পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে পার্বত্য রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত প্রথম সংসদ সদস্য, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী সীমিত পরিসরে পালিত হয়েছে পার্বত্য রাঙামাটিতে। পাহাড়ে স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে একসময় সশস্ত্র আন্দোলন করা, সাবেক গেরিলা সংগঠন ‘শান্তিবাহিনী’ও গঠন করেছিলেন তিনি,পাহাড়ী জনগণ যাকে ‘জুম্ম জাতীয়তাবাদ’র জনক হিসেবেই অভিহিত করে থাকেন।
প্রতি বছর নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ব্যাপক কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করলেও এবছর কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারনে শুধুমাত্র অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শেষ করা হয় প্রয়ান দিবসের আনুষ্ঠানিকতা।
মঙ্গলবার সকালে দলীয় কার্যালয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নেতাকর্মীরা। তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন ও নীরবতা পালন করেন তারা।
সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচী পালিত হয়। এসময় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,হিল উইমেন্স ফেডারেশন,যুব সমিতিসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে তাদের প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার ভগবান টিলা এলাকায় নিজের দলের প্রীতি কুমার চাকমার নেতৃত্বাধীন গ্রুপের একদল বিভেদপন্থী সহযোদ্ধার সশস্ত্র হামলায় আট সহযোদ্ধাসহ নিহত হন এমএন লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বাংলাদেশের সংবিধানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন । পরে বাকশাল এর সদস্য হওয়া এই নেতা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পাহাড়ে পৃথক স্বশাসনের দাবিতে ১৯৭৬ সালে গঠন করেন সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন ‘শান্তিবাহিনী’,যারা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃংখলাবাহিনীর সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো,যে সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দশ হাজার বাঙালি ও পাহাড়ী। মি: লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বর্তমান সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সন্তু’র বড় ভাই। যিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন স্কুল শিক্ষক হিসেবে। তার প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ২০০৯ সালে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যার একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই ভাই সন্তু লারমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(এমএনলারমা) নামের অন্য অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুভাষ কান্তি চাকমা।