বিয়ের ১৩ মাসেই ঝরে গেছে যে ফুল !

যৌতুক দিকে ব্যর্থ হওয়ায় এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে রাঙামাটির কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত নারীর মা নাছিমা আক্তার। করোনাকালিন সময়ে মারা যাওয়ার প্রায় চারমাস পর রাঙামাটি জেলার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহযোগিতায় মামলা করেছেন হতদরিদ্র মা।
কমিটির পক্ষ থেকে আইনজীবি রাশেদ ইকবালকে বাদীকে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে।
বাদী নাছিমা আক্তার তার কণ্যার হত্যাকারি হিসেবে মেয়ের স্বামী নুরুল আমিন রাকিব,শ্বশুর নুর মিয়া,শ^াশুড়ী মর্জিনা বেগম, ও বাইট্টা নামের আরেকজনকে আসামী করেছেন।
মামলার এজাহারে তিনি জানিয়েছেন, তার কন্যা নাছরিন আক্তারের সাথে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সামাজিকভাবে বিয়ে হয় নুরুল আমিন রাকিবের। বিয়ের পর থেকে ৭ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে তার মেয়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে রাকিব ও তার পরিবারের সদস্যরা। এরই মধ্যে তাদের ঘরে একটি কণ্যা সন্তানের জন্ম হলে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে বাদীনি তার কণ্যাকে জেলা আইনগত সহায়তা কমিটির কাছে নিয়ে গেলে তাদের মধ্যস্থতায় এবং ভবিষ্যতে আর অত্যাচার নির্যাতন করবে না এমন আশ^াসে ঘরে ফিরিয়ে নেয়। সেই সময় একটি সমঝোতা চুক্তিও সাক্ষরিত হয়। কিন্তু জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সমঝোতা সত্ত্বেও মেয়েকে ঘরে নেয়ার পর আবারো নির্যাতন শুরু করে রাবিকের পরিবার। ফলে নাছরিন আক্তার বাধ্য হয়ে এক কাপড়ে পিতা-মাতার বাড়িতে পালিয়ে যায়। সেই থেকে মেয়েটি বাবার বাড়ীতেই অবস্থান করছিলো। কিন্তু ২৪ এপ্রিল লক ডাউনের মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে শহরের পুরাতন বাস স্টেশন এলাকায় আনিছুর রহমানের বাসার পাশের গলিতে মেয়েটির স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা তার বাবার বাড়িতে আসে এবং মেয়েটিকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা কথা বলে। আলোচনার এক পর্যায়ে মেয়েটির স্বামী মেয়েটিকে একপাশে ডেকে নেয় কথা আছে বলে। কিন্তু কিছুক্ষন পরই মেয়েটির আত্মচিৎকার ও গোঙানির আওয়াজে এলাকাবাসি এগিয়ে গেলে রাকিব পালাইয়া যায় এবং সেই সময় গলায় ওড়না প্যাচানো নাছরিন আক্তারকে মৃত পাওয়া যায়।
তাৎক্ষনিক পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায় এবং এই ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে। যদিও মেয়েটির বাবা ও মা তখনই এটিকে হত্যাকান্ড বলে দাবি করলেও পুলিশের অপমৃত্যু মামলা দায়েরকে রহস্যজনক মনে করছেন তারা। পরে লকডাউনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় জেলা আইনগত সহায়তা কমিটির সহযোগিতা নিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তারা।
নাছরিন আক্তারের পিতা মো: শাহ হোসেন অভিযোগ করেছেন, আমার মেয়েকে স্বামী ডেকে নিলো,তার সাথে কথা বলতে, আমার সেই মেয়ে কেনো আত্মহত্যা করবে ? এটা অসম্ভব। তারা যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই এই সমাজের কাছে।’
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাঙামাটির কোতয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব জানিয়েছেন, আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির লাশ পাই। তাৎক্ষনিক উপস্থিতদের সাথে কথা বলে আত্মহত্যা বলে বিষয়টি জেনে আমরা অপমৃত্যু মামলা করেছিলাম এবং লাশের পোস্টমর্টেম করি। কয়েকদিন আগে পাওয়া ময়না তদন্ত রিপোর্ট এসেছে। মেয়েটির মা আদালতে মামলা করেছেন,পুলিশ আদালতে ময়না তদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট জমা দিয়েছে।’
আইনজীবি অ্যাডভোকেট রাশেদ ইকবাল জানিয়েছেন, মেয়েটির বিয়ের পর থেকে স্বামী যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং মারধর করতো। তখন মেয়েটির পরিবার লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে অভিযোগ করে। এরপর লিগ্যাল এইড কমিটি তাদের ডেকে সমঝোতা করে দেয়। কিন্তু ছেলেটির পরিবার সমঝোতা ভেঙ্গে আবারো মেয়েটির উপর নিপিড়ন শুরু করলে মেয়েটি বাবার বাড়িতে চলে যায়। সেখানে থাকার সময় মেয়েটির স্বামী শ^শুর বাড়িতে যায় মেয়েটিকে ও তার সন্তানকে আনতে। তখন মেয়ের সাথে কথা বলার কথা বলে ডেকে নিয়ে ওড়না দিয়ে পেছিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে শিশুকণ্যাটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আবার এসে সে স্বপ্রণোদিত হয়ে ‘অপমৃত্যু মামলা’ হিসেবে মামলা দায়ের করে। কিন্তু লকডাউনের কারণে মেয়েটির পরিবার আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে মেয়েটির বাবা মা আবার লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে আসলে কমিটি মামলা দায়ের করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি মেয়েটির পরিবারের পক্ষে আইনগতভাবে বিষয়টি দেখছি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেখে এটিকে হত্যা হিসেবেই মনে হয়েছে আমাদের কাছে,তাই আমরা মামলা দায়ের করেছি।