বান্দরবানের লামা উপজেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এম. হোসেন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি পোপা এলাকায় বিদ্যালয়টির অবস্থান। এ বিদ্যালয়ে যেতে হলে পোপা নামক একটি পাহাড়ি খাল পাড়ি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাই ভর্তিচ্ছু শিশুদেরকে আগেই শিখে নিতে হয় সাঁতার। কারন ১২ মাস পানিতে ভরপুর থাকে পাহাড়ি ওই খালটি। খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মিত হলে কোমলমতি শিশুদের দুর্ভোগ লাঘবসহ এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। ব্রিজ নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগি এম হোসেন পাড়া রেজি: বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার বিদ্যালয়টি জতীয়করণ করে। এ বিদ্যালয় ১৬৬ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এটি লামা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে স্থাপিত হলেও পাশের রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছিচাখইন পাড়ার প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে ২৯৭নং পোপা মৌজার খাল দ্বারা বিভাজিত লামা সদর-রুপসীপাড়া ইউনিয়নটি। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির কারণে পোপা খালটি প্রায় সময় ভরপুর থাকে। পাহাড়ি খাল হওয়ায় খালটিতে স্রোতের মাত্রাও থাকে বেশি। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই খালটিতে প্রবল স্রোতসহ পানি ভরপুর থাকায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেকাংশে কমে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার পোপা খালটি পারাপারের সময় পানি বেশী থাকায় ২ জন শিক্ষাথী পানির ¯্রােতের টানে ভেসে যায়। পরে সহপাঠীদের চিৎকারে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংকের পাশাপাশি উপস্থিতির হার একেবারেই কমে যায়। কিছু কিছু শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকদের ঘাঁড়ে চড়ে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, পোপা খাল পারাপারের কোন মাধ্যম না থাকায় কোমলমতি শিশুদের শেষ অবলম্বন হচ্ছে সাঁতার। সাঁতরিয়েই অবুঝ শিশুদেরকে খাল পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। সাঁতার না জানলে খালের ওপাড় থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়া যায়না। তাই বিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই বিদ্যালয় গমনইচ্ছু শিশুদের সাঁতার শিখতে হয়। বিধায় ছিচাখইন পাড়া বসবাসকারি বাসিন্দা ও কোমলতি শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকি লাঘবের জন্য পোপা খালের ওপর একটি ছোট ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডর সৃদৃষ্টি কামনা করছি।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মংহ্লাথুই, উছাইমং ও এছিউ মার্মা জানায়, শুষ্ক মৌসুমে কোন মতে সাঁতরিয়ে খাল পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে স্রোতের গতি বেশি হওয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়া যায় না। তাই যাতে করে নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে একজন্য একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য দাবি জানাই।
পোপা খালের ওপর একটি ব্রিজ না থাকায অর্ধশাতাধিক শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি নিযে বিদ্যালয় গমনের সত্যতা নিশ্চিত করে এম. হোসেন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এম. জিয়াবুল হক বলেন, কোমলমতি শিশু ও স্থানীয় জনসাধারনের কথা চিন্তা করে পোপা খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন। বিষয়টি অনেকবার উপজেলা শিক্ষা মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি। ব্রিজটির জন্য সব সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম থাকে। ব্রিজটি নির্মিত হলে কোমলমতি শিশুদের দুর্ভোগ লাঘবসহ এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।
এ বিষয়ে লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন জানান, উভয় ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে, সে লক্ষ্যে পোপা খালের উপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।