মৃত্যুর দুদিন পর করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ শনাক্ত হন বান্দরবানের বিটিসিএল (টিএন্ডটি) অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শাহাজাহান। অসুস্থ অবস্থায় তাকে সদর হাসপাতালে দু’বার নিলেও নমুনা নেয়া হয়নি শাহাজাহানের। ছয় জুন মৃত্যুর পর নেয়া নমুনা পরীক্ষায় আট জুন পজিটিভ আসে।
আর নমুনা সংগ্রহের ২২ দিন পর পরীক্ষায় ফলাফলে পজিটিভ এসেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) থানচি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মো: মাহফুজুল হক। অভিযোগ করে আক্রান্ত উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার বলেন, গতমাসের ২২ মে নমুনা দিয়েছিলাম। দীর্ঘ ২২ দিন পর পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ এসেছে। এটি চরম ভোগান্তির। নমুনা দেয়ার পর থেকেই আমি থানচিতে বাসায় আছি। দুশ্চিন্তা আর বন্দী জীবন কাটিয়েছি। তবে আমি সুস্থ আছি। কোনো ধরণের উপসর্গও নেই। পরিবারের কথায় নমুনা দিয়েছিলাম।
অন্যদেকে নমুনা সংগ্রহের ১৪ দিন পর পরীক্ষায় ফলাফলে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার আক্কাস উদ্দিন। আর নমুনা সংগ্রহের ১২ দিন পর পরীক্ষায় ফলাফলে পজিটিভ আসে পৌরসভার ছয় নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৌরভ দাস শেখরের। মহামারি করোনা পরিস্থিতির ফ্রন্টলাইনের এই সাহসী যোদ্ধা অভিযোগ করে বলেন, নমুনা দেয়ার দু’সপ্তাহ পর যদি পরীক্ষার ফলাফলে পজিটিভ আসে। তাহলে রোগী’সহ ঐ পরিবার দিনগুলো কতটা কষ্টে আর আতঙ্কে কাটিয়েছেন, সেটি শুধু ভূক্তভোগীরা জানেন। রিপোর্ট না আসায় পরিপূর্ণ চিকিৎসাও নিতে পারিনি। তার মাধ্যমে পরিবারের অন্যরাও সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়। করোনা পরিস্থিতিতে প্রথম থেকেই জনসাধারণের সেবায় মাঠে ছিলাম। চেষ্টা করেছি কর্মহীন মানুষদের মাঝে খাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বন্টন করার।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। বিশেষভাবে নমুনা পাঠিয়ে আলাদাভাবে তদবির করে ফ্রন্টলাইনের সাহসী যোদ্ধা পার্বত্য চট্টগ্রামের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, জেলা প্রশাসক মো: দাউদুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী’সহ ভিআইপি সাড়ির অনেকের। কিন্তু সাধারণত ১০/১২ দিনের আগে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাচ্ছেনা দাবী স্বাস্থ্য বিভাগের।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, দেশের করোনা শনাক্তের ২৬ দিন পর তিন এপ্রিল নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম শরু হয় বান্দরবান জেলায়। ইতিমধ্যে রোববার পর্যন্ত ১৯২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল এসেছে ১২৬২ জনের। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হচেছ ৮৪ জন। ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২ জন। রেড জোন ঘোষিত বান্দরবান পৌরসভা, সদর ও রুমা উপজেলা তিনটি এলাকায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দ্রæত বাড়ছে। সংকট কালীন মুহুর্তে মানব সেবায় মাঠে কাজ করা সাহসী যোদ্ধাদের প্রথমসাড়ির অনেকেই ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। আরও অনেকের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি স্বীকার করে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা: অংসুই প্রæ মারমা জানান, নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিদিনই কক্সবাজার পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। জনবল সংকটে নমুনার চাপ বেশি থাকায় পরীক্ষার ফলাফল সময় লাগছে। কখনো কখনো একটু বেশিই দেড়ি হচ্ছে। তবে কক্সবাজার পিসিআর ল্যাবে নতুন আরেকটি মেশিন যুক্ত হওয়ায় সময়টা কমে আসবে। আর বান্দরবান হাসপাতাল ও লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপনের চিন্তা ভাবনা চলছে। মেশিনগুলো বসলে সেগুলো দিয়েই করোনা নমুনাও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।