২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করা মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান প্রায় দেড় বছর মধ্যে বদলি হচ্ছে যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের অন্য এক উচ্চ পদে। তিরি আজ(মঙ্গলবার) দুপুর বারোটার মধ্যে রাঙামাটি ত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর বিদায়বেলায় তিনি রাঙামাটির সকল সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সংবাদকর্মীদের সাথে বিদায়ী শুভেচ্ছার আয়োজন করেন।
সোমবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে রাঙামাটির বিভিন্ন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং সংবাদকর্মীরা তাঁর সাথে বিদায়ী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল- হক বলেন, যে দেড় বছর জেলা প্রশাসক হিসাবে আপনি এখানে ছিলেন তা কম সময় নয়। আপনি যোগদান করার পর পরই রাঙামাটি শহরের মহিলা কলেজ এলাকায় ভবন ধস এবং তার কিছুদিন পর থেকে একের পর এক দুর্ঘটনা মোকাবেলা করেছেন আপনি। পাহাড় ধসের মত অনেক বড় এক দুর্ঘটনা মোকাবেলা করেছেন। দুর্ঘটনাকে ঘিরেই আপনার এই দেড় বছরের কর্ম জীবন ছিলো। কিন্তু আপনি সকল দুর্ঘটনাই দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেছেন। আপনি এখন যে মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন সেখানে আপনি আমাদের এই অঞ্চলের জন্যে করার মত অনেক কিছুই আছে। তাই আশা করবো আপনি আমাদেরকে ভুলে যাবেন না।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বেলায়ত হোসেন ভূঁইয়া বেলাল বলেন, কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মধ্যে দিয়েই ছিলো আপনার কর্ম জীবন। আপনাকে আমরা কখনো ভুলবো না। এই রাঙামাটি ও রাঙামাটির মানুষ আপনাকে মনে রাখবে। আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।
রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল বলেন, এ পৃথিবী মায়ায় ভরা। আপনি ও এর আগেও যারা এখানে এসেছিলো এবং চলে গেছে সবাই আমাদের প্রিয় ছিলো। আপনি চলে যাচ্ছেন এটা শুনে আমাদের খারাপ লাগছে। আপনি রাঙামাটির চরম মুহূর্তে যখন পাহাড় ধস হয়ে এ অঞ্চলের মানুষ বিপদগস্ত তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পাহাড় ধসের পরে ব্যবসা বাণিজ্য ও দ্রব্য মূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নিজেই মাঠে নেমে গিয়েছিলেন। বিকল্প পথে পণ্য এনে রাঙামাটির মানুষকে খাদ্য যুুগিয়েছিলেন। আপনার এই অবদান প্রসংশনীয়। আমরা কখনো এ সকল ঘটনা ভুলে যাবো না।
রাঙামাটি পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ তাছাদ্দিক কবির বলেন, রাঙামাটি পাবলিক কলেজ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ কলেজের ভবন তৈরি নিয়ে নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু স্যার সব কিছুই থেকে কলেজকে বাঁচিয়ে রেখেছে। স্যারকে আমার সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মনে রাখবে।
রোভার স্কাউটস’র সম্পাদক আবছার আলী বলেন, আপনি হচ্ছেন আমাদের অভিভাবক। তাই আপনাকে আমি বিভিন্ন সময় নানান কারণে ফোন করেছি। রাতেও ফোন করে বিরক্ত করেছি। রাঙামাটির বিভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য জানানোর জন্যে আপনাকে প্রতিনিয়ত বিরক্ত করেছি। কিন্তু আপনি আমাদের ডাকে সারা দিয়ে, সব সময় আমাদের পাশে ছিলেন। রাঙামাটির বিভিন্ন দুর্যোগে আপনার কর্মকান্ড লক্ষ্যনীয়।
জাতীয় পার্টি রাঙামাটি জেলার সভাপতি শাহজাহান মোল্লা বলেন, আপনি রাঙামাটিতে যে সকল দুর্যোগ হয়েছে তাতে যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা ছিলো প্রশংসার দাবিদার।
বাংলাদেশ টেলিভিশন’র রাঙামাটি প্রতিনিধি মোস্তফা কামাল বলেন, একজন জেলা প্রশাসকের পক্ষে সকলের মন রক্ষা করা কঠিন। কিন্তু আপনার যে ভূমিকা তা দৃষ্টিগোচর হওয়ার মত। আপনার মত আগামীতে অন্যরাও এ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে কাজ করবে বলে আশা করছি।
রাঙামাটির প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক একেএম মকছুদ আহম্মেদ বলেন, যোগদানকালে তিনি বলেছিলেন আমাকে যে কোন সময় আপনাদের পাশে পাবেন। যে কোন বিষয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমরা আজ তাই দেখতে পাই। তিনি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন। তাকে যে কোন কাজে আমরা কাছে পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক যেভাবে পাহাড় ধসের সময় ভূমিকা রেখেছিলো এবং এতিম দুই সন্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিলো তা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যে মানুষকে সব সময় দেখতে পাই তিনি হচ্ছেন জেলা প্রশাসক, তাকেই সকল কাজে আমরা পাশে পাবো বলেই আশা রাখি। এছাড়া সকল কাজ করতেই এ মানুষটাকে প্রযোজন হয়। জেলা প্রশাসক জনবান্ধব হবে বলে আমাদের প্রত্যশা থাকে। ঠিক তেমনি আপনি ছিলেন একজন জনবান্ধব জেলা প্রশাসক।
রাঙামাটির প্রবীণ লোক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি একে দেওয়ান বলেন, জেলা প্রশাসক হচ্ছেন আমাদের ত্রাণকর্তা। সকল দুর্যোগে তিনি সহসের সাথে মোকাবেলা করেছেন। মেডিকেল কলেজ এবং রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ছিলো তার বিশেষ অবদান।
রাঙামাটির প্রবীণ লোক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মানিক লাল দেওয়ান বলেন, মানুষ যে কাজ করে সে কাজকে ভালোবাসতে হয়। তবেই সে তার কাজ ও দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে। এ জেলা প্রশাসকও তার কাজকে ভালোবেসে সঠিকভাবে কাজ করে গিয়েছেন।
১ Comment
যা হয়েছে ভালে হয়েছে।ওকে নিয়ে অার ধরদী দেখার দরকার নাই।