-অংসুই মারমা
মানুষ কেন যে কোন জীবের পরিণতি হলো মৃত্যু। মৃত্যু থেকে অদ্যাবধি কেউ রেহাই পায়নি। জন্ম মাত্রই মৃত্যু অবধারিত। এ নিয়ে দার্শনিকদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আছে। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের অভিমত আমাদের মুখস্ত। হিরোক্লিটাসের বাণী ছিলÑ সবকিছুই পরিবর্তনশীল। বুদ্ধের মূলবাণী- নির্বাণ বা নিভিয়ে যাওয়া। আমরা এসব বাণীর তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা করি।
মানুষের মৃত্যু হলে তাকে অন্যস্থানে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে হয় মাটি চাপা দিতে হয়, নয়তো দাহ করতে হয়। একে ধর্মমতে কবর, সমাধি, শ্মশান ইত্যাদি বলা হয়। সেটিই মানুষের অন্তিম স্থান।
যে কোন মানুষের মৃত্যু-পরবর্তী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নানা জাতিগোষ্ঠীর নানা প্রথার উদ্ভব ঘটেছে। সমাজে ধর্ম সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে এ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-পদ্ধতি কেমন ছিল তা বিশেষ জানা যায়না। ধর্ম সৃষ্টির পর তা আনুষ্ঠানিকতা লাভ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা জনগোষ্ঠীর মৃত্যুতেও প্রথা বিদ্যমান। অতীতের উষার পথ ধরে আসা এ প্রথা অবিশ^াস্য মনে হতে পারে কারও কারও কাছে। কিন্তু সমাজ তো একদিনে গঠিত হয় নাই, দীর্ঘ সময় নিয়ে একটা পর্যায়ে স্থির হয়েছে। যাকে আমরা প্রথার সূচনা বলতে পারি। মারমা সমাজ ইতিহাসে মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে কিছু মজার মিথ চালু আছে। এ মিথের সাথে বর্তমান ধারার যোগসূত্রতার প্রমাণ থাকায় তাকে কল্পকাহিনি বলেও উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
সুদূর অতীতে জুমজীবী মারমারা পাহাড়ে বাস করত। বসতঘরগুলো মাচাং ধরণের। সেখানে দাওয়ার মত ত্ম্যাং বা ঘরসংলগ্ন সমউচ্চতায় একখ- খোলা জায়গা থাকে। ঘরে কেউ মারা গেলে নাকি শবদেহ সেখানে রেখে দেওয়া হতো। রাত্রিবেলায় কোনো একসময় উটপাখি এসে শবদেহ নিয়ে যেত। এভাবে চলেছিল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-পদ্ধতি। এতে আবার কিছু বিপত্তিও দেখা দেয়। নির্ধারিত রাত্রে কোনো কারণে হয়তো উটপাখি পৌঁছাল না। তখন পরিবারটি মৃত নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে। পরে তারা উপায় খুঁজে সিদ্ধান্ত নিল, উটপাখির প্রতীক্ষায় আর শব রেখে দেবে না। নিজেরাই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করবে। কিন্তু সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে অন্ত্যেষ্টির আগে কিছু আচার-অনুষ্ঠান করতে হয়। সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে মৃত্যুর সাথে সাথে সৎকারও করা যায়না। প্রস্তুতিরও একটা ব্যাপার থাকে। সমস্যা হলো, কোন এক সময় মৃতের গন্ধ পেয়ে ওই ঘরে উটপাখি হানা দেয়। উটপাখির ঘ্রাণেন্দ্রিয় নাকি খুবই প্রখর। তারা দূর থেকে মৃতের গন্ধ পায়। তাই তারা মৃতকে নিরাপদ স্থানে রেখে দলবদ্ধভাবে পাহাড়া দিতে শুরু করে রাত্রিবেলায়। ওই পর্যায়ে সমাজ কিছুটা এগিয়েছে। তারা ঢাক জাতীয় বস্তু বানাতে শিখেছে। আরও পরে ঢোল বানিয়েছে। তাই মৃতের পাহাড়ার সময় শক্তি বাড়াতে ভিন্নতর একটি তালে রাতভর প্রথমত ঢাক আরও পরে ঢোল বাজাতে আরম্ভ করে। এর দু’টো উদ্দেশ্য- ১. উটপাখিকে ভয় দেখানো, ২. দূর-দূরান্তের প্রতিবেশীদের খবর দেওয়া যাতে মৃতের পাহাড়া দিতে তারাও শরিক হয়। এখন মৃতের তাল ও লয় কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? খোঁজ নিয়ে যেটুকু জানা যায়, মৃতের ঢাল কিংবা ঢোল বাজানোর চলমান তাল একদিনে তৈরি হয় নাই। সময় নিয়ে নানা নিরীক্ষার মাধ্যমে আজকের পর্যায়ে এসেছে। এ তালের মধ্যে বিরহ আছে, গম্ভীরতা আছে, আছে ভয় লাগানোর বার্তা। তাই ঢোলের ভিন্ন মাত্রার শব্দ শুনে সকলে একটু চমকে উঠে। তখন হতে মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা সূচনা করে। এ ধারা মারমা সমাজে প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নিশিরাতে ঢোলের আওয়াজ বহু দূর-দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তখন স্থানীয়রাও পাহাড়া দিতে এগিয়ে যায়। শবের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। উটপাখি শব নিয়ে যেত বলে এখনও পাখির নমুনা বানিয়ে শবাধারে স্থাপন করা হয়। কোনো ঘরে কেউ মারা গেলে পড়শীরা স্বতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে যায়। তাই সমাজে এ নীতিবাক্য চালু আছে যে, একবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা দশবার বিহারে গিয়ে ধর্মকাজ করার সমান। বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘও কোনো অনুষ্ঠানে তেমন বয়ান দেন। ফলে মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটে। নামী-দামী (?) লোকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হাজার মানুষের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
এদিকে সময়ের সেতু পথে পাহাড়ের নদীগুলোর বিন্দু বিন্দু জলকণা অনেক বয়ে গেছে। আগে থেকে আলোচনায় থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামও পৃথক তিনটি জেলায় বিভক্ত হয় প্রায় চার দশক পূর্বে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কাঙ্খিত মাত্রায় জাগতিক-উন্নয়ন ঘটেছে। যেমন রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ নানা স্থানে অস্থানে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে স্থাপনা গড়ে উঠেছে। উন্নয়নের হুজুকি-তরঙ্গ মারমা সমাজেও আছড়ে পড়েছে কারণে অকারণে। ফলত: মারমা প্রধান গ্রামগুলো জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের মর্যাদা পেয়েছে। যেখানে মানুষ খোলামেলা বাস করত, দরজা বন্ধ না করে ঘুমাত এবং খোলা জায়গায় পায়খানা করত, সেখানে তাদের টিনশেড, সেমিপাকা এমনকি ইমারতের বসতঘর তৈরি হয়েছে। আগে সম্পন্ন ঘরের ছেলেরা যখন ম্যাট্রিক পাশ করতে বারোটা বাজাত, সেখানে প্রায় ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো(?) ঢুকেছে। অনেকের ঘরে বিএ, এমএ করার ছেলেমেয়ে আছে। গ্রামগুলোর চেহারা বদলে গেছে। বদলে গেছে জীবনধারা। অনেকে কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকেছে। লেখাপড়া শেষ করে সবাই চাকুরির ধান্দায় থাকে; না হলেও প্যান্টশার্ট পরে ঘোরে। ফলে গ্রাম আর গ্রাম নেই। শহর কিংবা শহরতলীর চেহারা নিয়েছে। মানুষ আগে সকালে গরম ভাত খেত, এখন চা-নাস্তা করে। তারা শহুরে টাইপের মানুষ সেজেছে। এদের গ্রামে আগের মত আর ভোরবেলায় মোরগের ডাক শুনতে পাওয়া যায়না। ঢেঁকির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়না। গ্রামীণ জীবনধারা ধীরে ধীরে উঠে গিয়েছে। অনেকেই শহর জীবনের সুখ-সন্ধানে ধানী জমি বিক্রি করে দিয়েছে। জীবিকার বদল হলে যা হয় তাই হয়েছে। সময় ও নদীর জল অবিরাম গড়িয়ে যায়। সময় গড়িয়ে যাওয়াকে কেবল অনুভব করা যায়, দেখা যায় না। নদীর জল যে গড়িয়ে যায় তা দেখা যায়। আরো দেখা যায়, জলের ¯্রােতে নদীতে ভাঙচুর হয় এবং এর ফলে গতি পরিবর্তন হয়ে নদীর আদলও বদলে যায়। আমাদের সমাজও নদীর গতির মত বদলে গেছে। আমারা দেখতে পাইনা, কেবল অনুভব করি।
লক্ষ্যনীয় যে, মারমাদের জীবন-জীবিকার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মত স্পর্শকাতর প্রথাও বদলে গেছে অনেক। সমাজের রক্ষণশীলেরা প্রথা রক্ষা করতে পারেনি। আবার কেউ চাপিয়েও দেয়নি। পরিস্থিতি-পরিবেশগত অবস্থায় পরিবর্তনগুলো ঘটেছে। এখন কেউ মারা গেলে আগের মত আর মরার ঢোল বাজাতে দেখা যায়না। মাইকে টমটমে করে একজনকে মৃত্যুসংবাদের ঘোষণা দিতে দেখা যায়। মৃত্যু সংক্রান্ত পুস্তক নিবেং-নেসু পাঠের প্রথাও উঠে গেছে। তার স্থলে মৃতের মাথার পাশে কোনো ভিক্ষুর ধর্ম-দেশনার রেকর্ডকৃত ক্যাসেট বাজাতে দেখা যায়। এখানে শবদেহের কক্ষ গুরুগম্ভীর করে তোলার চেষ্টা করা হয়। এজন্য পৃথকভাবে ‘নিবেং-নেসু’ পাঠের আয়োজন করতে হয় না। এক কলমে মাইল পারের মত এক ক্যাসেটেই সব সারা। মৃত্যুসংবাদ ঘোষণার নমুনা নিন্মরূপ:
১. আজ অমুক তমুক হয়ে মারা গেছে। তাকে আগামীকাল দুপুর ২ ঘটিকায় অমুক শ্মশানে দাহ করা হবে। আত্মীয় ও শূভানুধ্যায়ী সকলকে তার দাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আহ্বান করা যাচ্ছে।
২. একটি শোক সংবাদ- অমুক তমুক হয়ে আজ অতটায় পুরাতন পৃথিবীতে চলে গেছে। আগামীকাল ২ ঘটিকার সময় অমুক শ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। আত্মীয়স্বজন ও শূভানুধ্যায়ীগণকে সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
আগেকার সময়ে মৃত্যুপথযাত্রীর বুকে প্রতীকস্বরূপ শুধু এক সিকি পরিমাণ মুদ্রা দেওয়া হতো কোদো: দান হিসেবে। বর্তমানে মৃতের হাতের উপর মুুদ্রাসহ ১০/২০ টাকার কাগজের নোট প্রত্যেকেই গছিয়ে দেয়। এভাবে হাতের উপর কোদো: দানীয় টাকা দিতে দিতে টাকার স্তুপ তৈরি হয়। দৃশ্যটা একটু বেমানান দেখায়। এভাবে দান দেওয়া শোভন নয় বলে অনেকেই মনে করেন। এ কোদো: দান দেওয়ার অর্থ মৃতের অদেখা প্রাণবায়ু কোথাও বাধাগ্রস্ত না হয়ে যেন মসৃণভাবে গতিপ্রাপ্ত হয়। তবে কোদো: মানে নদী পাড় হওয়ার অর্থ দেওয়া বলে সমাজে প্রচলিত। ক্ষেত্রবিশেষে এর নয়া সংস্করণও দেখা যায়। এটা হলো, মৃতের হাতের উপর যাতে টাকার স্তুপ তৈরি না হয়, সেজন্য স্বল্পদামী কাপড়ের থলে পাশে রাখা হয়। অনেকেই সেখানে দান দেয়। এ টাকাগুলো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নকারী ভিক্ষুসংঘ পান। মৃত ব্যক্তির পারলৌকিক কাজে ব্যবহারের রীতি নাই। সমাজে এই সংস্কার আছে যে, মৃতের হাতে গছিয়ে দেওয়া টাকা পয়সা অশুচি হয়ে যায়। একমাত্র ভিক্ষুসংঘই ‘শীলগুণে’ তা গ্রহণ করতে পারেন। সাধারণ মানুষ তা গ্রহণ কিংবা স্পর্শ করার ক্ষমতা হারায়। কিন্তু বাস্তবে, ওই টাকা শুচি হোক অশুচি হোক বিনিময়ের অংশ হিসেবে কারো অজান্তে আবার মানুষের হাতে চলে আসে। তাই অনেকেই মনে করেন, মৃতের হাতের উপর এভাবে দান না দিয়ে আলাদা একটা পাত্রে কিংবা থলেয় দিলে তা অনেক শোভন হয়। কেননা টাকাপয়সা একটি পবিত্র জিনিষ; তার পরিচ্ছন্নতা অক্ষণœ রাখা প্রত্যেকের কর্তব্য কর্ম। কিন্তু সমাজে আপনা-আপনিই বদল হয়ে আসা প্রথা চলমান থাকায় কোনো প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কেউ খোলাখুলি মতামত দিতে অনাগ্রহী। সমাজে প্রকৃত নেতৃত্বের অভাবে এমনটিই চলছে। দ্বিতীয়ত সংস্কারবশত কিংবা সামাজিক মনস্তত্ব এ সব প্রক্রিয়াকে নির্বিবাদে গ্রহণ করেছে।
অপরদিকে সমাজের প্রধান অংশ যখন আধুনিক(?) জীবনধারায় প্রবেশ করেছে, তখন মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কথিত চলমান কিছু প্রথা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। অচল প্রথাকে সচল রাখতে কোনো সংরক্ষণবাদী এগিয়ে আসেনি। ফলে অচল বা শুন্যস্থানে কিছু নবপ্রথার উদ্ভব হয়েছে। চলমান প্রথার নয়া সংস্করণও বলা যেতে পারে। আগেকার দিনে শোকাতুর পরিবেশে আগতরা মৃতের ঘরে কোনো খাবার গ্রহণ করত না। মারমাদের কিছু সমাজে এখনও কোনো খাবার স্পর্শ করেনা। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের সমাজে দুস্তমত গরম গরম জিলাপি বানিয়ে আগতদের আপ্যায়ন করা হয়। কেউ ইতস্তত করলে বলা হয়, সামান্য পরিমাণও মুখে না নিলে মৃত ব্যক্তি কষ্ট পাবে। অবশ্য হালে কিছু ক্ষেত্রে জিলাপির বদলে চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে দেখা যায়। এমনি কি মরণাপন্ন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ধর্ম দানের অনুষ্ঠান করা হয়। সেখানে লোকজনকেও খাওয়ানো হয়। মৃত্যুপথযাত্রী নাকি জীবিত থাকতে ধর্মদান দেখে শান্তিতে মরতে পারেন এবং তার স্বর্গলাভের পথ সুগম হয়।
ক্রমান্বয়ে চলে আসা প্রথামতে দেখা দিয়েছিল, মৃত রাখার জন্য বাঁশ দিয়ে ছোট করে খাটের মত একটা আধার বানানো হয়, যাকে মারমারা সিংখাইত্ বলে। শব কুসুম পানিতে গোসলের পর নতুন পোশাক পরিয়ে সেখানে তুলে রাখা হতো। শবের মুখও ঢেকে রাখা হতো। বর্তমানে সিংখাইতের বদলে কোন কাঠের চৌকি বা খাটে তোলা হয়। নতুন পোষাকের সাথে সাদা কাপড়ও জড়িয়ে দেওয়া হয়। আগের মত মৃতের ঢোল বাজানো হয়না। মাইকে মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করা হয়। অত:পর দ্রুততার সাথে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ পুষ্প-স্তবক বা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে দলে দলে হাজির হন। সেগুলো মৃতের পাশে রেখে সকলে একক বা দলগত ভাবে ফুলেল শ্রদ্ধঞ্জলি হাতে ছবি তোলার হিরিক দেখা যায়। সেখানে শবের কোনো নিশানাও দেখা যায়না। দৃশ্যত তারা কোন স্টুডিওতে ছবি তুলছেন। শোকার্ত মুহূর্তকে এভাবে উপস্থাপন করা অশোভন বলে অনেকেই মনে করেন। বর্তমানে কম্পিউটারভিত্তিক প্রিন্ট করার সুবিধা থাকায় সেই সব সংগঠন মৃতের ছবি দিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে বড় বড় শোক ব্যানার তৈরি করে মৃতের উঠানে টানিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করে না। মৃত ব্যক্তি নাম ডাকওয়ালা হলে তো প্রচুর সংখ্যক ব্যানার শোভা পায়। শত শত ফুল শ্রদ্ধাঞ্জলিতে যেমন শব ঢেকে যায়, তেমনি ব্যানারে ব্যানারে উঠোনও ভরে উঠে। সেখানে কাদের ব্যানার কত বড় ও রকমের হবে তার একটা সুপ্ত প্রতিযোগিতাও লক্ষ্য করা যায়। এ শোক ব্যানারগুলো অনেকদিন পর্যন্ত সেখানে টানিয়ে থাকে।সেটাও এক ধরণের প্রচারণা।
শবাধারকে মারমারা ‘আলং’ বলে। এগুলো চিড়াই কাঠ দিয়ে কারিগড় দ্বারা বানিয়ে নেওয়া হয়। সাথে রঙিন কাগজ দিয়ে কারুকাজ সাজিয়ে আলং সাজানো হয়। কাজগুলো সময় সাপেক্ষও বটে। কিন্তু এখন এসব দ্রব্যাদি স্থানীয় হাট-বাজার থেকে সহজে কিনতে পাওয়া যায়। কষ্ট করে একাধিক কারিগড় দিয়ে বানানোর প্রয়োজন পড়ে না। শুধু প্রতীকস্বরূপ বেত দিয়ে উটপাখির নমুনা বানিয়ে শবাধারে বসিয়ে দিলেই হলো।
মারমা সমাজে চলমান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কয়েকটি ধাপ যেমন- মরার ঢোল না বাজানো, মরার পুস্তক:-নিবেং-নেসু পাঠ না করার ব্যাপারে কারো কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়না। অথচ ঘরের বাইরে কেউ মারা গেলে ঘরে তুলতে সমাজ থেকে এখনও তুমুল প্রতিবাদ আসে। অমঙ্গল ঢুকেছে, সমাজ গেল বলে নানা রব উঠে। আবার প্রথার মোড়কে নতুন উপাদান যুক্ত হওয়া যেমন- মৃতের হাতের উপর টাকার স্তুপ তৈরি করা, মৃতের ঘরে হালকা আপ্যায়ন, মৃতের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, অসংখ্য শোকবার্তা টানিয়ে সেখানে সময় নিয়ে সংরক্ষণ করার বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না শত দৃষ্টিকটু হলেও। মারমা জনগোষ্ঠীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ধারার এই যে রূপান্তর হয়ে চলেছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়েÑ এর যে শেষ কোথায় তা কেউ বলতে পারেনা। অনুমান করাও কঠিন। প্রথা তার সুবিধামত বদলে যাচ্ছে। আগামিতে মারমা সমাজে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথার বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না বলে ধারণা করা যায়।
Breraking
- পদ্ম সেতু উদ্বোধনে রাঙামাটিতে শোভাযাত্রা
- নাশকতার অভিযোগে জামায়াতের চার নেতা আটক: মুচলেকায় ছেড়ে দিল পুলিশ
- রাজস্থলীতে গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার
- কাপ্তাই থানা পুলিশের আনন্দ র্যালি
- পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে লংগদুতে আনন্দ মিছিল
- লামায় কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের আনন্দ র্যালি
- পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে লক্ষীছড়িতে বর্ণাঢ্য র্যালি
- বান্দরবানে মধুমাসের ফলে সয়লাব বাজার