গত ৩ ও ৪ মে রাঙামাটিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুই ঘটনায় ৬ হত্যাকান্ডের পর আইন শৃঙ্খলাবাহিনী রাঙামাটি সদরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে এবং শহর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তারই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অনেককেই। গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির স্টাফ সদস্য তন্টুমনি চাকমা ও কিরণ চাকমা নামের দুইজনকে।
সন্দেহভাজন আটককৃতদের মধ্যে যাদের নামে নানিয়ারচর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে এবং পূর্বের যাদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে তাদেরকে থানায় রেখে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি পুলিশ সুপার মো: আলমগীর কবীর। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলেও জানান।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটি শহর থেকে গ্রেফতারকৃত ২ জন হলেন জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা তন্টু মনি চাকমা (৪০) এবং সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের বাদলছড়ি গ্রামের বাসিন্দা কিরণ চাকমা (৫৫)। আটককৃত তন্টু মনি চাকমা জনসংহতি সমিতির নেতা ও সাম্প্রতিক সময়ে ঠিকাদারি কাজের কারণে ব্যাপকভাবে আলোচিত।
আটককৃত টন্টু মনি চাকমা কেন্দ্রীয় জেএসএস’র স্টাফ সদস্য বলে জানিয়েছেন জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা। তিনি অভিযোগ করেছেন, পুলিশ হয়রানি মূলক ভাবে এখানে জেএসএসকে টেনে আনছে,আমরা এ হত্যার বিষয়ে কিছুই জানি না।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ যেভাবে শহরে তল্লাশি করছে, এতে মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা অভিযান করবে তবে এতে সাধারণ মানুষ ও যারা অপরাধী না, তাদের যেনো হয়রানি করা না হয় এর জন্যে তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
রাঙামাটির কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ সত্যজিৎ বড়–য়া জানান, পৃথক অভিযানে তন্টু মনি চাকমাকে শহরের কল্যাণপুর এবং কিরণ চাকমাকে কুতুকছড়ি বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি তল্লাশি চলছে। তবে তদন্তের বিশেষ স্বার্থে আমরা বেশি কিছু বলতে পারছি না।
এদিকে নানিয়ারচরের ৬ খুনের মামলা ঘিরে রাঙামাটি শহর এলাকার মানিকছড়ি, ভেদভেদী, পৌরসভা চত্ত্বরসহ বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন থামিয়ে পুলিশের তল্লাশি করছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা নিহত হন। তার একদিন পরে চেয়ারম্যানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’র আহ্বায়ক তপন জ্যোতি বর্মাসহ আরো চার জন। এ ঘটনার আলাদা আলাদা দুইটি অভিযোগ করা হয়েছে নানিয়ারচর থানায়। এই দুটি মামলায় আসামী করা হয়েছে ১১৮ জনকে।
তন্টুমনি চাকমার মুক্তি দাবি জনসংহতির
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষে সহ তথ্যও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোন মামলা ও ওয়ারেন্ট না থাকা সত্ত্বেও যৌথ বাহিনী কর্তৃক গভীর রাতে তন্টু মনি চাকমাকে ঘুম থেকে তুলে গ্রেফতারের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এই গ্রেফতার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বলাবাহুল্য, যৌথ বাহিনী কর্তৃক এভাবে নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনা পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা বলে বিবেচনা করা যায়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি অবিলম্বে তন্টু মনি চাকমাকে নি:শর্তে মুক্তি প্রদানের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। সেই সাথে সন্ত্রাসী খোঁজার নামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিরীহ মানুষের উপর হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধের দাবি জানাচ্ছে।’
3 Comments
নিরাপরাধ লোক ধরা হচ্ছে
অভিযানের নাম করে যেন সাধরন মানুষদের হয়রানি করা না হয়
বাবু, কিরন জ্যাতি চাকমা একজন সরকারী চাকুরীজীবি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। উনাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে…এই জগন্য কাজ উনি করতে পারেন না