জিয়াউল জিয়া
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণি, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি ও ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণিতেও বই পাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুরা। ২০২০ সালে তৃতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণিতেও মাতৃভাষায় বই পাবে রাঙামাটির চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে থেকে জানা যায়, মোট ২৯ হাজার ৮০৬ শিক্ষার্থী ৬৬ হাজার ২৫০টি মাতৃভাষার বই পাবে। যার মধ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রাঙামাটির ১০ উপজেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিকে প্রতি জনে দুটি করে ১৫ হাজার ৮২০টি বই, প্রথম শ্রেণিতে প্রতি জনে তিনটি করে ২২ হাজার ৪১৬টি বই, দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রতি জনে তিনটি করে ২২ হাজার ৬৩৫টি বই ও তৃতীয় শ্রেণিতে প্রতি জনে একটি করে ৬ হাজার ৮৭৯টি বই বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক অফিস সূত্রে থেকে আরও জানা যায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ শিক্ষায় রাঙামাটির ১০ উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থী ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই পাবে। জেলায় বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭০৭। তবে এনজিও, কিন্ডারগার্টেন, পরীক্ষণ বিদ্যালয়সহ মোট প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৬৪টিতে দাঁড়িয়েছে।
চাকমা ভাষার প্রশিক্ষক প্রসন্ন কুমার চাকমা বলেন, এখনো ভালো করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়নি। যে উদ্দেশ্যে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমার কিছু প্রস্তাবনা ছিল যেমন- প্রতিটি শিক্ষককে প্রশিক্ষিত করতে হবে। মাতৃভাষার পাঠদান ক্লাস রুটিনে অন্তর্ভুক্তি করা। স্কুলগুলোতে পাঠদানের কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা মাধ্যমে শিক্ষার মান যাচাই করা।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রাঙামাটির ১০ উপজেলার ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিশু বই উৎসবের মধ্য দিয়ে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি নতুন বই পাবে। এছাড়া চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ জন শিশু ৬৬ হাজার ২৫০টি মাতৃভাষার বই পাবে।
শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলত সরকার ২০১৭ সাল থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক দিচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এখন তৃতীয় পর্যন্ত শিশুরা মাতৃভাষায় বই পাচ্ছে। পাঁচটি মাতৃভাষায় বই দেয়া হলেও পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা শিশুরা বই পাচ্ছে। অন্যান্য যেসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুরা রয়েছে, তাদের মাতৃভাষায় পাঠদানে সরকারের ইতিবাচক ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এরই মধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে বই উৎসব সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি সারা দেশের সঙ্গে একযোগে রাঙামাটিতে জেলাতেও বই উৎসব অনুষ্ঠিতহবে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ৪৭ বছরে ২০১৭ সাল থেকে দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় পড়াশোনার জন্য বই বিতরণ করে সরকার। তখন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, এবং সাদ্রি এই পাঁচ ভাষায়। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষি শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক বই পায়।