সাইফুল হাসান ॥
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির রূপ বৈচিত্র উপভোগ করতে সারা বছরই দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মূখর হয়ে থাকে হ্রদ পাহাড়ের এই দেশ। দূরে সুউচ্চ বড় বড় পাহাড় আর নীল জলরাশিতে ঘেরা কাপ্তাই হ্রদ, যার রূপ ও সৌন্দর্য নিমিষে ভুলিয়ে দিবে সকল দুঃখ, কষ্ট ও ক্লান্তিকে। তাইতে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে এই জেলা।
পর্যটকদের জন্য রাঙামাটির একটি আকর্ষণীয় ও পছন্দের প্রাণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ‘বার্গি লেক ভ্যালি’। পাহাড়ের বিলুপ্ত একটি ঐতিহ্যবাহী পাখির নামেই গড়া এই পর্যটন কেন্দ্রটি। শহর থেকে প্রায় ০৮ কিলোমিটার দূরে এই পর্যটন কেন্দ্র। ১০ একর জমিতে ২০২০ সালে কাজ শুরু করে, ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করা পর্যটন কেন্দ্রটিতে রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট, যে রেস্টুরেন্ট নজর কাড়ে যে কারোর। রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়েছে বার্গি পাখির আদলে। যেনো বার্গি পাখি তার দুইটি ডানা দুইদিকে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে কায়াকিং, পিকনিক স্পট, ক্যাম্পিং এবং তৈরি করা হচ্ছে হ্রদের পাড়ে দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। এছাড়া এখানে রয়েছে ছোট ছোট আড্ডা দেওয়ার মাচাং ঘর। তৈরি করা হয়েছে পাহাড়িদের বাসস্থানের আদলে একটি মাচাং ঘর। যা পর্যটকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে রাঙামাটিতে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যকে।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বার্গি লেক ভ্যালিতে বেড়াতে আসা সাদিয়া জাহান বলেন, রাঙামাটিতে বিয়ের পরে প্রথম বেড়াতে আসা। বেড়াতে যখন আসবো তাই একা আসিনি। এসেছি আমরা নতুন পরিবার শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে সাথে নিয়ে। রাঙামাটিতে অনেক কিছুই দেখেছি কিন্তু এই বিকাল বেলায় বার্গিতে এসে অনেক বেশি ভালো লাগছে। যেনো একটু প্রশান্তি খুঁজে পেলাম। চারদিকে এত সুন্দর পরিবেশ, হ্রদের পাড়ে পাহাড়ে এই পর্যটন কেন্দ্রটি। পরিবার নিয়ে বিকালে বসার ও আড্ডা দেবার জন্য উত্তম একটি জায়গা।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা ভার্সিটির কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবি মিলে রাঙামাটিতে বেড়াতে এসেছি। সকালে ঝরণা ঘুরে বিকালে এই বার্গিতে আসা। বার্গি আসলেই সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানের পরিবেশ শান্ত, খুবই ভালো লাগছে। বন্ধুদের সাথে কায়াকিং করেছি এখানে। এখানে এখনো রিসোর্ট গুলো তৈরি হয়নি। না হয় এখানে থাকার জন্য চেষ্টা করতাম। রাতে নিশ্চয় খুব ভালো লাগতো। তবে আশা করি রিসোর্ট হয়ে গেলে এখানে আসবো এবং রাত্রিযাপন করবো।
লন্ডন প্রবাসী দম্পতি শাকিল মাহমুদ ও লিপি আহমেদ বলেন, আমরা রাঙামাটিতে বেড়াতে এসেছি এই প্রথমবার। বিয়ের পরে বহুবার আসবো ভেবেছি কিন্তু আসা হয়নি, পরে তো লন্ডন চলে গিয়েছি। প্রায় ৬ বছর পর দেশে এসেছি, তাই বের হলাম দেশকে দেখতে। রাঙ্গামাটির কথা যা শুনেছি সত্যি তাই, অনেক সুন্দর এই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। বার্গি তাদের মধ্যে একটি অন্যতম। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে এবং বলতে পারি আবারও যদি কখনো রাঙামাটিতে আসা হয় তো একবার অন্তত বার্গিতে আসবো।
‘বার্গি লেক ভ্যালির’ স্বত্বাধিকারী বাপ্পি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমরা ৪ জন মিলে প্রায় ১০ একর জায়গার ওপর এই ‘বার্গি লেক ভ্যালি’র যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে আমাদের এখানে রেস্টুরেন্ট, ক্যাম্পিং জোন, পিকনিক স্পট ও কায়কিং রয়েছে। এছাড়া আমাদের এখানে প্রায় ১৮ টি রিসোর্ট তৈরির কাজ চলছে এবং একটি সুইমিংপুল তৈরি করা হচ্ছে। আশা করছি আগামী বছর ২০২৩ সালে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘বার্গি লেক ভ্যালি’ উপস্থাপন করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটিতে এখন নতুন নতুন অনেক উদ্যোক্তা উঠে এসেছে তাদেরকে যদি ভালোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় তাহলে পর্যটন সেক্টরে আরও বেশি কাজ করা সম্ভব হবে সকলের পক্ষে। পর্যটন সেক্টরের অন্যতম বাধা দক্ষ জনবল। আমাদের উচিত সরকারি ও বেসরকারিভাবে পর্যটন সেক্টরে কাজ করার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা।
বাপ্পি আরও বলেন, ট্যুরিজম সেক্টর অন্য জেলাগুলোর তুলনায় রাঙামাটি অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে, তার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি আবারও এই সেক্টর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাই আশা করি সকলের প্রচেষ্টায় আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো এবং রাঙামাটিকে একটি সুন্দর পর্যটন নগরী হিসেবে দেশে ও দেশের বাহিরে সবার কাছে তুলে ধরতে পারবো।