রাঙামাটি জেলায় পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা সড়ক স্থায়ীভাবে মেরামতের জন্য বড় পরিকল্পনা নিতে চলেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ৩০টি স্থানে মেরামত কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি স্থায়ী সংস্কারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করা হবে। সওজের উচ্চপর্যায়ের একটি টিম সরেজমিন জরিপ শুরু করবে। জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী তিন মাসের মধ্যে ডিপিপি জমা দেয়া হবে। বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধসে ক্ষতি থেকে সড়ক সুরক্ষায় বিশেষায়িত প্রযুক্তির ব্যবহার হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি সড়ক বিভাগের অধীন মোট আঞ্চলিক সড়ক ২৪২ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে সওজের আওতাধীন (রাউজান রাবার বাগান থেকে রাঙামাটি ডিসি বাংলো পর্যন্ত) সড়ক মাত্র ৩৭ কিলোমিটার। ২৪ ফুট চওড়া সড়কটি পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে নির্মিত হওয়ায় ভারি বর্ষণে ঝুঁকিতে থাকে। সর্বশেষ ১৩ জুন টানা বৃষ্টিতে সাপছড়ি এলাকায় পাহাড়ি সড়ক ধসে পড়লে সারা দেশের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত বুধবার প্রাথমিকভাবে সড়ক যোগাযোগ চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ১২ ফুট চওড়া বিকল্প সড়কে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। ধসে পড়া সড়কের স্থলে ১৬০ ফুটের একটি বেইলি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বেইলি সেতুর নকশাও তৈরি করেছেন সওজের প্রকৌশলীরা। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সেতু নির্মাণ হলে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কটি উন্মুক্ত করা হবে।
জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার সড়ক যোগাযোগ মেরামত ও ঝুঁকিমুক্ত করতে স্থায়ী মেরামতের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সওজের সড়ক ও সেতু ডিজাইন বিভাগের দুই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও রাঙামাটি সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করবেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত ডিপিপি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সওজের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে সওজের রোড ডিজাইন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল করিম বলেন, রাঙামাটির সড়কগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো। পাহাড়ের ওপর সাবেকি পদ্ধতিতে এসব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড় ধসের পর আমরা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর স্থায়ী সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখে থাকা সড়ক গ্র্যাভিটি ওয়াল, পিলারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে স্থায়ীভাবে মেরামতের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে এসব সড়ক মেরামতের মাধ্যমে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ ঝুঁকিমুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
সওজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২১ জুন সকালে রাঙামাটির বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও জনপথ বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক, সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, সওজের সড়ক ডিজাইন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল করিম ও সেতু ডিজাইন বিভাগের রেজাউল আলম। এখন সওজের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নিয়ে গঠিত একটি টিম ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পরিদর্শন করবে। এর পর সওজের বিশেষজ্ঞ দলের দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি ডিপিপি তৈরি করা হবে।
সওজ রাঙামাটি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে রাঙামাটির ২০টি বেইলি সেতু ও একটি কালভার্টের স্থলে স্থায়ী আরসিসি সেতু নির্মাণে ১৫৭ কোটি টাকার একটি ডিপিপি তৈরির কাজ শেষের পথে রয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়কের আওতায় নির্মিত জেলার ২০৫ কিলোমিটার সড়কের প্রশস্ততা ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুটে উন্নীতকরণের একটি প্রস্তাবও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া রাঙামাটি জেলার প্রায় ২০টি পুরনো আরসিসি সেতু মেরামত ও পুনঃস্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন জানিয়েছেন, ১৩ জুন ধসে পড়া সড়কের স্থলে একটি নতুন বেইলি সেতু নির্মাণ করা হবে। এ-সংক্রান্ত একটি নকশা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ২২টি সড়ক ছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ আরো আটটি সড়কের স্থায়ী মেরামতের বড় পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি পার্বত্য জেলার সড়ক যোগাযোগ আধুনিকায়নে একটি মহাপরিকল্পনাও হাতে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাঙামাটিসহ পার্বত্য জেলাগুলোর অধিকাংশ সড়ক পাহাড় কেটে কিংবা পাহাড়ের ঢালের ওপর নির্মিত। দুটি পাহাড়কে সংযুক্ত করতে বেশির ভাগ স্থানে বেইলি সেতু স্থাপন করা হয়। এছাড়া ছোট পরিসরে কিছু কালভার্ট কিংবা আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পাহাড় কাটা, গাছপালা নিধনের ফলে সড়ক-সংলগ্ন অধিকাংশ পাহাড়ের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া পার্বত্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব নয়। রাঙামাটিসহ পার্বত্য তিন জেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোকে প্রশস্তকরণের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বর্ধিত করা হবে। এজন্য স্থানীয়ভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সওজের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, ১৩ জুন বৃষ্টিপাত ও পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের ৬১তম কিলোমিটার ঘাগড়া সাপছড়ি এলাকায় ১০০ মিটার পাহাড়ি সড়ক ২০০-৩০০ ফুট নিচে ভেঙে পড়ে। এর পর থেকেই চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দুদিন পর সড়কটি পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হলেও বিরূপ পরিস্থিতির কারণে তা বিলম্বিত হয়। পরবর্তীতে পাহাড়ের নিচ দিয়ে ১৫-১৮ ফুট প্রশস্ত একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ২২টি স্পটে মোট ১ হাজার ৩০০ মিটার সড়ক বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্পটের প্রাথমিক মেরামতে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ১০০ মিটার রাস্তা তৈরিতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। সব মিলিয়ে ২৩টি স্পটের সড়ক সংস্কার ও নির্মাণকাজে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন।
2 Comments
স্যালুট
সড়কের কাজে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করলে কাজের মান ও গতি বাড়বে আমার বিশ্বা স,,,,,।