
খাগড়াছড়ির সর্বকনিষ্ট পৌরসভার নাম ‘মাটিরাঙ্গা পৌরসভ’’। যা ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা পায়। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ অতিবাহিত করলেও পৌর ভবনেই আটকে আছে পৌরসভার কর্মযজ্ঞ। এখানে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ আর ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ছাড়া নাগরিক সেবা যেন সোনার হরিণ।
বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুতায়ন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাকে সঙ্গী করে পথচলা এ পৌরসভা যেন নাগরিকদের গলার কাটা। নাগরিক সেবা বঞ্চিত পৌর নাগরিকদের অনেকেই ঠাট্টা করে নিজেদেরকে ‘হইরাসভা’র বাসিন্দা বলে দাবি করে থাকে।
বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ পৌরসভায় রাজস্ব আদায় বাড়লেও নাগরিক পরিসেবা বাড়েনি। প্রতিষ্ঠার পর দেড়যুগ পেরুলেও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা বেহাল। বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নেই। শহরের প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ সড়কেরই অবস্থা বেহাল। পৌর শহরের কোথাও নেই ময়রা ফেলার ডাস্টবিন। যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ডের হাতিয়াপাড়া, ২নং ও ৪নং ওয়ার্ডের একাংশে এখনো বিদ্যুতের আলোর দেখা মেলেনি। যেখানে এখনো হারিকেন বা কুপি বাতিই পৌর নাগরিকদের ভরসা। পৌরসভার প্রধান সড়কসহ কয়েকটি এলাকায় সড়কবাতি থাকলেও বেশিরভাগই জ্বলে না।
‘গ’ শ্রেণী থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পরে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও পৌর নাগরিকদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি। মাটিরাঙ্গা পৌরসভার আয়তন ১০ বর্গকিলোমিটার। ২৫.৫০ বর্গ কিলোমটার আয়তনের এ পৌরসসভার জনসংখ্যা ৩৫ হাজারেরও বেশি।
এ পৌর শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের প্রধান সড়কে পানি জমে যায়। আর তখন ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানির মিতালিও ঘটে এ সড়কে। খোদ পৌরসভার গেইটেই পানি আর ময়লার স্তূপ পৌরসভার বেহাল অবস্থার কথা জানান দেয়।
মাটিরাঙ্গা পৌর শহরের প্রধান সড়কসহ গলিগুলোতে পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো বর্জ্য ও আবর্জনায় ভরে আছে। পানি যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। রাস্তা ও নালা একাকার। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য পড়ে আছে। এসব থেকে দুর্গন্ধ বের হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। শহরের কোথাও ময়লা ফেলার সুনির্দিষ্ট স্থান ও ডাস্টবিন না থাকায় পৌরবাসী পলিথিনে ভরে সড়কেই ফেলে রাখছেন আবর্জনা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে সড়ক ও পাশের নালাগুলোতে। বেশির ভাগ নালার কোনো ঢাকনা নেই।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত চৌধুরীপাড়া এলাকায় সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই সেখানকার কাঁচা সড়কে পানি জমে যায়। নাগরিকদের কাঁদা মাড়িয়েই নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে হয়।
মাটিরাঙ্গা পৌর সদরের বাসিন্দা মো: নুরুল হক সহ একাধিক নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, নাগরিক সনদপত্র, ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ছাড়া আর কোন সেবা এখানে মেলে না। একাধিক কাউন্সিলর পৌর সভার বেহাল দশার জন্য পৌর মেয়র মো: শামছুল হককে দায়ী করে বলেন, মেয়রের মর্জি মতো পৌরসভার কর্মকান্ড পরিচালনার কারনেই কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি।
আবার এই দিকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার নেই কোন স্থায়ী হাটবাজার। পৌরসভার মুল সড়কে যত্রতত্র ভাবে রাস্তার উপরে হাট বাজার পণ্য রাখা, বেচা বিক্রি ও ওঠা নামার কারনে গাড়ি চলাচলসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, যেন দেখার কেউ নেই। খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের উপরেই অবৈধ ভাবে বসেছে হাট। সড়কের দু’পাশ জুড়ে সারি সারি ট্রাক, মোটরসাইকেল, লাকড়ি, রড, স্তুপের কারণে যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচল অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। একদিকে অবৈধ ভাবে দখল আর অন্যদিকে ব্যস্ত এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন দু‘য়ে মিলে তৈরি হয়েছে অসহনীয় যানজট। হাটবাজার স্থানান্তর এর স্থায়ী সমাধান চান পৌরবাসী ও ব্যবসায়ীরা।
কাউন্সিলরদের অভিযোগ অস্বীকার করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো: শামছুল হক বলেন, বরাদ্দ অনুপাতে পৌরসভা আয়তনে বড় হওয়ার কারণে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উন্নয়ন হচ্ছে। সম্প্রতি ৯টি ওয়ার্ডে নতুন করে প্রকল্প গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এ পৌরসভা উন্নয়নের গতিধারায় ফিরবে।