লামা প্রতিনিধি ॥
মাতামুহুরী নদী ভাঙণের ফলে নদী থেকে একটি বৌদ্ধ বিহারের মূল ভবন ও চেরাং ঘরের দূরত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫-২০ ফুটে। হঠাৎ করে ভাঙণের কবলে পড়ে নদীতে মিলে গেছে ৩০ শতকের একটি বাঁশ বাগানসহ পাড়ার অর্ধেক অংশ। এখন বড় আকারে ফাটল দেখা দিয়েছে ভবনের আশাপাশে। ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে সীমানা প্রচীরও। এ রকম বিপদ মাথায় নিয়েই চলছে বান্দরবানের লামা পৌরসভা এলাকার শীলেরতুয়া মার্মা পাড়া বৌদ্ধ বিহারটি। তাও গত প্রায় ৭-৮দিন ধরে। এ নিয়ে আতংকে আছেন বৌদ্ধ বিহারের ধর্মীয় দায়ক-দায়িকাগন। তাই জরুরি ভিত্তিতে মাতামুহুরী নদীর এ স্থানের তীর সংরক্ষণে ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বৌদ্ধ বিহারটি। বিহার রক্ষায় দ্রুত ব্লক বাঁধ নির্মাণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমিপর সু-দৃষ্টি কামনা করেন শীলেরতুয়া মার্মা পাড়াবাসী।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালের দিকে লামা পৌরসভা এলাকার শীলেরতুয়া মার্মা পাড়ার প্রয়াত কারবারী ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ¤্রাছাথোয়াই মার্মা বৌদ্ধ বিহারটি প্রতিষ্ঠান করেন। তখন পাশদিয়ে বয়ে চলা মাতামুহুরী নদী ছিল সাড়ে ৩০০ফুটেরও বেশি দূরে। গেল বছরগুলোর বর্ষা মৌসুমের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির ¯্রােতের টানে আস্তে আস্তে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় প্রায় ৪০ শতক জমি। তবে গত কয়েক বছর বৌদ্ধ বিহারে ভাঙ্গণ দেখা না গেলেও চলতি মৌসুমে হঠাৎ করে ভাঙ্গণ দেখা দেয়। এতে বিহার সংলগ্ন একটি বাঁশ বাগান ও বৌদ্ধ বিহারের সীমানা প্রচীর ধসে পড়ে। পাশাপাশি ছোট বড় ফাটলও দেখা দেয়। আবারো প্রবল বর্ষণ শুরু হলে পানির ¯্রােতের টানে নদীতে ধসে পড়তে পারে বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে নির্মিত বিহার ভবন ও চেরাং ঘরটি।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কথা হয় শীলেরতুয়া মার্মা পাড়া বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মংপ্রু মার্মা, পাড়ার বাসিন্দা ক্যজারি মার্মা, হ্লাপোজাই মার্মা ও মংছাথোয়াই মার্মার সাথে। তারা এক সূরে জানায়, গত বছর থেকে বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন উত্তর পাশে মাতামুহুরী নদীর ওপর নতুনভাবে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে ব্রিজের পিলারের কারণে নদীর পানির গতি পরিবর্তন হয়ে বিহারের পূর্বপাশের তলদেশে ব্যাপক গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে বিহারের একাংশ নদীতে ধসে পড়েছে। আবারো বৃষ্টি হলে পুরো বিহার ভবনটি নদীতে ধসে পড়তে পারে। তাই নদী সংরক্ষণের আওতায় ব্লক বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে দ্রুত ভাঙ্গণ রোধে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমিপর সু-দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
নদী ভাঙ্গনে বৌদ্ধ বিহারের একাংশ ধসে পড়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর উশে থোয়াই মার্মা বলেন, শীলেরতুয়া মার্মা পাড়ার বৌদ্ধ বিহার ভাঙ্গণের বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌরসভা মেয়রকে জানিয়েছি। বিহারের একাংশ ধসে পড়ায় দায়ক দায়িকারা আতঙ্কে আছেন। তাই দ্রুত ভাঙ্গণ রোধে ব্লক বাঁধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। না হয় যে কোন মুহূর্তে বিহারের বাকি অংশ নদীতে ধসে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল বলেন, হঠাৎ করে শীলেরতুয়া মার্মা পাড়ার বৌদ্ধ বিহারের একাংশ ধসে পড়ার খবর পেয়েছি। ভাঙ্গণ রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি ভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করবেন।