গাছটির অগণিত ফল হয়। ফল পাকলে হয় লাল। খেতে খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। আর গাছটি মাটির পানি ধারণে অন্যতম ভূমিকা রাখে। স্থানীয় চাকমা ভাষায় নাম তার ‘চরবেক’ গাছ। বাংলার নাম জানা নেই। তবে এটি ডুমুর প্রজাতির একটি গাছ। গাছটির গোড়া হতে প্রায় অনেক উঁচুতে ফল ধরতে থাকে। যা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ভরপুর পরিপক্ক ফলন হয়।
বিশেষ করে গোড়ার অংশে বেশি ফল ধরে। এ গাছের ফলকে ‘চরবেক গুলো’ বলা হয়। তার কারণ, চাকমারা তাদের ভাষায় ‘ফল’কে ‘গুলো’ বলে থাকে। সুতরাং এ গাছের ফলকে তাদের ভাষায় ‘চরবেকগুলো’ বলা হয়। গাছটির ফল কেবল মানুষই খাই না। খেতে পশু-পাখিদেরও খুব প্রিয়। ফলের ভিতরে দানা দানা বীজের সাথে আঠালো এক ধরণের জেলি রয়েছে। এ জেলিটি খেতে খুবই সুস্বাদু, মিষ্টি।
বন্য পশুর মধ্যে হরিণ এবং ভালুকের এটি একটি খুবই মজার ও আকর্ষণীয় ফল বা খাবার। ফলের সময় এ গাছে হরিণরা অবশ্যই ফল খেতে আসে। আগেকার দিনে শিকারীরা হরিণ শিকার করার জন্য এ গাছের গোড়ার সামান্য দূরে তৃণ লতা-পাতা দিয়ে আড়াল তৈরি করে সেখানে অস্ত্র দিয়ে তোপ মেরে বসে থাকত। আর যখন হরিণ ফল খেতে আসত তখনই গুলিস্যুট করা হতবলে শোনা গেছে।
গাছটি অধিকাংশ জন্মায় ছড়া বা খালের পাড়ের ঢালু জায়গায়। আকৃতি হলো নিচের দিকে হেলানো বা বাঁকানো। প্রত্যেকটি গাছ অবশ্যই থাকবে হেলানো। তবে গাছটির এ হেলানোর পেছনে চাকমা সমাজে পূর্ব পুরুষদের একটি লোক কাহিনী ছিল যা এখনকার প্রজন্ম তার পুরো কাহিনী জানেন না। এ কাহিনী জানতে খোঁজ করে কেবল জানা গেছে যে, পৃথিবীতে মানব জাতি বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য যোগান নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় মা’লক্ষী তাকে লাথি দিয়েছে। তাই গাছটি হেলে পড়ে যায়। এ থেকেই গাছের জাতটি জন্মানোর পর হেলিয়ে থাকে।
গাছটি মাটিতে পানি ধারণ করে এবং পানি সরবরাহ করে থাকে বলে গোড়ায় থাকে পানিযুক্ত স্যাঁতস্যাঁতে ভাব এবং বিশেষ করে পানির উৎসের কাছাকাছি স্থানে অধিকাংশ জন্মে থাকে। এ কারণেই ধরে নেয়া যায় চরবেক গাছটি মাটির পানি ধারণ করে এবং পানি সরবরাহ করে থাকে।
কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশবান্ধব এবং পানি সরবরাহকারী এমন উপকারী প্রজাতির গাছটি এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। পাহাড়ের প্রত্যেক ছড়া ও ঝিরিতে এ গাছটি চোখে পড়ত। কিন্তু এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
প্রকৃতি তথা জীব জগতের কল্যাণে জলবায়ু সংরক্ষণে গাছটির সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রজন্ম বৃদ্ধি করা আমাদের একান্ত কর্তব্য বলে মনে করছি।