়ার পরে এবং মশারি যদি অনেক দিন না ধোয়া হয়, তাহলে সেই মশারির কার্যকারিতা কমে যায়। তখন মশারির কীটনাশক কাজ করে না। তাই ২০ বার ধোয়ার পর তাদের নতুন মশারি দিতে হবে।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 4 =

Back to top button