
সুহৃদ সুপান্থ
রাঙামাটি শহরে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি খুঁটি স্থানান্তরের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি শুক্রবার রাত দশটার দিকে শহরের ভেদভেদী এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে। তারা অভিযোগ করছেন, বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে কাজ করার কথা থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ চালু রাখার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন,শুক্রবার সকালে শহরের দেবাশীষনগর এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের খুঁটি স্থানান্তরের কাজে আরো অনেকের সাথে অংশ নেয় শহরের মোল্লাপাড়া এলাকার জনৈক আব্দুল কুদ্দুস এর পুত্র মোঃ বাপ্পী (২৫)। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের সাথে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় সে। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে প্রথমে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসা অবস্থা আশংকাজনক দেখে চট্টগ্রামে রেফার করেন। সেখানে নেয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মৃত্যুবরণ করে সে। নিহত বাপ্পী বিবাহিত এবং তার চারবছর বয়সী একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে।
রাত সাড়ে দশটার দিকে তার লাশ রাঙামাটি আনা হলে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে। এসময় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানান শ্লোগান দেন এবং পূর্বঘোষণা অনুসারে বিদ্যুৎ বিভাগ পুরো শহরে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা থাকলেও সঞ্চালন লাইনে কেনো বিদ্যুৎ ছিলো তার কৈফিয়ত দাবি করেন। প্রায় দুইঘন্টা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে অবস্থান নিয়ে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। রাত সাড়ে এগারোটায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ তুলে ঘরে ফিরে যান তারা। তবে এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকালে শহরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলনকারি মোঃ হানিফ জানিয়েছেন,বিদ্যুৎ বিভাগ কাজে কথা বলে তাদের নিয়ে গেলো,কিন্তু তারা লাইনের উপর মানুষ থাকা অবস্থায় কেনো লাইন চালু করলো ? তারা ঘোষনা দিয়েছে,বিকাল চারটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে,কিন্তু দুপুর বারোটায় কেনো লাইনে বিদ্যুৎ চালু করলো? এই মৃত্যুর দায় পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এড়াতে পারেন না।’
মোঃ আমজাদ মিয়া নামের আরেক আন্দোলনকারি জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির প্রতিবাদে শনিবার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও দাবিনামা পেশ করা হবে।
রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, দেবাশীষনগর এলাকায় আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ করার সময় ঠিকাদারের একজন শ্রমিক লাইফলাইন স্পর্শ করায় দুর্ঘটনায় পড়ে এবং খবর পেয়ে আমরা দ্রুত তাকে প্রথমে রাঙামাটি ও পরে চট্টগ্রামে পাঠাই,সেখানেই সে মৃত্যুবরণ করেছে। এটি নিছক একটি দূর্ঘটনা,এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কোন দায় নেই। তবুও বিক্ষুদ্ধদের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিরা এসেছে,আমরাও তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি,কিন্তু তারা কথা শুনছে না। আমাদের অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধতনদের সাথে আলাপ করছি।

রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি,সেখানে পুলিশ গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল এবং প্রতিবাদকারিদের সাথে আমরা কথা বলছি। প্রকৃত ঘটনা কি সেটা জানার চেষ্টা করছি আমরা। তারপর আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’