বান্দরবানে কঠিন চীবর দানোৎসবে পূণ্যার্থীদের ভিড়
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান ॥
বান্দরবানে পাহাড়ের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে কঠিন চীবরদান উৎসবে মেতেছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। শনিবার সকালে বান্দরবানের উজানীপাড়া রাজগুরু বিহারে তিন দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে সকালে বিহার কমিটির ব্যানারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত উজানীপাড়া, মধ্যমপাড়া, জাদীপাড়া’সহ আশপাশের এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষেরা শোভাযাত্রা বের করে। বোমাং সার্কেল চিফ রাজা উচপ্রু চৌধুরী নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিহারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নেয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষ।
পূণ্যের আশায় এ উৎসবে নারীরা মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় একদিনের মধ্যে তুলা থেকে বিশেষ কায়দায় বানানো চরকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সুতা তৈরি করে। আর নতুন সুতায় রং লাগিয়ে কাপড় বুনে সেলাই বিহীন চীবর (কাপড়) তৈরি করে গুরু ভান্তে ভিক্ষুদের পরিধানের জন্য। চব্বিশ ঘন্টায় তৈরি করা চীবর কাপড় উৎসবের পরেরদিন বিহারের ধর্মীয় গুরু ভিক্ষুদের মাঝে দানের কঠিন এ ব্রতের নামই হচ্ছে কঠিন চীবর দানোৎসব। প্রচলিত আছে গৌতম বুদ্ধের মহা পূণ্যবতী নারী বিশাখা দেবী এই কঠিন ব্রতী পালন করে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতব বুদ্ধকে চীবর দান করেছিলেন। তার-ই সূত্র ধরে প্রতিবছর বান্দরবান জেলায়ও পাহাড়ের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ব্যাপক আয়োজনে দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব ধর্মীয়ভাবে পালন করে আসছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়েরা নারীরা।
হ্লাচিং নু মারমা, লাবণী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, জীবনে একবারও যদি না ঘুমিয়ে রাত জেগে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে, নতুন সুতায় রং লাগিয়ে কাপড় বুনে চীবর তৈরি করে ভিক্ষুদের পরিধানের জন্য চীবর দান করতে পারি, তাহলে আগামী জনমে আমরা তারই পূণ্য লাভ করবো। কঠিন এ ব্রতের নাম হচ্ছে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
বাটিং মারমা জানান, আগামী ৩০ নভেম্বর পি- দানের মাধ্যমে বান্দরবানে দানোত্তম কঠিন চীবর দানো’সব শেষ হবে। শেষদিনে বান্দরবান কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের প্রধান ভিক্ষু (ভান্তের) নেতৃত্বে শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু খালি পায়ে লাইন ধরে পায়ে হেঁটে হেঁটে উজানীপাড়া-মধ্যমপাড়াসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকাগুলো প্রাতঃভ্রমণ করে ছোয়াইং (খাবার), চীবর কাপড়, মোমবাতি, নগদ টাকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করবেন।