বহুদিন ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে। দৃশ্যত সারাদেশের মতো দুর্বল হওয়ার কথা সাংগঠনিক ভীত। কিন্তু পাহাড়ের জেলা রাঙামাটির বিএনপি যেনো পাহাড়ের মতোই ধীর স্থির। দীর্ঘকালের ক্ষমতাহীনতাও যেনো এই জেলায় দলটিকে সাংগঠনিকভাবে আরো বেশি সুদৃঢ়ই করেছে। ভিতরে ভিতরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে, আছে নেতাদের নিজস্ব বলয়। সেই সাথে এক ঝাঁক একই প্রজন্মের নেতার মধ্যেও আছে ইঁদুর দৌড়। কিন্তু দিনান্তে জাতীয়তাবাদী এই দলটি দেশের অন্য যে কোন জেলার চেয়েও বেশ ঐক্যবদ্ধ,শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় এই জেলায়। ফলে আসছে ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনে দলটি মেয়র পদে কাকে মনোনয়ন দেয়,এনিয়ে উদ্বেগ আছে খোদ শাসক দলেও। সঙ্গতকারণেই বিএনপিও বর্তমানের ‘কঠিন সময়ের রাজনীতি’কে মোকাবেলা করে ভোটের মাঠে প্রবল প্রতিরোধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন শেষাবধি এমন কাউকেই খুঁজছে মেয়র প্রার্থী হিসেবে। ফলে আলোচনায় ৪/৫ জন নেতার নাম আলোচিত হলেও এগিয়ে থাকবেন দুয়েকজন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে এখন অবধি যেসব নেতার নাম আলোচনায় এসেছে তারা হলেন সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, পৌর বিএনপির সভাপতি শফিউল আজম, জেলা যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম শাকিল।
সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ভূট্টো সর্বশেষ নির্বাচনেও দলের প্রার্থী ছিলেন। সকাল সাড়ে দশটায় ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের প্রতিবাদে নির্বাচন বর্জন করা সত্তে¡ও ৮,৩০০ ভোট পেয়ে চমকে দেন সবাইকে। বিএনপি রাজনীতিতে বরাবরই ‘আনপ্রেডিক্টেবল ক্যারেক্টার’ হিসেবে ভূট্টো এবারও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানালেন।
ভূট্টো বলেন-‘ আমার আনা দেড়শ কোটি টাকার ফান্ড ব্যবহার করে আমার পরের মেয়র নাম কামিয়েছে কিন্তু কাজগুলো ঠিকঠাক করেনি। ফলে আমার রাতদিন পরিশ্রমের ফলে আসা এই প্রকল্পগুলোর যথাযথ ব্যবহার হলোনা। আমি আবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে চাই এবং আমার বিশ্বাস নির্বাচন যদি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়,তবে ক্ষমতাসীনরা আমাকে হারাতে পারবেনা। এটা জেনেই নির্বাচন ‘অলৌকিক অভিযোগ’ আর ‘আজগুবী মামলা’ করে আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানান অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
দলীয় মনোনয়ন পাবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম ভূট্টো বলেন-রাঙামাটিতে ক্ষমতাসীনদের সাথে ‘আপোষ ও সমঝোতা’র রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাইফুল ইসলাম ভূট্টোরাই বিএনপির প্রকৃতকর্মী। যারা দিনে বিএনপি অফিসে ঘুরাফেরা করে আর রাতে আওয়ামীলীগের নেতাদের বাসায় আনাগোনা করে তাদেরকে মনোনয়ন দিলে ডরাভুবি হবে।’
মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রশীদও। রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত সহসভাপতি ও বিভিন্ন সামাহিক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত মামুন, শহরজুরেই পরিচিত মুখ। ভোটের রাজনীতিতে এখনো সরাসরি মাঠে নামেননি পেশায় তরুণ এই আইনজীবি। পিতার রাজনৈতিক পরিচয় আর নিজের আশৈশবের দলের প্রতি কমিটমেন্ট থাকা মামুনও ভোটের মাঠে নামতে চান,দলীয় মনোনয়ন পেলে। মামুন বলেন- আমি মনোনয়ন চাইব। এবং নির্বাচন যদি অবাধ সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ হয়,তবে জয়ের ব্যাপারেও আমি আশাবাদী।’
সর্বশেষ দুই পৌরসভা নির্বাচনেই মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনাতে বেশ জোরেসোরেই ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি শফিউল আজম। ভদ্র নম্র হিসেবে পরিচিত তরুন এই নেতা এবারো দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এই প্রসঙ্গে শফিউল আজম বলেন, আমি মনোনয়ন চাইব। দল দিবে কিনা সেটা দল বলতে পারবে। তবে মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী,যতি নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং সাধারন মানুষ নিরাপদে ভোট দিতে পারে।’
তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপির তুরুপের তাস হতে পারেন জেলা যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম শাকিল। তরুন এই নেতা বিএনপির রাজনীতির তরুন অংশটির কাছে বেশ জনপ্রিয়। নেতাকর্মীদের বিপদে আপদে পাশে থাকা এবং তাদের জন্য বুক পেতে দেয়ার মানসিকতার কারণে নতুন প্রজন্মের জাতীয়তাবাদীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান এই তরুণ।
শাকিল বলেন- ‘ আমার বিশ্বাস দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে ভোটযুদ্ধে আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে মাঠে থাকব এবং লড়াই করে জিতে আসব। যদি দিনের ভোট রাতে না হয় এবং সাতসকালেই কেন্দ্র দখল হয়ে না যায়,তবে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
তবে পৌর নির্বাচন নিয়ে আশাবাদের কথা শোনাতে পারলেন না জেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মোঃ শাহ আলম। তিনি বলেন-‘ আমরা আদৌ নির্বাচন করব কিনা এটা নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের উপর। যদি কেন্দ্র আমাদের নির্বাচন করার নির্দেশনা দেয় তবেই আমাদের নির্বাচনমুখী চিন্তাভাবনা শুরু হবে। কে বা কারা প্রার্থী হবেন,সেটাও সময়ই বলে দেবে। এখনই আমরা এই বিষয়ে কিছু বলাটা কঠিন।’
রাঙামাটি পৌর এলাকায় বিএনপির উল্লেখযোগ্য ভোটব্যাংক আছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, সর্বশেষ সাইফুল ইসলাম ভূট্টো ছাড়া এই পৌরসভার চেয়ারম্যান বা মেয়র পদে কখনই বিজয়ী হতে পারেনি দলটি। নিজেদের আভ্যন্তরীন নানান বিরোধ আর ভিন্নমত,অন্যকে বিজয়ী করার গোপন প্রচেষ্টা আর নানামুখী সংকটে থাকা অতীতের দু:সহ সেইসব দিন ভুলে এবারও কি মেয়র নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে বিএনপি ? কি জানি ! সময়ের হাতে তোলা থাক এই প্রশ্নটাও…