কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভূখন্ড থেকে বিছিন্ন কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত
দ্বীপ কুতুবদিয়া।সাগরের বুকে জেগে থাকা ২১৫,৮০ কিলোমিটারের সাগরকন্যা এই
কুতুবদিয়া দ্বীপ ১৯১৭ সালে মহেশখালী থানা থেকে আলাদা হয়ে প্রথমে কুতুবদিয়া
থানা এবং পরে ১৯৮৩ সালে কুতুবদিয়া উপজেলা হিসেবে পরিচয় পায়।জেলা শহর কক্সবাজার
থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করা এই দ্বী্পের মানুষ বিদ্যৎতের আলো দেখেছে
মাত্র বছর কয়েক।তাও অপার বিস্ময়ের চোখে।এই এলাকায় আলো জ্বালে বাতাস।সমুদ্রের
বুকে সংগ্রামী এই জীবনে প্রকৃতিই তৈরী করেছে আশীর্বাদ।
বায়ুবিদ্যৎ।বায়ুর গতিকে কাজে লাগিয়ে পাওয়া রূপান্তরিত শক্তিই হলো
বায়ুশক্তি।আকাশছোঁয়া ফ্যান সদৃশ বায়ুকল দ্বারা বাতাস বন্দি করে বায়ুশক্তিতে
তৈরী হয় বিদ্যৎ।বিশাল আকৃতির এই ফ্যানগুলোকে মূলত বলা হয় টারবাইন।বাতাস যখন
টারবাইনের ব্লেডের মধ্য দিয়ে যায় তখন বায়ুর গতিশক্তি ঐ পাখার মত ব্লেডগুলোকে
ঘুরায়।এগুলোর সাথে রোটর সংযুক্ত থাকে যা ব্লেড ঘূর্ণনের ফলে সক্রিয় হয়।আবার এই
রোটর জেনারেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে যার ঘূর্ণনের ফলে বিদ্যৎ উৎপাদন হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কয়লা ও তেলের ঘাটতি কমানোর জন্য এফএল স্মিথ
কোম্পানীবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়ু টারবাইন নির্মাণ করেন।১৯৭০সালে, মার্কিন
যুক্তরাস্ট্রের নাসা আধুনিক ও আকারে বড় আকৃতি বিশিষ্ট বায়ু টারবাইন নির্মাণের
জন্য গবেষণা চালু করে। ১৯৭৩ সালে বিশ্বে শক্তি সঙ্কটের কারনে সবার কাছে বায়ু
শক্তি নিয়ে আবার ক্রমবর্ধমান আগ্রহের সৃষ্টি হয় ও বিকাশ সাধন করে।১৯৮৭ সালে
চার্লস ফ্রান্সিস ব্রুস একটি বায়ু টারবাইন নির্মাণ করেন যা একটা ব্যাটারী
মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদনের জন্য জেনেরেটরের সাথে যুক্তছিল।১৮৯১ সালে ডেনিশ
পদার্থবিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবক পল লা চউর প্রথম ” বায়ু ঘূর্ণনযন্ত্র” পরীক্ষা
করেন। ১৯০০ সালের কাছাকাছি তিনি বায়ু-চালিত বিদ্যুত্ প্লান্ট বিকাশ শুরু
করেন।যদিও
বাংলাদেশে বায়ু শক্তি নিয়ে কাজের পরিমাণ খুব সামান্য।মূলত ১৯৮২ সালে একটি
প্রারম্ভিক গবেষণায় দেশের ৩০টি আবহাওয়া তথ্য স্টেশনের হিসেব অনুযায়ী কেবল
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকে প্রাপ্ত বায়ুগতিই ছিল বায়ু শক্তি উৎপাদনের
জন্য উপযুক্ত।দেশেরে প্রথম্ বায়ুবিদ্যৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয় ফেনীর সমুদ্র
উপকূলীয় সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্টে।২০০৫ সালে মুহুরী নদীর তীর ঘেষে ছয় একর
জমির উপর স্থাপিত এই প্রকল্পে উৎপাদন করা হয় প্রায় এক মেগাওয়াট বিদ্যৎ।
দেশের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম বায়ু বিদ্যৎ কেন্দ্র হিসেবে জেগে আছে সমুদ্রকন্যা
কুতুবদিয়ার বুকে বা্যুবিদ্যৎ কেন্দ্র।তাবলাচর গ্রামের বেড়িবাধের পাশে
বিস্তীর্ন এলাকায় বাতাস কে কাজে লাগিয়ে বিদ্যৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা তৈরী হয়।এর
আগে সৌর বিদ্যৎতের ব্যাবস্থা ছিল মোটামুটি।দ্বীপবাসীকে পুরোপুরি আলোর আয়তায়
আনতে এই প্রক্লপ হাতে নেয়া হলেও ৫০টি টারবাইনের ১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই
প্রকল্পটি শুরুতেই ধাক্কা খায় প্রকৃতির কাছেই।আইলার আঘাতে লন্ডভন্ড উপকূলে চরম
ক্ষতিগ্রস্থ এই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য।দ্বীপবাসীর কাছে
প্রকৃতি ভালোবাসা এবং ধ্বংস দুটোই নিয়ে এলো একসাথেই।বিশাল ক্ষতির ধাক্কা সামলে
গত ২০১৬ পুনরায় কাজ শুরু হয় এই প্রকল্পের।২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পুনরায়
চালু হয় এক মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যৎকেন্দ্রটি।সমুদ্রকন্যার বুকে
আলোর স্পর্শ।সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযুক্ত নয় এই প্রকল্পে
উৎপাদিত বিদ্যৎ।এখানে উৎপাদিত বিদ্যৎ সুবিধা পায় এই দ্বীপবাসীরাই কেবল,যদিও
সবার ঘরে পৌছায়নি এখনো আলো।চাহিদার তুলনায় উৎপাদন এখনো কম।কাজ চলছে এখনো।
নীল আকাশে মাথা উঁচিয়ে জেগে থাকা সুউচ্চ এই পাখা যেন দ্বীপবাসীর সুখের বারতা
ছেনে আনে।নিজ ভুমের নিজ আকাশের ছোঁয়ায় ছেঁয়ে আসা আলোর স্পর্শের সুখ স্পষ্ট
দ্বীপবাসীর চোখমুখেও।এই দেশ আমার।
অদ্ভুদ গর্বে জমে আসে চোখ………