শংকর হোড় ॥
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ‘গণক’ সম্বোধন করে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, সরকার কখন থাকবে, কতদিন থাকতে পারবে সেই গণনা তিনি করছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণকে খুশি রাখতে পারলে নির্বাচনে আবারো জনগণ আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনবে। আমরা দেখেছি, বিএনপির মেয়াদ যখন শেষ হয়েছিল, তখন তাদেরকে জনগণ টেনে-হিঁচড়ে নামিয়েছে। জুনেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু হওয়াতে সারা দেশের মানুষ খুশি হলেও ফখরুল ও বিএনপি মুখে শ্রাবণের কালো মেঘ। তাদের অন্তরে খুবই বিষজ¦ালা। তারা অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। যা কখনো সফল হবে না। মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ভূমি সমস্যা ছাড়া পাহাড়ের সব সমস্যারই সমাধান হয়েছে। ভূমি সমস্যা সমাধান হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে শান্ত করতে তিনি শান্তি চুক্তি করেছিলেন, আর চুক্তির সব শব্দই বাস্তবায়ন হবে। এক্ষেত্রে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। পাহাড়ে এখনো মাঝে মাঝে রক্তপাত দেখতে পাই, এসব বন্ধ করতে হবে। রক্তপাত ঘটিয়ে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বরের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা।
কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন যত কথাই বলুক, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেবে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা থাকবে আর স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেন, আওয়ামীলীগের শক্তি ক্ষমতা নয়। আওয়ামীলীগের শক্তি জনগণ ও তার সংগঠন। এই দুই যদি দুর্বল হয়, তবে আওয়ামীলীগও দুর্বল হয়ে পড়বে। জামায়াত বিএনপির প্রভু পাকিস্তান। তাদের জন্মই হয়েছে পাকিস্তানিদের হাত ধরে। তারা পাকিস্তানের মদদে পরিচালিত বিধায় বাংলাদেশের অর্জন-অগ্রগতি তাদের পছন্দ হয় না। তারা শেখ হাসিনার উন্নয়নকে দু’চোখে দেখতে পারে না। পাকিস্তানের চাইতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ায় তাদের সেটা সহ্য হচ্ছে না। তাই তো তারা সারাদিন এখন বাংলাদেশকে শ্রীলংকা, আফগানিস্তানের সাথে তুলনা করছে। এদেশ রাজাকারদের দেশ নয়; রাজাকারের বাচ্চাদের দেশ নয়। তাই তো এদেশের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। বানর ভেংচি বেশি কাটলে মানুষ তাতে বিরক্ত হয়। তাই সবকিছু নিয়ে ভেংচি কাটতে যাইয়েন না। তিনি আরো বলেন, ইদানিং দেখা যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেফাঁস ও লাগামহীন কথাবার্তা বলছে। আপনাদের হুঁশিয়ার দিয়ে বলতে চাই, এভাবে কথা বলতে থাকলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আপনাদেরকে মাঠেই প্রতিহত করবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, আমি মিজা ফখরুল ও রিজভী সাহেবকে তাদের পৈত্রিক জেলার দুই ইউনিয়নের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত দেখতে বলবো, তখন তারাই মন্তব্য করবে আজকের বাংলাদেশের উন্নয়ন। শেখ হাসিনা দেশের কী উন্নয়ন করেছেন, সেটা তারা তাদের গ্রামে গেলে দু’চোখে দেখতে পারবে। তিনি বিএনপিকে বর্তমানে শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন সেটা দু’চোখ ভরে দেখার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে উজ্জীবিত করা হয়। দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই তো নিয়মিতভাবে সম্মেলন হলে দলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত থাকে। নেতৃত্বও সৃষ্টি হয়। সম্মেলন ঘিরে জেলার নেতাকর্মীদের বাইরেও সাধারণ মানুষের যে উচ্ছ্বাস সেটাই আওয়ামীলীগকে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রেরণা বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সম্মেলনের পর যারাই নেতৃত্বে আসুক না কেন কোনও দূরত্ব না রেখে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলকে এগিয়ে নিতে হবে।
এর আগে সকালে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। বিকালের দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হবে।