রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পার্বত্য চট্টগ্রামের অঘোষিত প্রশাসনিক সদর দফতর। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘রাজধানী শহর’ হিসেবেও খ্যাত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি । এই জনপদের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসগুলোর প্রধান কার্যালয়ও এখানেই।
চট্টগ্রাম থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের পশ্চিম তীরে এই শহর অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে দূরত্ব প্রায় ৩০৮ কিলোমিটার ।
১৮৬০ সালের ২০ জুন রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি হয়। জেলা সৃষ্টির পূর্বে এর নাম ছিল কার্পাসমহল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলা সৃষ্টি করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার মূল অংশ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
পার্বত্য জনপদের প্রাচীন ও প্রধান এই শহরেরও রয়েছে কিছু দু:খগাঁথা। কি কি অপূর্ণতা আছে রাঙামাটির ? কি থাকা প্রয়োজন ছিলো কিন্তু নেই ! এমন প্রশ্নই করা হয়েছিলো রাঙামাটিবাসিদের নিয়ে গঠিত ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলা’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে(https://www.facebook.com/groups/rangamatihilltract) সেখানে উঠে এসেছে নানান চাওয়া। সেই চাওয়া নিয়েই এই প্রতিবেদন।
গ্রুপে প্রশ্ন করেছিলেন পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম সম্পাদক ফজলে এলাহী। তার ছোট্ট প্রশ্নটি ছিলো-‘ কোন জিনিসটি রাঙামাটি থাকা দরকার,কিন্তু নাই !! লিখুন তো…..’
কি জবাব এসেছে এই প্রশ্নের জবাবে ? দেখুন-
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ অমিরাজ দাশ চেয়েছে শহরে সিটিবাস সার্ভিস চালু হোক।
শিক্ষক অরূপ মুৎসুদ্দি চেয়েছেন ‘আইসিইউ এবং হিমাগার’।
চানেল-২৪ ও বাংলা ট্রিবিউন এর সাংবাদিক জিয়াউল হক বলেছেন-‘ তিন পার্বত্য জেলার জন্য রাঙামাটিতে করোনা রোগ শনাক্তের জন্য পরীক্ষাগার দরকার।’
তরুন সমাজকর্মী রাজা পালিত চেয়েছেন ‘এ মুহূর্তে বেশি দরকার পিসিআর ল্যাব আইসিইউ।
সময় টিভির সাংবাদিক হেফাজত সবুজ বলেছেন-‘ একটি পূর্ণঙ্গ হাসপাতাল, যেখানে সব ধরণের সেবা থাকবে। এটা সম্ভব কারণ নতুন যে ১৫০ বেডের হাসপাতাল হবে, সেখানে এগুলো যুক্ত করলেই হবে ‘
মোঃ ফুলন নামের একজন বলেছেন ‘আইসিইউ’।
ছাত্রনেতা অয়ন চক্রবর্তী চেয়েছেন- পাহাড়ে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নৌ ফায়ারসার্ভিস স্থাপিত হোক।
সুজিত ভট্টাচার্য বলেছেন, রাঙামাটিতে দরকার আইসিইউ এবং পিসিআর ল্যাব। সেই সাথে সিটি বাস সার্ভিস চালুর প্রস্তাব করেছেন তিনি।
আমিনুল ইসলাম চেয়েছেন আইসিইউ আর ছাত্রনেতা ইমাম হোসেন কুতুবী চেয়েছেন,নৌ ফায়ারসার্ভিস।
রাঙামাটি চেম্বারের সচিব সাব্বির আহমেদের প্রত্যাশা- একটি আইসিইউ সমৃদ্ধ হাসপাতাল।
তরুন ব্যবসায়ি মিল্টন দে বলছেন –‘ পূর্ণাঙ্গ চিকিত্সাব্যবস্থা সমৃদ্ব একটি হাসপাতাল খুব দরকার। এখানে কোটি টাকা খরচ করেও নিরাময়যোগ্য রোগীকে বাচাঁনো সম্ভব নয়।’
জালাল ইকবাল বলেছেন-‘ রাঙ্গামাটির বেশ কয়েকটি উপজেলা পানি পথের সদরে আস্তে সময় লাগে উপজেলা অনুযায়ী ৪-৫-৬-৭ ঘন্টারও বেশি আমাদের রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালটি উন্নত করা দরকার……’
সাবেক সাংবাদিক ও বর্তমানে উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা জসীমউদ্দীন বলেছেন-‘ আরো অধিক জনসংখ্যা দরকার। জনসংখ্যা বেশী হলে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবসায়ীরা উদ্দ্যেগ গ্রহন করবে। সরকারও হাসপাতাল করার যৌক্তিকতা খুঁজে পাবে।’
তরুন ব্যবসায়ি খালেদ মাসুদ বলেছেন-‘ এ মুহূর্তে বেশি দরকার পিসিআর ল্যাব আইসিইউ।’
উন্নয়নকর্মী সুশীল চাকমা বলেছেন-‘যেখানে চিটাগং মেডিকেলে নেই, এখানে কেমনে হবে। টাউন বাস প্রয়োজন আছে’।
রূপান্ত চাকমা চেয়েছেন, শহরে ডাচবাংলা ব্যাংক এর এটিএম বুথ।
অনেশ চাকমা আর্নেস বলেছেন-‘পিসিআর ল্যাব জরুরি ভিত্তিতে দরকার। যেভাবে করোনা সংক্রমণ ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় শনাক্ত হয়েছে এখন দরকার বেশি পরিমাণে টেস্ট করা। সেখানে চিটাগং থেকে তিন-চার দিনেও রিপোর্টের রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম হলে মানুষ নিজের অজান্তেই অনেকের কাছে করোনা ছড়িয়ে দিবে। ভেন্টিলেটর আর আইসিইউ অনেক গুলো না হলেও কিছু হলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা করা উচিত।’
রিমন দে পিসিআর ল্যাব আইসিইউ চেয়েছেন।
ছাত্রলীগ নেতা আল মাহমুদের প্রত্যাশা পূর্ণাঙ্গ একটি হাসপাতাল থাকুক জেলায়।
ট্রাভেল এক্সপার্ট নুরুদ্দিন শরীফ বলেছেন-একটা হাসপাতাল।যেখানে ভালো মানের কিছু ডাক্তার ও ভালো মনের ম্যানেজমেন্ট থাকবে। আর বিশ্বমানের পরযটনের সুব্যবস্থা।’
শিক্ষক বিউটি বড়ুয়া চেয়েছেন একটি হাসপাতাল অথবা ক্লিনিক।
সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসি ঈষান আকতার বলেছেন-‘একজন আর্দশবান ভাল নেতা হলেই মিটে যেত নৌ ফায়ার সার্ভিস,স্বয়ং সম্পুর্ন হাসপাতাল,জুর্স ফাক্টরি বা হিমাগার,হস্তশিল্প বিসিক নগরি,পর্যটন শহরের সুযোগ সুবিধা.হ্যা একজন দক্ষ আর্দশবান যোগ্য নেতৃত্বই পারে সব বদলে দিতে।’
শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন-‘কয়েকটি উপজেলার সাথে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ।’
তাজুল ইসলাম বলেছেন-‘নানিয়ারচর সড়কটি প্রয়োজন।’
পৌরসভার আজিজুর হক বলেছেন-‘ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল সবচেয়ে জরুরি।’
রাজনৈতিক কর্মী জামিল মোস্তফা জানিয়েছেন-‘রাঙ্গামাটির মাটির প্রতি ভালোবাসার টান, যেটি খুব কম দেখতে পাওয়া যায়…….।’
শিক্ষক লোকমান হোসেন বলেছেন-‘ঋতু ভিত্তিক ফলের জন্য জুস ফ্যাক্টরি।’
অনিল রোয়াজা দুর্গম সাজেকে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সঙ্গীতশিল্পি কনক শুভ চেয়েছেন,শহরে জরুরী মেডিকেল ইক্যুপমেন্ট ও জরুরী মেডিকেল সেবা থাকুক।
পার্বত্য শহর ও জেলা রাঙামাটির এমন অসংখ্য অপূর্ণতা নিয়ে আফসোস আর হাহাকার এই জেলাবাসির বহুদিনের। এইসব আকাংখা আর দাবি বাস্তবায়নে নেই কার্যকর কোন পদক্ষেপ। তবুও শহরবাসি তথা রাঙামাটি জেলাবাসির এইসব ছোট ছোট স্বপ্নগুলো একদিন ডানা মেলবেই, এমন প্রত্যাশা আমাদেরও।