
গত কয়েকদিন ধরে খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের সাব্রুম সীমান্তের ফেনী নদীতে বারুণী স্নান ঘিরে ছিল স্থানীয়দের মুল আগ্রহ। বুধবার বিকাল থেকেই খাগড়াছড়িসহ আশপাশের জেলার মানুষ রামগড়ে এসে ভীড় করে। লক্ষ এপার-ওপার বাংলার মানুষের সম্মিলিত বারুণী স্নান দেখতে পাওয়া। এবং এই সুবাধে খুলে দেয়া সীমান্তে ঘুরতে যাওয়া।
তবে এপাড় থেকে সীমান্তে বিজিবির অঘোষিত শিথিলতা থাকলেও ওপাড় থেকে বিএসএফের ছিল কড়া নজড়দারি। খোলেনি সীমান্তে। আর কারণ হিসেবে জানা গেছে রোহিঙ্গা ইস্যু। মুলত সীমান্তে রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে পারে এমন আশংকায় ভারত সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তাই নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে দুই বাংলার মানুষদের। তবে অনেকেই মনে করছেন ত্রিপুরাজে বিজিপি’র নতুন সরকারও এই মিলনের পথে বাধা হিসেবেই কাজ করেছে !
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকেই চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রতি বছর ফেনী নদীতে বারুণী স্নানে মিলিত হয় দুই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ। এ মেলাকে ঘিরে দুই দেশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন। উভয় দেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে ফেনী নদী।
তারা পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পন করেন এখানে। রামগড় ও সাবরুম অংশে নদীর দুই তীরে দুই দেশের পৌরহিতরা সকালেই বসেন পূজা অর্চণার জন্য। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা ছাড়াও নিজের পুণ্যলাভ ও সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে এই বারুণী স্নানে ছুটে আসেন পূর্ণার্থীরা।
বারুণী ¯œানকে ঘিরে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নয়, ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা, মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সমাগম ঘটে এখানে। বারুণী স্নান একটি ধর্মীয় উৎসব হলেও দীর্ঘ বছর ধরে দুদেশের বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের সমাগমে এটি সার্বজনীন আনন্দ মেলার ঐতিহ্যে পরিণত হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী বারুণী ¯œান উৎসবকে ঘিরে রামগড় ও সাবরুম সীমান্তের ফেনী নদীর দুই পাহাড়ে বসেছে বাংলাদেশ-ভারতের নাগরিকদের মিলনমেলা। বিগত বছরগুলোতে উভয় দেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দর্শণার্থীর সম্মিলিত উপস্থিতিতে মহাসমাগম হলেও এবার তা ছিলনা। বিএসএফের কড়া নজড়দারীর কারণে কেউ কারো কাছে ঘেঁষতে পারেনি।
ঐতিহ্যবাহী এ বারুণী মেলা উপলক্ষে বহুকাল থেকেই এই দিনে দুই দেশের সীমান্ত অঘোষিতভাবে কিছু সময়ের জন্য উন্মুক্ত থাকার সুবাদে এপার বাংলার মানুষ ছুটে যায় ওপারের সাব্রুম মহকুমা শহরে, আবার ওপারের লোক এসে ঘুরে যায় রামগড়। তবে এবার তার কিছুই হয়নি। সকাল থেকে অধীর অপেক্ষায় থাকার পরও এবার সাব্রুম সীমান্ত খুলে দেয়া হয়নি।
খাগড়াছড়ি থেকে ঘুরতে যাওয়া ছোটন দে, জুয়েল অম্লান জানায়, ‘দীর্ঘ বছর ধরে বারুণী ¯œান ঘিরে বাংলাদেশ-ভারতের নাগরিকদের মিলনমেলা পরিনত হতো। কিন্তু এবার ভারতীয় অংশে সীমান্ত খুলে না দেয়ায় ওপার বাংলার মানুষ আসতে পারেনি আর আমরাও যেতে পরিনি।
অজয় শীল, সৌমেন মিত্র, চন্দন দে জানায়, ‘সকাল থেকে নদী পাড়ে অপেক্ষা করতে করতে ফেরত এসেছি। সবাই বলছে ভারতে রোহিঙ্গা ঢুকে যেতে পারে; এই ভয়ে সীমান্ত খুলে দেয়নি।
আবার অনেকেই বলছেন,গত বছরও তো রোহিঙ্গা সমস্যা ছিলো,কিন্তু এমটা হয়নি। এবার মূলত: ত্রিপুরাতে বিজিপি সরকার আসায় তারাই বাধা হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাবের কারণে।
এদিকে রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, এই বিষয়ে বুধবার রাতে বিএসএফের এক কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা আশংকা প্রকাশ করছেন সীমান্ত খুলে দিলে রোহিঙ্গারা ভারতে ঢুকে যাবে। তাই সরকারি নীতি মেনে বিএসএফ সীমান্তে কড়া অবস্থানে ছিল।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল আমিন মিয়া বলেন, ‘অনেক বছর ধরে বারুণী ¯œান ঘিরে রামড়ের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই দেশের মানুষের মিলনমেলা ঘটে। কিন্তু এবার কড়াকড়ি আরোপ করার কারণে ওপার বাংলার মানুষগুলো আসতে পারেনি।’
Valoi kreche BJP Sarkar
পথের কাটা হইলো রোহিঙ্গা