নির্বাচনের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহের মত। এরই মধ্যে জমে উঠেছে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনা। কর্মী সমর্থকরা প্রতিদিনই প্রচারনা চালাচ্ছেন নিজ নিজ দলের পক্ষে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারনা চালাতে গিয়ে ঘটছে নানা ঘটনা আর তা নিয়ে চলছে নানা রটনাও। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী ক্যাম্প করতে না দেয়া, উস্কানিমূলক শ্লোগান দেয়া, এমনকি হামলা পাল্টা হামলাও চলছে। আর এসব ঘটনার জন্য এক পক্ষ অপরপক্ষের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। কোনো কোনো ঘটনার জন্য অবশ্য মামলাও হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল আর দুর্বল করতে নিজেদের মতই কৌশল অবলম্বন করছে দলগুলো। প্রতিদিনই রিটার্নিং অফিসার আর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আর মৌখিক অভিযোগ জানাচ্ছেন প্রার্থী ও প্রার্থীর পক্ষের নেতাকর্মীরা। এসব অভিযোগের কিছু ভিত্তি থাকলেও অনেক অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর তাইতো আসন্ন নির্বাচনের আগে রাঙামাটির সব প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা বসেন পাশাপাশি। আর সভা শুরুর পরপরই এক প্রার্থী অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়।
জেলা বিএনপি’র সভাপতি হাজী মোঃ শাহ আলম অভিযোগ করেন, নির্বাচনী প্রচারনা শুরুর পর তার দলের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা মামলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা। তিনি অভিযোগ করেন, বাঘাইছড়িতে বিজয় দিবসের সকালে শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার পথে ছাত্রলীগ,যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ বিএনপি নেতাকর্মীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বিএনপি’র বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। পরে মামলা করতে গেলে তাদের মামলা নেয়া হয়নি। ভেদভেদিতে বিএনপি’র মিছিলে হামলা করে আওয়ামীলীগ। এতেও বেশ কয়েকজন বিএনপি কর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। জেলা বিএনপি’র সাবেক জেলা সভাপতি দীপেন দেওয়ানসহ বেশ কয়েকজনকে একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখে আওয়ামীলীগ কর্মীরা। এই ঘটনার পর বিএনপি’র ৪৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের এখন জামিন নেয়ারও সুযোগ নেই; যেহেতু কোর্ট এখন শীতকালীন অবকাশের জন্য বন্ধ রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেন, যেভাবে কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার আর মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে তাতে নির্বাচন কাকে নিয়ে করব।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জসীম উদ্দিনের পক্ষে অভিযোগ করা হয়, তারা পোস্টার লাগানোর পরে তা ঁিছড়ে ফেলে এবং সেই স্থানে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পোস্টার লাগিয়ে দেয়া হয়।
আওয়ামীলীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হাজী মোঃ কামাল উদ্দিন প্রতিপক্ষ কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বলেন, লংগদুর কালাপাকুইজ্জ্যা ইউনিয়ন সভাপতির উপর হামলা করা হয় এবং এক কর্মীকেও গুরুতর আহত করা হয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তবে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর জেএসএস প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নৌকার প্রচারনায় বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। তার নেতৃত্বে বাঘাইছড়ির উলুছড়িতে প্রচারনা চালাতে গেলে সেখানে জেএসএস’র সশস্ত্র কর্মী সমর্থকরা তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। ফলে অস্ত্রের ভয়ে তারা সেখান থেকে চলে আসে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অনুরোধ জানান তিনি।
জেএসএস প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মনিটরিং সেলের সদস্য নীলোৎপল খীসা কোনো প্রতিপক্ষের নাম উল্লেখ না করে বলেন, নির্বাচনী প্রচারনা চালানোর সময় প্রতিপক্ষের মিছিল থেকে অশ্রাব্য ভাষায় শ্লোগান দেয়া হয়েছিল। তিনি নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
সবার বক্তব্য শেষে পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবীর বলেন, অতীতের নির্বাচনে কি হয়েছে, না হয়েছে তা নিয়ে ভাবছিনা, সেটা দেখার বিষয়ও নয় কারন ওই সময় ছিলাম না। সামনে যে নির্বাচন আসছে সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুত। বিএনপি নেতাকর্মীরা অবরুদ্ধ ছিল এমন অভিযোগের জবাবে তিনি জানান, সেদিন বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। পরে পুলিশের এক সিনিয়র অফিসারকে সেখানে পাঠিয়ে দেখি অবস্থা আসলে সেরকম নয়। তিনি কোনো ধরনের অস্ত্রবাজি সামনের নির্বাচনে এখানে চলতে দেয়া হবেনা বলে জানান।
রিটার্নিং অফিসার জেলাপ্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, অতীতে অস্ত্রের ভয়ে ভোট ডাকাতি হয়েছে এসব শুনেছি। কিন্তু দিন এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সেই দিন আর নেই। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে যাতে ভোটাররা ভোট দিতে পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কোনো মোবাইল নাম্বার থেকে যদি হুমকি-ধামকি দেয়া হয় তবে সেই নাম্বার প্রশাসনের কাছে দেয়ার জন্যও তিনি অনুরোধ করেন। হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
Previous Article‘বিগত নির্বাচনের ইতিহাস ভুলে যান,ভোট ডাকাতির সুযোগ দেয়া হবে না’
Next Article চুক্তি বাস্তবায়ন বেগবান করতে ঊষাতনকে বেছে নিবে জনগণ