
মেরামতের মাত্র ছয় মাসের মাথায় এবার বন্যায় মাঈনী নদীর পানির ¯্রােতে ভেষে গেছে দীঘিনালার একমাত্র ঝুলন্ত সেতু। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছে নদীর দু’পারের বাসিন্দারা। বিশেষ করে হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাচিনসনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নদী পারাপারে বেশি বেকায়দায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। তবে গুরুত্বপূর্ন এস্থানে জরুরী ভিত্তিতে ফুটব্রিজ করার দাবী স্থানীয় লোকজনসহ জনপ্রতিনিধিদের।
উপজেলার একমাত্র এ ঝুলন্ত সেতুটি ছিল বোয়ালখালি পুরাতন বাজার এলাকা এবং হাচিনসনপুর এলাকার কয়েক গ্রামের সড়ক যোগাযোগে মাঈনী নদী পারাপারের একমাত্র ব্যাবস্থা। তা ছাড়া হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাচিনসনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক’শ শিক্ষার্থীর যাতায়াত পথ।
জানা যায়, গত বছরের ২৫ এপ্রিল ঘূর্নিঝড়ে ঝুলন্ত সেতুটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। তখন সেতুটি কাঁত হয়ে কিছু অংশ পড়ে গিয়েছিল। সেসময় বিদ্যালয়গামি অনেক শিক্ষার্থী নৌকায় পারাপার হলেও আবার অনেকে ঝূঁকি নিয়ে ঝুলে ঝুলে ভাঙ্গা সেতু দিয়েই পারাপার হতো। এভাবে কয়েকমাস কেটে যাওয়ার পর এলাকাবাসি বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ বিবেচনায় উপজেলা প্রশাসন প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যায়ে সেতুটি মেরামত করে। গত বছরের ২২নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে সেতুটি খোলে দেওয়া হয়। তাতে শিক্ষার্থীরাই ছিল বেশি উৎফুল্ল। কিন্তু এবারের বন্যায় সেতুটির কোন চিহ্ন পর্যন্ত রেখে যায়নি খর¯্রােতা মাঈনী নদীর পাহাড়ি ঢলের পানিতে। দু’পাশের লোহার খূঁটিগুলোও ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। একে ভরা বর্ষা, আবার ¯্রােতবাহী ভরা নদীতে নৌকায় পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে ঝূঁকি মনে করছে শিশু শিক্ষার্থীরা।
হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শামশুন নাহার শ্যামা জানায়, ঝুলন্ত সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর সে একদিনও বিদ্যালয়ে যায়নি। একদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে নদীর পানির অবস্থা দেখে ভয়ে নৌকায় উঠতে সাহষ না পেয়ে ফিরে গেছে বাড়িতে।
এ অবস্থায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে দাবী করে হাচনিসনপুর উচ্চ বিদ্যালয়েল প্রধান শিক্ষক দেবপ্রিয় বড়–য়া জানান, বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেও অনেক শিক্ষার্থীরা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থেকে আবার বাড়ি ফিড়ে যায়। বিশেষ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণী ও ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ভয়ে নৌকায় পার হচ্ছেনা।
মাঈনী নদীর দুই পাশে দুই ইউনিয়ন। বোয়াখালী ও কবাখালি। আর ঝুলন্ত সেতু এলাকায় নদীর এপারে বোয়ালখালি পুরাতন বাজার অপর পাশে হাচিনসনপুর বাজার। পুরাতন বাজারে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হাচিনসনপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন মাঈনী নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। এছাড়াও ৬টি গ্রামের প্রায় ২ শতাধীক লোকজন প্রতিদিন কেনাকাটাসহ ও প্রাসঙ্গিক কাজে এ নদী পারাপার হতে হয়।
প্রধান শিক্ষক দেবপ্রিয় বড়–য়া আরো জানান, সে বিদ্যালয়ে প্রায় ১হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫শতাধিক শিক্ষার্থী এপার থেকে মাঈনী নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। আর্থীক সমস্যার কারণে দরিদ্র পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীর নৌকা পারাপারের টাকা যোগে হিমশিম খেতে হয়।
জামতলি এলাকার শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. আল আমিন জানান, সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারছেননা তাঁর ছোট ভাই ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মো. ইউছুফকে। নদীর পার থেকে বিদ্যালয়েল দুরত্ব মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ গজ। কিন্তু বিদ্যালয়ে যাওয়ার বিকল্প সড়ক পথ মাত্র একটি। সেটিতে উপজেলা সদর হয়ে কবাখালি বাজার দিয়ে কমপক্ষে ৬ কি.মি. ঘুরে যেতে হয়। এত পথ ঘুরে বিদ্যালয়ে পাঠানো সম্ভব নয়।
বোয়ালখালি পুরাতন বাজার এলাকার ইউপি সদস্য মো. দিল মোহাম্মদ দিলু জানান, এপথ দিয়ে মাঈনী নদী পার হয়ে ৬টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত। আর ঝূলন্ত সেতুটি অনেক বছর আগের পুরনো ছিল। এ সেতুটি অনেকবার ভেঙ্গে গেলেও সংস্কার বা মেরামতের পর এ সেতুটি দিয়েই ছিল যাতায়াত। কিন্তু এবারের বন্যায় সেতুটি সম্পূর্ন ছিন্নভিন্ন করে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আর মেরামতেরও কোন সুযোগ থাকলোনা। তবে জনবহুল এলাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব বিবেচনায় এখানে একটি ফুটব্রিজ করা জরুরী।
একই কথা জানিয়ে বোয়াখালি (সদর) ইউপি চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা ওরফে কালাধন বলেন, ‘জনবহুল এলাকা হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিল ঝুলন্ত সেতুটি। তবে এখন এখানে একটি ফুটব্রিজ করাই জরুরী হয়ে পরেছে।’
হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজি মো. জসিম উদ্দিন জানান, এলাকাবাসির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পারাপারের জন্য সেতুটি ছিল গুরুত্বপূর্ন। সে কারণেই গত বছর ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর সেতুটি মেরামতে তিনি নিজে আর্থীকভাবে সহযোগীতা করেছেন। এখন মেরামতের সুযোগও না থাকায় ভিষন চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষার্থীদের পারাপার নিয়ে। জসিম উদ্দিন আরো জানান, শিঘ্রই বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরাকে অবহিত করে একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানানো হবে।