করোনাভাইরাস আপডেটব্রেকিংরাঙামাটিলিড

রাঙামাটিতে আক্রান্তের হার ৯.৮০%, নমুনা সংগ্রহ ০.২৯%

ভৌগলিক বিশালতার প্রাকৃতিক সুযোগেই মিলছে স্বস্তি

গত মে মাসের ৬ তারিখ দেশের সর্বশেষ জেলা হিসেবে পার্বত্য জেলা শহর রাঙামাটিতে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় ৪ জনের। এরপর গত ৪৬ দিনে জেলার করোনাচিত্র বহুবার তার রূপ পাল্টেছে। তখনো ১ জন বা দুইজন কখনো একদিনের ২৪ জন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ খবর হলো জেলা ২০ জুন অবধি শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ রোগির সংখ্যা ১৫৫ জন। এ যাবৎ পাওয়া ১৫১৭ টি নমুনা রিপোর্টের মধ্যে পজিটিভ পাওয়া রোগির শতকরা হার প্রায় ৯.৮০%।

অন্যদিকে ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে রাঙামাটি জেলায় মোট জনসংখ্যা ৬ লক্ষ ২০ হাজার ২১৪ জন। এই যাবৎ স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছে ১৮১১ জনের,যা মোট জনসংখ্যার ০.২৯% !

বিষয়টিকে ‘স্বাভাবিক চিত্র’ বলছেন রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত মেডিকেল অফিসার এবং শুরু থেকেই করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন হিসেবে কর্মরত ডা: মোস্তফা কামাল।

ডা: মোস্তফা কামাল বলেন, রাঙামাটির ভৌগলিক বিশালতা এবং অবস্থানগত কারণে এখানকার মানুষ শহর এবং কিছু এলাকা ছাড়া প্রায় সর্বত্রই এমনিতেই বেশ দূরে দূরে বসবাস করেন। ন্যাশনাল গাইডলাইনে যে সামাজিক দুরত্বে কথা বলা হচ্ছে,সেই দুরত্ব রাঙামাটিতে এমনিতেই পালিত হয়,সঙ্গত কারণেই এখানে রোগির হার সারাদেশের তুলনায় ‘স্বস্তিকর’ভাবেই অনেক কম।

তরুন এই চিকিৎসক বলছেন, আমাদের কাছে যারাই এসেছেন,তাদেরই নমুনা সংগ্রহ করেছি আমরা,এমনকি সামান্য সিজনাল সর্দিজ্বরের রোগিও যদি চেয়েছে করোনা পরীক্ষা করাতে,তাদের নমুনাও আমরা নিয়েছি। সেই হিসেবেই ১৮১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। আমরা তো আর সুস্থ কোন মানুুষকে ধরে বিনাকারণে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে পারিনা ! উপসর্গ নিয়ে আমাদের কাছে আসা সবারই নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি কেউ যখন নিজেই সন্দেহ পোষন করছেন,এমন মানুষেরও নমুনা নেয়া হয়েছে।

এই চিকিৎসক বলেন, খেয়াল করলে আপনারা দেখবেন রাঙামাটির আক্রান্ত রোগির অর্ধেকেরও বেশি আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্য ও স্বাস্থ্যকর্মী। এরা পেশাগত কারণেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করতে হয়। এই কারণেই এদের আক্রান্ত হওয়ার হারটা বেশি,কিন্তু জনসংখ্যা অনুপাতে জেলায় সাধারন মানুষের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কম।

তবে গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামে সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটিতে নমুনা সংগ্রহে ও রিপোর্ট আসার ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বাস্তবতার কাছে আমরাও কিছুটা অসহায় হয়ে পড়েছি। আগে যখন যেই আসতো আমরা নমুনা নিতাম, কিন্তু এখন চট্টগ্রামে রিপোর্ট জট এর কারণে আমরা নমুনা কম পাঠাচ্ছি,শুধুমাত্র উপসর্গ আছে এমন রোগিদেরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে আসলেই এই সংকটও কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

২১ জুন সকাল পর্যন্ত রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জেলায় এ যাবৎ ১৮১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। যার মধ্যে রিপোর্ট হাতে এসেছে ১৫১৭ জনের। এদের মধ্যে পজিটিভ পাওয়া গেছে ১৫৫ জন,বাকিরা নেগেটিভ। মারা গেছেন ৪ জন। রবিবার বিকাল পর্যন্ত শহরের চম্পকনগরস্থ আইসোলেশন সেন্টারে আছেন ১২ জন।

প্রসঙ্গত, পার্বত্য শহর রাঙামাটি দেশের সর্বশেষ জেলা যেখানে করোনা থাবা ফেলেছিলো। একইসাথে এই জেলার মানুষ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সচেতন। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় প্রশাসনের কড়া নজরদারির ফলে পথেঘাটে কোথাও মাস্ক ছাড়া দেখা মিলেনা একজন মানুষেরও। মাস্ক না পড়া মানুষের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাস্ক না পড়লেই গুণতে হয় জরিমানা।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 − 1 =

Back to top button