
বান্দরবানে ‘জাল সনদ’ প্রদানকারী জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ এর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়েছে।
বান্দরবান চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুজাহিদুর রহমান আদালতে মেহেরুন নেছা নামে এক নারী গত রোববার মামলাটি দায়ের করেন। আদালত আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য কক্সবাজার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ (পিবিআই) ’কে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ’সহ ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- রুবি প্রু মারমা এবং ব্যুরো কর্মকর্তার স্ত্রী হ্লাসিং দাই। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি দেখানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু জাফর জানান, জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। মামলাটি তদন্তের জন্য কক্সবাজার পিবিআই’কে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে মামলার আসামি রুবিপ্রু মারমা, জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ এবং তার স্ত্রী হ্লাসিং দাই এর সঙ্গে বাদী সমাজসেবা কার্যালয়ের ট্রেড প্রশিক্ষক মেহেরুনেছার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে আসামিরা বাদীর মেয়ে মাসুমা আক্তারকে মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের আওতায় চাকরির জন্য আবেদন করতে বলেন। আবেদন করার পর আসামিরা মেয়েকে চাকরি দেয়ার নামে মঞ্জুর আহমেদ ও তার স্ত্রী হ্লাসিং দাই বাদীর কাছ থেকে টাকাও দাবি করেন। পরবর্তীতে ১নং আসামি রুবিপ্রু মারমা নিজের প্রয়োজনে ব্যুরো বাংলাদেশ নামক এনজিও থেকে কিছু টাকা লোন নেয়ার জন্য বাদীকে জামিনদার হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আসামি হ্লাসিং দাই জামিনদার হতে সুপারিশ করেন এবং তার স্বামী জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সরকারী পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ ঋণগ্রহীতা’কে (রুবি প্রু মারমা) ব্যুরো অফিসে চাকরি করে বলে দেখিয়ে যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক করে দিবেন। রুবি প্রুর এরূপ কথায় প্রতারিত হয়ে মামলার বাদী জামিনদার হওয়ার জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেন। ব্যুরো বাংলাদেশ, বান্দরবান শাখা অফিসের তৎকালীন শাখা ম্যানেজার আজাদ রুবিপ্রু মারমা কাগজপত্র সঠিক আছে বলায় মামলার বাদী জামিনদার হিসেবে স্বাক্ষর করেন।
মামলার বাদী মেহেরুন নেছা অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন সরকারি কর্মচারী। উল্লেখিত আসামি ৩ জন আমাকে বিভিন্নভাবে মিথ্যা বলে ঋণ গ্রহণকারীর ভূয়া প্রত্যয়ন দিয়ে ঋণ উত্তোলনে আমাকে জামিনদার বানিয়েছে। এটি আমার সাথে প্রতারণা করেছে। এছাড়াও ৩নং আসামি হ্লাসিং দাই এর কাছ থেকে আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজন ১ লাখ টাকা দার নিয়ে তাকে একটি স্বাক্ষর বিহীন ব্ল্যাংক চেক প্রদান করি। পরবর্তীতে তার টাকা ফেরত দেওয়ার পরেও সে আমার স্বাক্ষর নকল করে চেকে ১০ লাখ টাকার অংক বসিয়ে সোনালী ব্যাংক, বান্দরবান শাখা থেকে টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ‘চেক ডিজ অর্নার’ করে আমার নামে উল্টো মামলা দায়ের করে। তাই আমি হ্লাসিংদাই এর নামে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছি এবং ভূয়া প্রত্যয়ন দিয়ে ঋণ গ্রহণকারীর জামিনদার বানিয়ে আমার সাথে প্রতারণা করায় রুবি প্রু, মঞ্জুর আহমেদ ও তার স্ত্রী হ্লাসিংদাইসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে প্রতারণার মামলা দায়ের করেছি।
তবে এ বিষয়ে জানতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মঞ্জুর আহমেদ ২০০৭ সালে বান্দরবান জেলার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে অফিস সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সে বান্দরবান জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পায়। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে কর্মরত থাকার সুবাদে তিনি বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ভূয়া প্রত্যয়ন প্রদান, প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার নামে বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বেতন আত্মসাৎ এবং চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।