মিশু মল্লিক
পার্বত্য জনপদের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসসহ আরো চারটি উপ-কেন্দ্রে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত একঘন্টার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। প্রথম দিনের এ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫২৬৯ জন।
ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিনের পরীক্ষায় উৎসাহ উদ্দীপনার পাশাপাশি পরীলক্ষিত হয় কিছু অব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অনেক কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের । সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের দূরবর্তী জেলাগুলো থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে আসা পরীক্ষার্থীরা বেশ কয়েকদিন আগেই শহরে প্রবেশ করেন। তারা রাঙামাটির বিভিন্ন হোটেল ও মোটেলে অবস্থান করেন। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন রাত থেকেই পুরো শহর জুড়ে ছিল বিদ্যুৎের লুকোচুরি খেলা। এমনকি পরীক্ষার দিন সকাল থেকে বিদ্যুৎ ছিলনা শহরের ভেদভেদী থেকে কোর্ট বিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত। অথচ এই এলাকাগুলোর মধ্যেই ছিল পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত রাঙামাটি সরকারি কলেজ এবং রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয় এই দুটি উপকেন্দ্র।
বিদ্যুৎ না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর আশেপাশের খাবার হোটেলগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবি হোটেল মালিকদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙামাটি সরকারি কলেজ সংলগ্ন একজন হোটেল মালিক বলেন, সকাল থেকে আমাদের দোকানে কাস্টমারের ভিড়। যারা চট্টগ্রাম থেকে আজ সকালে রাঙামাটি এসেছেন তাদের অনেকেই নাস্তা করতে এসে ফেরত গিয়েছেন। কারণ সকাল থেকেই বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা পানির মোটরসহ আরো প্রয়োজনীয় অনেক কিছু চালাতে পারিনি। তারউপর ভ্যাপসা গরমে ফ্যানও চলছিল না। তাই অনেকে বিরক্ত হয়েই দোকান থেকে বেরিয়ে গেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে যারা সকালে রওনা হয়ে রাঙামাটি এসেছেন তাদের বিশ্রাম বা শৌচাগারের কোন ব্যবস্থা ছিলনা অনেক কেন্দ্রে। পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের স্বজনদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। পরীক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের আবাসিক হোটেল বা কেন্দ্রের আশেপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে বাথরুমে যেতে দেখা যায়। আর পরীক্ষার্থীদের স্বজনদের রাস্তায় বসে অপেক্ষা করতেও দেখা যায়।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পরীক্ষার্থী শর্মি সাহা বলেন, আমরা চট্টগ্রাম থেকে আসার পর গাড়ি থেকে নেমে যে একটু টয়লেটে যাবো সেই ব্যবস্থাও কোথাও নেই। কারণ পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আবাসিক হোটেলে বাথরুমে গিয়েছি।
অভিভাবক জুয়েল খান বলেন, এই কেন্দ্রের আশেপাশে কোন গণশৌচাগার বা বিশ্রাম নেয়ার মত জায়গা নেই। কেন্দ্রের ভেতরেও বাথরুমে যেতে দিচ্ছেনা। ভ্যাপসা গরমে রাস্তায় বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আমাদের। এই ব্যাপারে পরীক্ষা গ্রহণকারী কতৃপক্ষের আরো আন্তরিক হওয়া উচিত ছিল।
আরেক অভিভাবক নাসির হোসেন বলেন, শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটি এসেছি। রাতেও বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করছিলো বারবার। এতে করে পরীক্ষার্থীরা ভালোভাবে ঘুমাতেও পারেনি। আবার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক জায়গায় পানির সংকটও শুরু হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতেও বাথরুমের কোন ব্যবস্থা করেনি।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জালাল উদ্দীন বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহের লক্ষ্যে আজ গাছপালা কাটার কারণে কিছু এলাকাতে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার শিডিউলটি আমরা এক সপ্তাহ আগেই করেছি এবং এই এলাকার অফিসগুলোতে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। আমরা রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়কেও জানিয়েছিলাম এই ব্যাপারে। উনারা বলেছিলেন উনাদের পরীক্ষা আছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময় ব্যতীত বিদ্যুৎ থাকবে না এটাও আমরা উনাদের জানিয়ে দিয়েছিলাম। তাই বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার ব্যাপারটি উনারা অবগত আছেন।
গতরাতের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, সারাদেশে যেমন লোডশেডিং হচ্ছে তেমনি রাঙামাটিতেও লোডশেডিং হচ্ছে।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাঞ্চন চাকমা বলেন, পরীক্ষার দিনগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলাম। যেহেতু সারাদেশেই বিদ্যুৎ ঘাটতি বিদ্যমান তাই সরকারিভাবে হয়তো বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উনারা। কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষার কিছু আগে বিদ্যুৎ এসেছে বলে জানতে পেরেছি আমরা। আগামী মাসে আরো দুটি পরীক্ষা রয়েছে। সেই দিনগুলোতে যাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে সেই ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগকে জানাবো আমরা।
বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার বিষয়টি তিনি অবগত নন জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হবে এই সংক্রান্ত কোন চিঠি আমাদের দেয়া হয়েছে কিনা সেটি আমার জানা নেই। যদি দেয়া হয়ে থাকতো তাহলে অফিস থেকে নিশ্চয় আমাকে জানানো হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।