রাঙামাটিতে ত্রাণের কোনও সঙ্কট নেয় জানিয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেছেন, বাজারে খাদ্যেরও কোনও সঙ্কট নেই। যোগাযোগ সমস্যা সমাধানে কাপ্তাই চ্যানেলে লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পণ্য পরিবহনে বিনামূল্যে লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান রাঙামাটির যে সমস্যা তা সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
রোববার সকাল সাড়ে এগারোটায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। জরুরি সভায় রাঙামাটির বর্তমান অবস্থা উত্তরণে জেলা প্রশাসক স্থানীয় বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশাজীবিদের সাথে মতবিনিময় করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, কেউ কেউ সঠিক তথ্য সংগ্রহ না করে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে বসে রাঙামাটির ঘটনাকে ভিন্নভাবে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করছেন। কিন্তু বাস্তব অবস্থা সেরকম নয়। প্রথমদিন দুর্যোগের পর হয়তো বা কেউ কেউ কৃত্রিম মজুদ সৃষ্টি করে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু বর্তমানে রাঙামাটিতে খাদ্য প্রচুর পরিমাণে মজুদ আছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ৩০ হাজার অকটেন আনা হয়েছে। যা দিয়ে আগামী একমাস চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। তিনি এই দুর্যোগে সময়ে সকলকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাপ্তাই দিয়ে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক থেকে বিনামূল্যে লঞ্চ দেয়া হবে। এতে কম খরচে পণ্য আনা যাবে। কোনও অবস্থাতে অতিরিক্ত মূল্য বরদাশত করা হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, রাঙামাটি ত্রাণ বিতরণের জন্য এখন থেকে ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৭টি সেনাবাহিনী, ৩টি রেড ক্রিসেন্ট, ৪টি বিজিবি ও পুলিশ ৪টি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করবে। আর এই বিষয়টি সমন্বয় করবে জেলা প্রশাসন। সোমবারের মতো রাঙামাটি ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।
সকালে জরুরি সভা শেষে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান ও পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান রাঙামাটির বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ব্যবসায়ীদের দুর্যোগকে পূঁজি করে দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানান। যিনি দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে দুর্যোগকবলিত রাঙামাটিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন বাজারে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করছে। দুর্যোগের কারণে বাজার যাতে কোনভাবেই অস্থিতিশীল না হয় সেই উদ্দেশ্যে রাঙামাটির বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা, মো: আখতারুজ্জামান ও স¤্রাট খীসার নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং টিম জেলার প্রধান প্রধান বাজার বনরূপা, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি বাজার ও আসামবস্তি এলাকায় বাজারে দিনব্যাপী মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এদিকে সকাল থেকে আবারো বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে স্তুপকৃত মাটি পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত ছিলো সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগ। পাশাপাশি দ্রুত সময়ে হালকা যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থার জন্যও কাজ করে যাচ্ছে তারা। তবে রোববার সকাল থেকে আবারো বৃষ্টির কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
রাঙামাটির দুর্যোগ পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসার পথে বিএনপির কেন্দ্রীয় মহাসচিবসহ আরো কয়েক নেতা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া এলাকায় আহত হন। এ সময় ঢিলের আঘাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা আহত হয়েছেন। এনিয়ে রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ করে জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে রাঙামাটিতে শনিবার রাতে আহত ১৮ মাস বয়সী শিশু জিসান ও রোববার ঢাকায় আহত নবী হোসেন(৪৫) নামে আরেক একজনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে মৃত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৫ বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।
রোববার ভোর থেকে আবারো থেমে থেমে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় রাঙামাটিতে। ভোর থেকে বৃষ্টির মাত্রা একটু কম থাকলেও দিন বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির মাত্রা আরো বাড়তে থাকে। তবে বিকেলে বৃষ্টি কমে আসে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ। বৃষ্টি বাড়তে থাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষও ভিড় করতে থাকে আশ্রয়কেন্দ্রে।
এদিকে বৃষ্টি বাড়তে থাকায় কাপ্তাই হ্রদেও পানি বাড়তে থাকে। কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট দেড় ফুট খুলে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ২৭ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানান কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আব্দুর রহমান। তিনি জানান, হ্রদে আজকের দিনে ৮০ এমএসএল(মিনস সী লেভেল) পানি থাকার কথা থাকলেও প্রায় ২৪ ফুট বেড়ে রবিবার সকাল পর্যন্ত পানি রয়েছে ১০৪ এমএসএল। কাপ্তাই হ্রদে পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
2 Comments
টিভিতে যা দেখায় তা কি ফ্লিম?
মানুষ খাদ্যের অভাবে গ্রামে গিয়ে ভিক্ষা করছে ! আর সেই রাঙামাটি তে নাকি খাদ্য ও ত্রানের কোন সংকট নেই !