রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টিতে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। রাজস্থলী উপজেলার এক কিলোমিটারের মধ্যে ১টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও ২টি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ ১৩ কিঃ মিঃ দূরে বাঙ্গালহালিয়ার সন্নিকটে গাইন্দ্যা উচ্চ বিদ্যায়টি অবস্থিত। এই উপজেলায় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার জন্য মাত্র ১টি কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রটিতে আসন সংকটের কারণে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়–য়া পরীক্ষার্থীদেরকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় যেতে হয়। ১৯৯৩ সালে স্থাপিত একমাত্র উপজাতি আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়টিও বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নেই অবস্থিত। ১৯৭৩ ইং সালে বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ৬ষ্ঠ শ্রেনী হইতে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৪২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
২০১৭ সালে বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে ৩৫২ জন এবং এসএসসি পরীক্ষায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়টি থেকে জেএসসিতে ৩২ জন এবং এসএসসিতে ২২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করবে। দূর দূরান্তে পরীক্ষা দিতে যেতে হবে ভেবে বরাবরের মতই শিক্ষকদের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে অভিভাবকরা।
ইউনিয়নটির প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী সহ তার অভিভাবকের যেতে হচ্ছে। এবং থাকা খাওয়া মিলিয়ে হাজার হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। যাতে করে প্রতিবারের পরীক্ষায় শুধু পরীক্ষার্থীদের কারণেই খরচ হয়ে যাচ্ছে ১১ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। ইউনিয়নটির পরীক্ষার্থীদের যেতে হচ্ছে আনুমানিক ১৫/২০ কিলোমিটার দূরে।
বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াই সুই খই মারমা বলেন, পরীক্ষা আসলেই স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা বেড়ে যায়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন ১জন পরীক্ষার্থীর গাড়িভাড়া ও অভিভাবকের গাড়িভাড়া মিলে মাথাপিছু দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা খরচ হয়। ১২-১৪ দিন পরীক্ষা চললে ব্যায় ভারটি অভিভাবকদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়।
৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ঞোমং মারমা বলেন শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ থাকায় বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তূলনামূলক বেশি, পাশাপাশি উপজাতীয় উচ্চ বিদ্যায়টিও রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে আমরা। বাঙ্গালহালিয়া ও বান্দরবান প্রধান সড়কের পাশে মাত্র ৫০ গজের মধ্যেই বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বাঙ্গালহালিয়া কলেজ, ও বাঙ্গালহালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। আধা কিঃমিঃ দূরে রয়েছে উপজাতীয় বিদ্যায়টি। সার্বিক নিরাপত্তায় ১কিঃমিঃ এর মধ্য রয়েছে একটি পুলিশ ফাড়ি। রয়েছে একটি সেনাক্যাম্প। এখানে জেএসসি এবং এসএসসি কেন্দ্র স্থাপন করা হলে প্রতিবছর অভিভাবকদের আর্থিক ব্যয় কমবে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা।
রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উথিনসিন মারমা বলেন, আসলে বাঙ্গালহালিয়ায় ২টি উচ্চ বিদ্যালয় কিন্তু পরীক্ষার সময় কঠিন সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকদের। এটি একটি জনবহূল এলাকা। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীও অনেক বেশি। বাঙ্গালহালিয়ায় ১টি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন। বিষয়টি আগামী মাসিক সমন্বয় সভায় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট বিষয়টি নিয়ে আলাপ করবেন বলে জানান তিনি।
বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখ্যাইমং চৌধুুরী বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ইং তারিখে চট্রগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত বছর সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালযের মাঠে তাবু টাঙ্গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে পরিক্ষার্থীদেরকে। অত্র বিদ্যালয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও উন্মুক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। গত ২০০৫ ও ২০১৪ সাল থেকেই এ যাবত সুষ্ঠুুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও ডাকবাংলা অনাথ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা উ: খেমাচারা মহাথের বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার হিসেবে শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের দরবারে পরিচিত। বাঙ্গালহালিয়া বাসীর কেন্দ্র স্থাপনের দাবি অযৌক্তিক নয়। তিনিও সরকারের নিকট জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩৩৩ নং মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু এমপির সাথে মুঠোফোনে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিখিত ভাবে আমাকে জানিয়েছেন। রাজস্থলী উপজেলাটি আমার নির্বাচনি এলাকা। বাঙ্গালহালিয়া জনবহূল এলাকা হিসেবে আমার জানামতে বিদ্যালটিতে বর্তমানে ১৫০০জন মত শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে। শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা দিতে যেতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তি রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। এ কারণে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত ও বিভিন্ন কারনে সাধারন জনগনকে আর্থিক ব্যায়সহ অনেক অসুবিধার সম্মূখীন হতে হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করে ২০১৭ সালে জেএসসি ও এএসসি পরীক্ষা, ২০১৮ সালে নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাদপ্তরে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে। সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিতে কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট ডিও লেটার দিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।