শাহরিয়ার আলাউদ্দিন,বান্দরবান : বান্দরবান সদর হাসপাতালে করোনা মোকাবেলা ইউনিটে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি এবং খাবারের সংকটে ভূগছে কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগিরা। আইসোলেশন রোগীরাও পর্যাপ্ত খাওয়ার পানি ও খাবার সামগ্রী না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এটি সীমাবদ্ধতা নাকি সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতা? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ভূক্তভোগীদের স্বজনেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
অন্যদিকে করোনা ইউনিটে নার্সিং ইনস্টিটিউট ভবনের মধ্যে সনাক্ত রোগী এবং আইসোলেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে একসঙ্গে অবস্থান করছে মানুষেরা। রোগী এবং সুস্থ মানুষেরা পাশাপাশি অবস্থান করাটা কতটা স্বাস্থ্য সম্মত এ নিয়েও শঙ্কিত কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকজন ও তার স্বজনরা।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের একি কর্মীরা ভবনের উপরে-নীচে সবখানে স্বজনদের দেয়ার খাবার, পানিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগও পাওয়া গেছে। জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাবার এবং খাওয়ার পানির সংকট করোনা ঝুকি আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে দাবী উভয়ের।
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগী নাজিম উদ্দিন এবং তার স্বজন জেসমিন সুরভীসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে সুস্থ্য মানুষ থাকার কোনো পরিবেশ নেই। লাশ কাটা ঘরের পাশে কোয়ারেন্টাইন কক্ষ হওয়া ভয়ে রোগী পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। ফ্লোরে একিরুমে কয়েকজনকে রাখা হচ্ছে। খাবার এবং খাবারের পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। রোগী এবং কোয়ারেন্টাইন থাকা মানুষের স্বজনদের বাড়ি থেকে খাদ্য এবং খাবার পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। আবার স্বাস্থ্য বিভাগের একি কর্মীরা উপরে-নীচে বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। খাদ্য ও পানি নিয়ে স্বজনরাও নিয়মিত করোনা ইউনিটে যাচ্ছে বাধ্য হয়ে। তাহলে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং করোনা সংক্রমনের ঝুকি কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে? উল্টো সুস্থ মানুষকে মৃত্যৃর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
করোনা ইউনিটের মেডিক্যাল অফিসার ডা: প্রত্যুষ পাল ত্রিপুরা বলেন, করোনা ইউনিটে আইসোলেশনে আছেন সনাক্ত রোগী ২ জন। উপসর্গ থাকা নমুনা সংগ্রহকারী ৪ জন রোগী। জেলায় করোনা প্রজেটিভ ১৯ জন। সুস্থ দশ জন। এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৯ জন লোকজন। তবে তারা কেউই রোগী নয়। ঝুকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন দুটি পৃথক ব্যবস্থা। আলাদা দুটি বিষয়। কিন্তু ইউনিটের মধ্যে সেটি সম্ভব হচ্ছেনা, এখানে একি স্বাস্থ্য কর্মীরা সব দেখাশোনা করেন। সে ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন থাকা সুস্থ মানুষগুলোর করোনা সংক্রমনের ঝুকির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটায় স্বাভাবিক।
সিভিল সার্জন ডা: অংসুই প্রু মারমা বলেন, সনাক্ত রোগী এবং উপসর্গ থাকা নমুনা সংগ্রহকারীদের জন্য ১০০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রয়েছে হাসপাতালের পাশ্ববর্তী নার্সিং ইনস্টিটিউটে খোলা করোনা ইউনিটে। সদর হাসপাতালে ৪৫টি অক্সিজেন, ৫টি রিব্রেদিং মেশিন রয়েছে। তবে কোনো ভেন্টিলেটর নেই হাসপাতালে। স্বাস্থ্য সরঞ্জামের সংকট’তো রয়েছেই। কোয়ারেন্টাইনদের অভিযোগের প্রশ্নে সিভিল সার্জন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের কোনো ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। কোয়ারেন্টিন আলাদা জায়গায় করার নিয়ম। যেহেতু তারা রোগী নয়, তাদের আইসোলেশন এবং সনাক্ত রোগীদের পাশ্ববর্তী জায়গায় রাখাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাস্থ্য কর্মীদের নানা সীমাবদ্ধ থাকায় একই স্বাস্থ্য কর্মীই দুটি স্থানে দায়িত্ব পালন করায় ঝুকিটা আরও বেড়ে যায়। ভর্তি রোগীদের খাদ্য-পানীয়জলের ব্যবস্থা রয়েছে। তাও রোগী ভর্তির পরদিন থেকে। কোয়ারেন্টাইনদের জন্য কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক সেটিও বোঝতে হবে। কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনের। আবাসিক হোটেল কিংবা কোনো ডরমেটরীতেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা যায়। ইতিমধ্যে ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। সেটিই স্বাস্থ্য সম্মত এবং নিরাপদ ঝুকিমুক্ত।
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: শামীম হোসেন বলেন, করোনা স্বাস্থ্য সেবায় রোগী এবং কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকজনের খাবার, খাওয়ার পানির সংকট তৈরি হওয়া দু:খজনক। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের বলা হয়েছে ব্যবস্থা নিতে। খরচের বিল জমা দিলে প্রশাসন অর্থের ব্যবস্থা করবেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনে খাদ্য সরঞ্জাম, নগদ অর্থ মজুদ রয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও স্বাস্থ্য বিভাগকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছেন।